বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

জাপানে ফেরত গেল ইবরাহিমসহ সাবেক ৪ এমপির বিলাসবহুল গাড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:৪১ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমসহ সাবেক চার সাবেক সংসদ সদস্যের বিলাসবহুল প্রাডো ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি জাপানে ফেরত পাঠিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। নিলাম ডেকেও বিক্রি না হওয়ায় গাড়িগুলো সরবরাহকারী দেশ জাপানে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এ তথ্য জানান চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম শাখার সহকারী কমিশনার মো. সাকিব হোসেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গত বছরের ১৭ জুলাই শুল্কমুক্ত সুবিধা ব্যবহার করে মোংলা বন্দরে জাপান থেকে মোট চারটি প্রাডো ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি আনা হয়। গাড়িগুলোর একটি মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিমের। অপর তিনটি গাড়ি নীলফামারী-৪ আসনের সাবেক এমপি সিদ্দিকুল আলম, দিনাজপুর-১ আসনের মুহাম্মদ জাকারিয়া ও সংরক্ষিত আসনের নাসিমা জামান ববি আমদানি করেন।


বিজ্ঞাপন


ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরদিনই রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেন। এরপর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডও (এনবিআর) শুল্কমুক্ত সুবিধাও বাতিল করে। বিলাসবহুল এসব গাড়ির শুল্ক প্রকৃত দামের অন্তত তিন থেকে চার গুণ বেশি। ফলে চার সাবেক এমপিসহ অন্য কেউ গাড়িগুলো আর নিতে চাননি।

এদিকে নিয়মানুযায়ী মোংলা কাস্টম হাউস গত বছরের ২৫ নভেম্বর গাড়িগুলো নিলামে তুললেও বেশি দামের কারণে ক্রেতাদের কাছ থেকে সাড়া পায়নি। ফলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গাড়িগুলো জাপানে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এরপরই গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মোংলা বন্দর থেকে জেনারেল ইবরাহিম ও সাবেক তিন এমপির প্রাডো ল্যান্ড ক্রুজার জাপানে ফেরত পাঠানো হয়।

এদিকে নিলামে অংশগ্রহণকারী বিডাররা শর্ত পূরণ না করায় সাবেক এমপির ২৪টি বিলাসবহুল গাড়িসহ ৪৪টি গাড়ি নিলামে বিক্রির নিলাম কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে। প্রথম নিলামে অংশ নিয়ে গাড়ি কিনতে হলে রিজার্ভ ভ্যালুর ৬০ শতাংশ বা তার বেশি সর্বোচ্চ দরদাতা হতে হবে, এমন শর্ত আরোপ করা হয়েছিল।

এ হিসেবে প্রতিটি গাড়ি কিনতে ন্যূনতম ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা দর দিতে হবে। ২৫ শতাংশ করসহ এই গাড়ির সর্বনিম্ন দাম পড়বে ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আমদানি ব্যয় ও শুল্ক মিলিয়ে গাড়িগুলোর সংরক্ষিত দর নির্ধারণ করা হয়েছিল ৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।


বিজ্ঞাপন


অথচ গত ১৭ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টায় চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তাদের অকশন শেডে নিলাম বাক্স খুলে অংশগ্রহণকারীদের প্রস্তাবিত দর যাচাই-বাছাই করে দেখতে পায়, ৪৪টি গাড়ির মধ্যে রিজার্ভ ভ্যালুর ৬০ শতাংশ কাভার করেছে এমন গাড়ি মাত্র ১৪ থেকে ১৫টি।

এমপিদের নয়টি গাড়ি নিলামে কেনার জন্য কেউ আগ্রহই দেখাননি। বাকি ১৫টি গাড়ি কেনার আগ্রহ জানিয়ে যারা নিলামে অংশ নেন তাদের প্রস্তাবিত দর রিজার্ভ ভ্যালুর ৬০ শতাংশের শর্ত পূরণ করেনি। ফলে নিলাম কার্যক্রম আপাতত ঝুলে গেছে। সব প্রক্রিয়া শেষ করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আরও সময় লাগবে।

কাস্টমস সূত্র জানায়, গত ২৭ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে সাবেক ২৪ এমপির ২৪টিসহ মোট ৪৪টি গাড়ি নিলামে বিক্রির ঘোষণা দেয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনলাইনে এবং ঢাকা-চট্টগ্রামে সরাসরি বাক্সে নিলামের প্রস্তাবিত দরপত্র গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গাড়িগুলো নিলামে অংশগ্রহণকারীদের জন্য সরাসরি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। এরপর সোমবার নিলামে অংশগ্রহণকারীদের প্রস্তাবিত দর উন্মুক্ত করা হয়।

নিলামে তোলা ৪৪টি গাড়ির মধ্যে ৩৫টি গাড়ির বিপরীতে ১৪৩টি আবেদন ও দরপ্রস্তাব জমা পড়ে। এর মধ্যে সাবেক এমপিদের ২৪টি গাড়ির মধ্যে নয়টির জন্য কোনো আবেদন ও দরপ্রস্তাব জমা পড়েনি। বাকি ৩৫টি গাড়ির মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য এস এম কামাল হোসেনের আমদানি করা গাড়িটির দর উঠেছে তিন কোটি ১০ লাখ টাকা। এটিই সব গাড়ির মধ্যে সর্বোচ্চ দর। শুল্কমুক্ত সুবিধার বাইরে আমদানি করা ২০টি গাড়ির দর উঠেছে দুই লাখ থেকে এক কোটি ৩৭ লাখ টাকার মধ্যে।

এমআইকে/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর