• আরও প্রকট হলো দেবর-ভাবির দ্বন্দ্ব
• কোণঠাসা হয়ে পড়লেন রওশনপন্থীরাও
বিজ্ঞাপন
• দলে নিয়ন্ত্রণ পাকাপোক্ত হলো জিএম কাদেরের
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রেখে যাওয়া দলের দ্বন্দ্ব রয়েই গেছে। তিনি বেঁচে থাকতে স্ত্রী রওশন এরশাদপন্থী নেতাদের সঙ্গে নির্বাচনকালীন হিসাব-নিকেশ নিয়ে সমস্যা সবসময় দেখা গেছে। এরশাদ মারা যাওয়ার পর তার ভাই জিএম কাদেরের সঙ্গে ভাবি রওশন এরশাদের নির্বাচন নিয়ে দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়েছে। যে কারণে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম নেননি রওশন এরশাদ। ফলে প্রায় ৩২ বছর পর রওশনকে ছাড়াই নির্বাচনে নামল জাতীয় পার্টি (জাপা)। নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়েছেন রওশনের ছেলে সাদ এরশাদও। অবশ্য মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন পর্যন্ত রওশন এরশাদকে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আনার চেষ্টা করেছেন জাপা নেতারা।
শুধু রওশন এরশাদই নন, তার অনুসারী অনেক নেতার ভাগ্যে এবার জোটেনি জাতীয় পার্টির মনোনয়ন। এর মধ্যে দলের সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা, জিয়াউল হক মৃধা, গোলাম মসীহ, কাজী মামুনূর রশীদ ও ইকবাল হোসেন উল্লেখযোগ্য। এছাড়া নির্বাচনী আসন নিয়ে একমত হতে না পারায় রওশনের ছেলে সাদ এরশাদও মনোনয়ন পাননি। এ কারণে ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকছেন রওশন এরশাদ। অবশ্য মাঝে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নির্বাচনে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন এরশাদপত্নী।
রওশন এরশাদকে নির্বাচনে আনার চেষ্টার কথা জানিয়ে জাপার কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। তাকে নানাভাবে বোঝানো হয়েছে। মহাসচিব একাধিকবার ফোন করেছেন, এমনকি ফরম নিয়ে তাঁর বাসায়ও যেতে চেয়েছেন। তিনি মানা করে বলেছেন, লোক পাঠাবেন। এরপর আমরা তার জন্য শেষ পর্যন্ত অপেক্ষায় ছিলাম। শুনেছি, তাকে কেউ ফরম নিতে দেয়নি।’
আরও পড়ুন
এদিকে জাপার দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, রওশন এরশাদ এবার ছেলে সাদের আসন নিয়ে আপত্তির জেরে নির্বাচনে না গেলেও সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সমঝোতার বিষয়ে চেষ্টা ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তা সফল হয়নি।
নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরুর আগে জিএম কাদেরের সঙ্গে সরকারের বেশ বৈরী সম্পর্ক ছিল। কিন্তু ভোটের আগে তা অনেকটা দূর হয়ে যাওয়ায় সুবিধা পেয়েছেন জিএম কাদের। এবার জিএম কাদেরকে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বানানোর আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বলেও জাপা সূত্রে জানা গেছে।
আরও পড়ুন
এদিকে জাপা সূত্র জানায়, মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ নিয়ে গত বুধবার নানা নাটকীয়তার পর রাতে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা নেন। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি দলের নেতাদের অবমূল্যায়ন করেছে। এ কারণে তিনি নির্বাচন করবেন না।
তার এই ঘোষণার আগ পর্যন্ত জিএম কাদেরপন্থীরা তিনটি মনোনয়ন ফরম নিয়ে অপেক্ষা করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত রওশনপন্থীরা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি।
এরপর রওশন এরশাদের ময়মনসিংহ-৪ আসনে ময়মনসিংহ সদর উপজেলা সভাপতি আবু মো. মুছা সরকারকে প্রার্থী ঘোষণা করে জাপা।
আরও পড়ুন
রওশন এরশাদ ১৯৯১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ছয়বারের সংসদ সদস্য। এর মধ্যে ২০০৮ সালে তিনি ভোটে হেরে যাওয়ার পর উপনির্বাচনে এরশাদের ছেড়ে দেওয়া রংপুর-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। জাপার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ আমৃত্যু এই আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।
২০১৮ সালে এরশাদের মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে সাদ এরশাদ সংসদ সদস্য হন। এবারও সাদ প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাতে রাজি হননি জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের। এবার তিনি নিজেই এই আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন।
অবশ্য ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ‘একতরফা’ নির্বাচন এরশাদ বর্জনের ঘোষণা দিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলেও তখন রওশন এরশাদ দলের একটি অংশকে নিয়ে নির্বাচন করেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি জাপার মনোনয়নে নেতৃত্ব দেন। নির্বাচনের পর দলের চেয়ারম্যান এরশাদকে বাইরে রেখে তিনি বিরোধীদলীয় নেতা হন। এবার তার ব্যতিক্রম ঘটল।
জাপার নেতারা মনে করছেন, রওশন এরশাদকে ছাড়া নির্বাচনে যাওয়ার মধ্য দিয়ে এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আপাতত দলে জি এম কাদের একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এক ধাপ এগিয়ে গেলেন। অন্যদিকে রওশনপন্থীরাও আরও কোণঠাসা হয়ে পড়লেন।
জাপার একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের সঙ্গে চেয়ারম্যানের সম্পর্ক ভালো হওয়াতে চিত্র বদলে গেছে। রওশন এরশাদের শারীরিক অবস্থাও সরকারের কাছে গুরুত্ব কমার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। রওশন এরশাদ শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর ডাকের অপেক্ষায় ছিলেন। সাক্ষাৎ চেয়েও পাননি।’
বিইউ/জেবি