মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০২৪, ঢাকা

ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ ও বাংলাদেশ ব্র্যান্ডিং

প্রকৌশলী আব্দুল্লা রফিক
প্রকাশিত: ১৭ ডিসেম্বর ২০২২, ১০:৫৬ পিএম

শেয়ার করুন:

ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ ও বাংলাদেশ ব্র্যান্ডিং

ফুটবল বিশ্বকাপের সঙ্গে ‘বাংলাদেশ ব্র্যান্ডিং’ শব্দটা একটু অন্যরকম শোনালেও আমার এই শব্দচয়নের পেছনে কিছু যুক্তি আছে। ফুটবল বিশ্বকাপ শুরু হলেই আমাদের দেশের দর্শকদের মধ্যে দুটি ধারা খুবই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলের মধ্যে খেলার মাঠের বাইরে রীতিমতো জোরালো প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়ে যায়। কে কত বড় আর্জেন্টিনা বা ব্রাজিলের পতাকা বানাতে পারে, নিজ বাড়ির ছাদে কত বড় পতাকা টাঙাতে পারে- তা নিয়ে।

আর্জেন্টিনা বা ব্রাজিলের জার্সি, ক্যাপ বিক্রির হিড়িক পড়ে যায়। প্রত্যেক জেলা শহরে এ বছর তো জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বড় বড় স্ক্রিনে খেলা দেখার জমজমাট আয়োজন করা হয়। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে বাংলাদেশের এই খবর বেশ ফলাও করে প্রচার হচ্ছে। এ বছর তো আর্জেন্টিনা বা ব্রাজিলের সাধারণ মানুষের নজরেও এসেছে বিষয়টি। আর্জেন্টিনা ফাইনালে ওঠার পর বাংলাদেশের যত মানুষ আর্জেন্টিনার জার্সি পরে খেলা দেখবে আমার ধারণা- খোদ আর্জেন্টিনাতেও এই সংখ্যা হবে না, কারণ তাদের জনসংখ্যা আমাদের চেয়ে অনেক কম।


বিজ্ঞাপন


>> আরও পড়ুন: আলোচনায় ওবায়দুল কাদেরের ‘খেলা হবে’

বাংলাদেশ ফুটবলে খুব বেশি এগোতে পারেনি। এর প্রধান কারণ আমার কাছে মনে হয়, আমাদের দেশে নিয়মিত বয়সভিত্তিক ফুটবল টুর্নামেন্ট নেই বললেই চলে। জাতীয় ইন্টার স্কুল প্রতিযোগিতায়ও মাঝে মধ্যে অনিয়মিতভাবে হয়ে থাকে। এর পেছনে হয়তো স্পন্সরের অভাব একটা কারণ হতে পারে। একটা সুন্দর ও সফল টুর্নামেন্ট করতে গেলে অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার প্রয়োজন। আর এটা কোনোভাবেই স্বেচ্ছাশ্রমে করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন।

সরকারের পক্ষ থেকে এখন ভালো অর্থের সংস্থান হয়ে থাকে বলেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়, নিয়মিত ফেডারেশন কাপ, ক্লাব কাপ টুর্নামেন্ট দেখা যায়। আমার ধারণা, ফুটবল ফেডারেশনের একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরির জন্য হয়তো সেটা হয়তো অপ্রতুল। বিকেএসপিসহ (BKSP) ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিছুটা ভূমিকা রাখছে। কিন্তু ফুটবলকে পেশা হিসাবে নিতে অনেকেই নিরুৎসাহিত হয়ে থাকে অপ্রতুল অর্থনৈতিক কারণে।

>> আরও পড়ুন: আর্জেন্টিনা-ফ্রান্সের ম্যাচ ঘিরে ১৪ হাজার পুলিশ মোতায়েন


বিজ্ঞাপন


তার ওপর আবার ‘ফুটবল’ ক্রিকেটের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় তরুণদেরকে আকৃষ্ট করতে পারছে না। কারণ আমরা সবাই জানি, বাংলাদেশের ক্রিকেট আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ কিছুটা এগিয়ে আছে। ক্রিকেট বোর্ডের আর্থিক অবস্থা খুবই ভালো, পুলভুক্ত খেলোয়াড়রা আন্তর্জাতিক মানে পারিশ্রমিক পেয়ে থাকে, বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট নিয়মিতভাবেই হয়ে থাকে, অনূর্ধ্ব-১৯ এ একবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, তরুণরাও পেশা হিসাবে ক্রিকেটকে অতি সহজেই বেছে নিচ্ছে।

তবে এখন ছেলেদের ফুটবলে ইউরোপে বড় হওয়া কয়েকজন খেলোয়াড় নিয়মিতভাবে বাংলাদেশে জাতীয় দল খেলছে। তাদের দেখাদেখি হয়তো আরও অনেকেই আসতে থাকবে বলেই আমার বিশ্বাস। তবে মহিলা ফুটবল বেশ কিছুটা এগিয়েছে। একেবারে রুট থেকে আসা তরুণীদের সমন্বয়ে গঠিত ‘বাংলাদেশ মহিলা ফুটবল দল’ সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আশার হাতছানি দিচ্ছে, হয়তো একদিন তারা বিশ্ব ফুটবলের অংশ হয়ে উঠবে। তবে ওই যে কথা একটাই- বয়সভিত্তিক বা স্কুলভিত্তিক টুর্নামেন্ট নিয়মিতভাবে চালু রাখতে হবে এবং বাছাই করা খেলোয়াড়দের বিশেষ তত্ত্বাবধানে পরিচর্যা করে বেশি বেশি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে খেলাতে হবে।

>> আরও পড়ুন: বিশ্বকাপ উন্মাদনায় বাংলাদেশে কেন খুনোখুনি?

আমাদের দেশের আর্জেন্টিনা বা ব্রাজিলের দর্শকরা বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিকভাবে একটি ‘ব্র্যান্ড’-এ পরিণত করেছে। আর তাই তো আর্জেন্টিনা এখন বাংলাদেশে একটি দূতাবাস (Embessy) খোলার ঘোষণা দিয়েছে। আর এই ‘বাংলাদেশ ব্র্যান্ড’র মাধ্যমে আমাদের ফুটবল একদিন হয়তো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোকরশ্মি ছড়াবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে চাই।

জেএম/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর