বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

আজও ‘কঙ্কালসার’ আওয়ামী লীগের তিন কার্যালয়

কাজী রফিক
প্রকাশিত: ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৪০ এএম

শেয়ার করুন:

আজও ‘কঙ্কালসার’ আওয়ামী লীগের তিন কার্যালয়

🔹নেতাকর্মীদের দেখা নেই

🔹কার্যালয়ের সামনে নেই পোস্টার-ব্যানার


বিজ্ঞাপন


টানা সাড়ে ১৫ বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে ঢাকার রাস্তায় লাখ-লাখ মানুষের ঢল নামে। জনতার বিজয় মিছিল থেকে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ ঢাকায় দলটির অনেক কার্যালয়ে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। গুলিস্থানের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ও ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। নেতাকর্মীবিহীন এসব পোড়া ভবন এখনো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ধ্বংসস্তুপের ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, যা এখন স্মৃতিচিহ্ন।

আরও পড়ুন

বিদেশে দেখা মিলছে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের!

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় রাজধানীর গুলিস্থানের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের ২৩ নম্বর ভবন। দলীয় প্রতীক নৌকাকে সামনে রেখে গড়ে তোলা হয়েছিল কার্যালয়টি৷ ভবনের একেক অংশে ছিল আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। ৫ আগস্ট ভবনটিতে ভাঙচুর চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় আগুনও ধরিতে দেয়া হয় ভবনটিতে৷

ঘটনার প্রায় আড়াই মাস পর গিয়ে দেখা যায়, ধ্বংসস্তুপের মতোই দাঁড়িয়ে আছে কার্যালয়টি। ভবনের সামনে রাখা আছে বেশ কয়েকটি চৌকি। নেতাকর্মীদের দেখা নেই। এমনকি গত ১৫ বছর যে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ব্যানার-পোস্টারে ঠাসা ছিল, এখন তা নেই। পুরো সড়ক ঘুরেও নৌকা সমর্থিতদের একটি পোস্টারও দেখা যায়নি।


বিজ্ঞাপন


dhaka-4আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের বিপরীতে চায়ের দোকান বসিয়েছেন মো. সুমন। ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাউকে কার্যালয়মুখী হতে দেখা যায় না। তিনি বলেন, 'কাউরে তো আসতে দেখি না। আবার অনেকে হয়ত আসে, কিন্তু পরিচয় দেয় না।'

আওয়ামী লীগের কার্যালয় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নিচতলায় থাকা হোটেল ব্যবসায়। ২২ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের নিচতলার খাবার দোকানে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে নেতাকর্মী না আসায় তাদের ব্যবসায় ধ্বস নেমেছে। আবার আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীদের কাছে অনেক টাকা বকেয়া থাকায় সেই টাকাও পাননি বলে জানিয়েছেন দোকানি।

আরও পড়ুন

আওয়ামী লীগের তৃণমূলে আতঙ্ক, পাচ্ছে না কোনো নির্দেশনাও

আওয়ামী লীগের আরেক অফিস ধানমন্ডি কার্যালয়। ধানমন্ডি ৩/এ সড়কের ৫১ নং বাড়িটি দলটির সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়। দলটির কাছে এ কার্যালয়ের গুরুত্ব অনেক। কার্যালয়টিতে লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরা আওয়ামী লীগ সভাপতি নিজে দেখতেন বলেও প্রচলিত আছে৷

৫ আগস্ট সেই কার্যালয়ের এই ভবনেও ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়৷ আসবাবপত্র ভাঙচুরের পর পুরো কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়। ঘটনার আড়াই মাস পর গিয়ে দেখা যায়, কার্যালয়ের পুরনো ভবনের প্রবেশমুখ কাঠ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া। কার্যালয়ের প্রবেশমুখে থাকা প্লাস্টিকের টিনের ছাউনি পুড়ে গলে পড়ে আছে। ভেতরের দিকে তাকাতে দেখা যায়, দফতরকক্ষের ধ্বংসস্তুপ। যেখানে আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ও উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান বসতেন। দাপ্তরিক সব কাজ হতো ওই কক্ষ থেকেই। একই ভবনে আওয়ামী লীগের জাগরণ ম্যাগাজিনের কার্যালয় ছিল।

dhaka-1ধানমণ্ডি ৩/এ সড়কে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে কার্যালয়ের নতুন ভবন। ভবনের নিচতলায় ছিল গ্রন্থনা ও প্রকাশনার একটি দোকান। যেখান থেকে আওয়ামী লীগের প্রকাশিত বিভিন্ন বই বিক্রি করা হতো। আগুনে ছাই হয়ে গেছে পুরো দোকানটি।

একই ভবনের উপরে ছিল আওয়ামী লীগের পাবলিসিটি সেল এবং দলটির গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) কার্যালয়। যা ভাঙচুর ও অগ্নিকাণ্ডে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে৷ এই ভবনের প্রবেশমুখে বর্তমানে কোনো দরজা নেই। তবে ভেতরে কাউকে প্রবেশ করতেও দেখা যায় না।

আরও পড়ুন

ক্ষমতার ছোঁয়ায় তাদের সম্পদের পাহাড়

স্থানীয় কয়েকজন হকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্রলীগের কিছু সাবেক নেতা মাঝেমধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে আসেন। তারা ভ্রাম্যমাণ চায়ের দোকানে চা খান। আগে কার্যালয়ের সামনে আড্ডা দিলেও, এখন আসছেন না।

রাজধানীতে আওয়ামী লীগের তৃতীয় বৃহত্তম ও গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয় ছিল ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়। তেজগাঁওয়ের শিল্পাঞ্চলের মাঝে নান্দনিকভাবে গড়ে তোলা হয়েছিল কার্যালয়টি। ক্ষমতায় থাকাকালে দলের অনেক বড় বড় সিদ্ধান্তও এসেছে ওই কার্যালয় থেকে।

dhaka-2আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পদচারণা, আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতাদের দামি গাড়ি বহরে সরব থাকা কার্যালয়টি এখন অকেজো। কার্যালয়ের মূল প্রবেশমুখ বন্ধ। কার্যালয়ের সামনে যেখানে সালমান এফ রহমানের কোটি টাকার গাড়ি থাকতে দেখা যেত, সেখানে এখন দাঁড়িয়ে আছে রেন্ট-এ-কারের গাড়ি। 

সেখানে গিয়ে কার্যালয়ের ধ্বংসাবশেষ স্পষ্ট চোখে পড়ে। ভাঙচুরের পর দেওয়া আগুনে পুড়ে গেছে লাখ লাখ টাকার ইন্টোরিয়র।

আরও পড়ুন

একের পর এক মামলা, ‘চিন্তিত নয়’ আওয়ামী লীগ নেতারা

ভবনটির নিচতলার একটি অংশ ব্যবহার করত ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ, আরেকটি অংশ ব্যবহার করত ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ। আর দ্বিতীয় তলায় ছিল অডিটোরিয়াম। সেখানে আওয়ামী লীগের দিবসভিত্তিক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হতো। এসব সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে থাকতেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ ছাড়া সর্বশেষ নির্বাচনের সময় এই কার্যালয়ে নিয়মিত মিডিয়া ব্রিফিং করতেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

dhaka-5সরেজমিন দেখা যায়, আওয়ামী লীগের এই কার্যালয়টিতে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে। বর্তমানে স্টিলের অবকাঠামটি কঙ্কালসার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর বাইরের গেট তালাবদ্ধ রয়েছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৪ আগস্টের পর এ কার্যালয়ের আশপাশেও আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীদের দেখা যায়নি।

কারই/এমআর

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর