শনিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

বিভেদ ভুলে দলকে ফের ক্ষমতায় আনতে হবে, তৃণমূলকে প্রধানমন্ত্রী

ওয়াজেদ হীরা
প্রকাশিত: ০৬ আগস্ট ২০২৩, ০৯:৩২ পিএম

শেয়ার করুন:

বিভেদ ভুলে দলকে ফের ক্ষমতায় আনতে হবে, তৃণমূলকে প্রধানমন্ত্রী

টানা তিন মেয়াদ ধরে ক্ষমতায় আছে দেশের প্রাচীনতম দল আওয়ামী লীগ। চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসার হাতছানি দলের সামনে। তবে নানা কারণে এবারের নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া কিছুটা কঠিন হবে। এর জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার দলীয় ঐক্য। এজন্য সব বিভেদ ভুলে দলকে পুনরায় ক্ষমতায় আনতে সারাদেশের তৃণমূলের নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন যাকেই দেওয়া হোক তার পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দিয়ে সবার কাছ থেকে নিয়েছেন প্রতিশ্রুতি। উপস্থিত নেতারা হাত তুলে দলীয়প্রধানের কাছে সেই অঙ্গীকার করেছেন।

রোববার (৬ আগস্ট) গণভবনে দিনভর আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল সাড়ে দশটায় শুরু হয়ে দুপুরে এক ঘণ্টার বিরতি দিয়ে আবার বিকেল তিনটায় দ্বিতীয়বারের মতো সভা শুরু হয়। সভায় বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে প্রায় তিন হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: উন্নয়নের প্রচার ও সক্রিয়তার বার্তা পেল আ.লীগের তৃণমূল

শুরুতে প্রধানমন্ত্রী একবার বক্তব্য দেন। পরে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নেতাদের বক্তব্য শোনেন। বিকেলে সমাপনী বক্তব্য দেন। সেখানে আগামী নির্বাচনকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে সেই নির্বাচনে দলকে পুনরায় জেতাতে সবাইকে কাজ করার তাগিদ দেন শেখ হাসিনা।

PM2

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি জেলার সভাপতি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘সভার শুরুতে প্রথম ধাপে ২১ জন এবং পরের ধাপে ১০ জনের বেশি নেতা বক্তব্য দেন। প্রধানমন্ত্রী ধৈর্য ধরে এসব বক্তব্য শোনেন। সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব প্রারম্ভিক বক্তব্য দেন। আর সভা সঞ্চালনা করেন প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ।’


বিজ্ঞাপন


কী নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকার যে উন্নয়ন করেছে সে বিষয়ে বলেছেন এবং এক হয়ে দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেবে তার জন্যই কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। এসময় তৃণমূল থেকে আসা নেতাকর্মীরা হাত তুলে নেত্রীকে সায় দেন।’

আরও পড়ুন: ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামী নির্বাচনে জয়ের বন্দরে পৌঁছাবে আ.লীগ’

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক দায়িত্বশীল নেতা ঢাকা মেইলকে জানান, স্থানীয় এমপিদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। যশোরের সভাপতি শহীদুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, ‘দলের অনেক কাজের ক্ষেত্রে আমি নিজেও অনেক সময় জানি না।’

সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সামাদ তালুকদার দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা আজকে আপনার সামনে কমিটমেন্ট করে যাবেন যে, আমরা দলের ভেতরে কোনো বিভাজন করব না। নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াব। এখান থেকে বের হয়ে দলবল নিয়ে গিয়ে এলাকায় গ্রুপিং করব-এটা যেন না হয়।

পঞ্চগড় জেলার উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। বিএনপির এক নেতার বক্তব্য তুলে ধরে তিনি বলেন, উপকারভোগী বিএনপি নেতারাও ব্যক্তিগত আলাপে বলেন, দেশ চালানোর জন্য শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। তাদেরকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়-বিএনপি নেতারা কেন সরকার ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন? সমালোচনা করেন? তারা তখন জবাব দেন, মঞ্চে উঠে বক্তৃতা করে মাইকে সরকারের সমালোচনা আর বিপক্ষে না বললে-বিএনপির তো রাজনীতি থাকে না, অস্তিত্ব থাকে না। তাই তারা সরকারকে গালাগাল করেন। তবে উপকারভোগী বিএনপি নেতাকর্মীরা আগামীতে নৌকায় ভোট দেবেন বলে দাবি করেন সম্রাট।

দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলতাফুজ্জামান মিতা বলেন, দিনাজপুরের একজন সংসদ-সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে আসছেন। তিনি দলীয় শৃঙ্খলা মানেন না।

জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিজন কুমার দাস আগামীতে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় জনপ্রিয়দের অগ্রাধিকার দেওয়ার অনুরোধ জানান। লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান লালমনিরহাটে আগামীতে দলের ভেতর থেকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানান।

PM3

ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ-সদস্য নিজাম হাজারী বলেন, ফেনী এখন আর বিএনপির ঘাঁটি নেই। বিএনপির যেকোনো আন্দোলন শক্তহাতে দমন করা হবে।

বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, অনেকেরই এমপি হওয়ার স্বপ্ন থাকতে পারে। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

একজন জনপ্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এখানে সিনিয়রদের বক্তব্যে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। আমরা সারাদেশ থেকে কর্মীরা যারা এসেছি, অন্যান্য জেলার প্রবীণরা যারা বক্তব্য দিয়েছেন, তাদের বক্তব্য থেকে শিখেছি, ভালো লেগেছে। এরপর নেত্রী বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি আরও ভালো লেগেছে।’

