মাত্র দুই মাস আগেও যাদের দাপটে সবাই ছিলেন তটস্থ- আওয়ামী লীগের এমন নেতারা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। দেশে যারা আছেন তাদের বেশির ভাগ গা ঢাকা দিয়েছেন, আবার অনেকে গ্রেফতারও হয়েছেন। তবে টানা চার মেয়াদ ধরে ক্ষমতা ধরে রাখা দলটির প্রভাবশালী নেতাদের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর যারা দেশ ছেড়ে গেছেন তাদের প্রায় সবাই অবৈধ পথে দেশ ছেড়েছেন।
শুরুতে আওয়ামী লীগ নেতাদের কারা কোথায় আছেন সে ব্যাপারে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার প্রায় দুই মাস পরে এসে অনেকের তথ্য মিলছে। বিদেশে যারা পালিয়ে গেছেন তাদের দেখা মিলছে নানা স্থানে।
বিজ্ঞাপন
তবে এসব নেতা বিদেশের মাটিতেও নিজের পুরোপুরি নিরাপদ বোধ করছেন না। এজন্য অনেকটা আড়ালে থাকার চেষ্টা করছেন। দেশ ছাড়া বেশির ভাগ নেতাই প্রতিবেশী ভারতের কলকাতায় অবস্থান করছেন। সেখানে বাংলাদেশিদের ব্যাপক আনাগোনা থাকায় তারা গা ঢাকা দিয়েই চলার চেষ্টা করছেন। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোও প্রবাসী অধ্যুষিত হওয়ায় নিরাপত্তা বোধ করছেন না আওয়ামী লীগ নেতারা।
৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ভারতে পালিয়ে যান টানা চারবারের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তাকে কোথায় কীভাবে রাখা হয়েছে সেই তথ্য ভারত সরকার প্রকাশ করেনি। তবে সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস গত ২৮ সেপ্টেম্বর তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, শেখ হাসিনাকে তার দলবলের সঙ্গে দিল্লির অন্যতম অভিজাত পার্ক, লোদি গার্ডেনে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেখ হাসিনা দিল্লিতে বিশ্ব সংস্থার হয়ে কর্মরত সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সঙ্গেই ভারতীয় 'সেফ হাউজে' অবস্থান করছেন।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগের সময় সঙ্গে নেন তার বোন শেখ রেহানাকে। তিনিও বর্তমানে দিল্লিতে আছেন বলেই জানা গেছে। যদিও তিনি যুক্তরাজ্যের নাগরিক। চাইলে সেখানে চলে যেতে পারেন। তবে বোনকে একা রেখে তিনি আপাতত যাচ্ছেন না বলেই জানা গেছে।
আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনার পর সবচেয়ে আলোচিত নেতা দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ৫ আগস্টের পর জানা যায়, তিনি দেশে আছেন। হঠাৎ শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করবেন, বিষয়টি তিনিও জানতেন না। ফলে দেশ ছাড়তে পারেননি। সাম্প্রতিক তথ্য সূত্র বলছে, ওবায়দুল কাদের বর্তমানে ভারতের কলকাতায় অবস্থান করছেন।
তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা আসাদুজ্জামান খান কামাল রয়েছেন কলকাতায়। এক ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, সাবেক এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কলকাতার ইকো পার্কে কয়েকজনের সঙ্গে বসে আড্ডা দিচ্ছেন৷ তার সঙ্গে দেখা মিলেছে আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, তার স্ত্রী এবং বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অপু উকিলকে। প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ক্যামেরায় ধরা পড়েছেন ঢাকা-৭ আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে সোলায়মান সেলিম।
গত শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাতটায় তাদের দেখা যায় কলকাতার এই পার্কে৷ তবে পার্কটিতে তাদের অবস্থান দেখার পর বাংলাদেশিরা সেখানে জড়ো হয়। এ সময় দ্রুত সটকে পড়েন তারা৷
এর আগে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরপরই দলের প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে প্রথম নিজের অবস্থান জানান দেন শামীম ওসমান। নারায়ণগঞ্জের এই প্রভাবশালী নেতাকে দেখা যায় এক ভিডিও ফুটেজে৷ তার অবস্থান শনাক্ত হয় দিল্লির নিজামউদ্দিন আউলিয়ার দরবারে।
এদিকে গত মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) আরব আমিরাতের আজমান সিটি সেন্টারে শামীম ওসমানকে ঘুরতে দেখেন বাংলাদেশি প্রবাসীরা। এ সময় তার সঙ্গে বোরকা পরা দুজন নারীকেও দেখা যায়। তাদের তিনজনের হাতেই লাল সুতা বাঁধা ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, সম্প্রতি ভারতে নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার দরগায় এই সুতা বেঁধেছেন তারা।
এদিকে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম অবস্থান করছেন ভারতের কলকাতায়। শহরের একটি পাঁচতারকা হোটেলে তাদের অবস্থান বলে জানা গেছে। তবে তারা প্রকাশ্যে আসছেন না।
একই হোটেলে আওয়ামী লীগের আরও বেশ কয়েকজন নেতা অবস্থান করছেন বলেও জানা গেছে।
আরও পড়ুন
কলকাতায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আ.লীগ নেতারা!
যুক্তরাষ্ট্রে ২ লাখ ডলারে লবিস্ট নিয়োগ দিলেন সজীব ওয়াজেদ জয়!
কুমিল্লার সাবেক সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন বাহার এবং তার কন্যা কুমিল্লা সিটির সাবেক মেয়র তাহসিন বাহার সূচনা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন বলে খবর বেরিয়েছে। তারাও এখন কলকাতা এক রাজনৈতিক নেতার আশ্রয়ে আছেন বলে জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, দেশত্যাগ করা নেতাদের বেশির ভাগই ভারত-বাংলাদেশ স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিবেশী দেশটিতে পাড়ি জমিয়েছেন৷
সূত্র আরও জানিয়েছে, ৫ আগস্টের পর দেশ ছাড়া নেতাদের অনেকেই ভারতের কলকাতায় বাড়ি ভাড়া করে অবস্থান করছেন। ডুপ্লেক্স বাড়ি ভাড়া করে সেখানে নিজেদের কর্মীদের নিয়ে অবস্থান করছেন একজন সাবেক সংসদ সদস্য- এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
তবে অবস্থা বেগতিক স্থানীয় পর্যায়ের অনেক নেতার। কলকাতার ছোট-খাটো হোটেলে অবস্থান করার তথ্য পাওয়া গেছে মফস্বলের কয়েকজন নেতার। ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের এসব নেতা কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। নিজেদেরও তেমন আর্থিক সচ্ছলতা নেই। ফলে বেশ কষ্টেই সময় কাটছে তাদের।
আবার ঢাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ের নেতারাও কলকাতায় আছেন বলেই জানা গেছে। তবে হোটেলের লবির বাইরে তারা খুব একটা আসেন না।
কারই/জেবি