সভায় উপস্থিত এক দায়িত্বশীল নেতা বলেন, ‘নেত্রী স্পষ্ট বলেছেন, উপরের দিকে থুতু ফেললে নিজের গায়ে পড়ে। একে অপরের বিরোধিতা না করে সরকারের উন্নয়ন প্রচার করবে আর যিনিই মনোনয়ন পাবেন তার জন্য কাজ করব। দলের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে উন্নয়নের জন্য কাজ করব।’

আরও পড়ুন: ‘বিএনপির দুর্নীতি ও দুঃশাসনের কারণেই ওয়ান ইলেভেন হয়েছিল’

সভায় উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, গাজীপুর মহানগরের আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মাহাবুব আলী খান, পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট, মুন্সীগঞ্জ জেলা সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিনসহ বিভিন্ন জেলার সাধারণ সম্পাদকরা, উপজেলার সভাপতি, কোনো কোনো উপজেলার সেক্রেটারি, বিভিন্ন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা বক্তব্য দেন। সবার বক্তব্যেই উঠে আসে- নির্বাচনে এক হয়ে কাজ করতে হবে, উন্নয়ন তুলে ধরতে হবে।

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘সভায় বলেছি, দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে। দল যেন আবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে সেভাবে তৃণমূলে মানুষের কাছে যেতে হবে। উন্নয়নমূলক যে কার্যক্রম আছে সামাজিক উন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন এগুলো জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে। সামাজিক সহযোগিতা যেগুলো দেওয়া হচ্ছে, বিভিন্ন ভাতাপ্রাপ্ত মানুষের কাছে যেতে হবে, তাদের বলতে হবে- সরকার আবার গঠন করলে এই ভাতা পাওয়া যাবে। যারা বাদ আছে তাদেরও সামনে যুক্ত করা যাবে, সবাই পাবে। আওয়ামী লীগ ঐক্য থাকলে সেই সাথে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক উন্নয়ন এই বার্তা যদি আমরা দিতে পারি তাহলে জনগণ নিশ্চয় অতীতের মতো আবারও আওয়ামী লীগের পক্ষে থাকবে। দল আবার রাষ্ট্রী ক্ষমতায় আসবে।’

PP

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবু বকর ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বিভিন্ন জেলার সিনিয়র নেতারা বক্তব্য দিয়েছেন। সারাদিন ধরে এই সভায় আমরা নেত্রীর নানা দিকনির্দেশনা পেয়েছি। দেশের যেকোনো ইউনিটেই কোনো ধরনের বিভেদ থাকলে নেত্রী এক হয়ে নির্বাচনে সবাইকে কাজ করতে বলেছেন, ঐক্যের কথা বলেছেন। আমার মতো যারা এই সভায় উপস্থিত ছিল সবাই একসাথে কাজ করব, হাত তুলে সেই সায় দিয়েছি।’

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য হাবিবুর রহমান সিরাজ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আজকে এখানে তৃণমূল নেতাকর্মীরা জড়ো হয়েছিলেন। জাতীয় নির্বাচনের আগে এরকম সভা করা আর সম্ভব হবে না। আগামী নির্বাচন নিয়ে ফখরুল সাহেবরা ষড়যন্ত্র করছেন, সাংগঠনিকভাবে সেই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে জনগণকে তার পছন্দের প্রার্থী নির্বাচিত করার ব্যাপারে দলীয় নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন শেখ হাসিনা।’

আরও পড়ুন: রাজনীতিতে এখন ক্রিকেটের ‘মারপ্যাঁচ’!

জেলা উপজেলা ইউনিটের বক্তব্য শুনে সমাপনী ভাষণে দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। আগামী জাতীয় নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সবাই মিলে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। আমাদের একমাত্র শক্তি জনগণ। আমরা কারও কাছে মাথা নত করি না।’

PM4

বিএনপির কর্মকাণ্ডের সমালোচনাও করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘বিএনপির জন্মই হচ্ছে আজন্ম পাপ৷ বিএনপির জন্ম অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে, জাতির পিতার হত্যার মধ্য দিয়ে এবং সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশে যত উন্নয়ন হয়েছে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। প্রত্যেকটা এলাকায় যা যা উন্নয়ন হয়েছে মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে, প্রচার করতে হবে।’

আরও পড়ুন: বিজেপির আমন্ত্রণে ভারতে গেল আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যাকে মনোনয়ন দেবে তাকে জয়যুক্ত করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’ এ সময় উপস্থিত নেতারা হাত তুলে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

দীর্ঘদিন পর দলীয় সভাপতির সাথে এমন বৈঠকে বেশ খুশি তৃণমূল থেকে আসা নেতারাও। বৈঠকে বিভিন্ন জেলার সহযোদ্ধাদের সাথে দেখা হয়ে বিভিন্ন আলপাচারিতা ও স্মৃতিচারণ করেন তারা। এক জেলার নেতা আরেক জেলার খোঁজখবর নেন। বিশেষ করে দুপুরের খাবার বিরতির মধ্যে এক জমজমাট আড্ডাও হয় নেতাকর্মীদের মধ্যে। এসময় আগামী নির্বাচন, নিজের এলাকার উন্নয়ন, বিভিন্ন গ্রুপিং নিয়েও নিজেদের মধ্যে নানা আলোচনা হয়। দলীয়প্রধানের সঙ্গে সারাদিনের স্মৃতি নিয়ে ফিরে যান তৃণমূলের নেতারা।

ডব্লিউএইচ/জেবি

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর