বান্দরবানে কয়েকবার ঘুরতে গিয়েছি। দেশের অসাধারণ সৌন্দর্যে ভরা স্থান যে জেলায় বেশি, তা হচ্ছে বান্দরবান। তাই এখানে বারবার ঘুরতে গেলেও যাওয়ার নেশা ছুটে না। বান্দরবানের সুউচ্চ পাহাড়ে মেঘের সাথে লুকোচুরি খেলা। প্রাকৃতিক অরণ্যভূমির জলাধার। সবুজ পাহাড়ে লেকের অপূর্ব সৌন্দর্য্য মোহিত করে। পাথর, পাহাড়, খুম, ঝর্ণা, নদী এবং সবুজ বনে জেলাটি অপরূপ সাজে সজ্জিত। পাহাড়ি বুনো ফুলের সুবাস চঞ্চলা ভ্রমণ পিপাসুদের মনকে নাড়া দেয়। তাই বান্দবানে ছুটে পর্যটকরা।
জেলার দেখা মতো জায়গাগুলো যেতে দুর্গম পাহাড়ি পথের বাহন হচ্ছে জিপ গাড়ি। যা চান্দের গাড়ি নামে পরিচিত। এই গাড়িগুলোর পাহাড়ি ভয়ঙ্কর আঁকা-বাঁকা সড়কে যেভাবে ছুটে তাতে ভয়ে আত্মা শুকিয়ে যায়। কারণ এক পাশে পাহাড় আরেক পাশে গভীর খাদ। চালকরা যেভাবে দ্রুত চালায় একটু এদিক-সেদিক হলেই ঘটে দুর্ঘটনা। চালকদের ভয়হীন চালানের স্টাইল দেখলে মনে হয় তার জিপ চালাচ্ছে না বিমান চালাচ্ছে!
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি বান্দরবানের রুমা-বগালেক-কেওক্রাডং সড়কে একটি পর্যটকবাহী জিপ গাড়ি পাহাড়ি খাদে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীসহ দুই পর্যটক মারা গেছেন। এ ঘটনায় ১০ জন আহত হন। গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায় ৫০০ মিটার পাহাড়ি খাদে পড়ে যায়। এই দুর্ঘটনার পর জিপ গাড়িগুলো নিয়ে আবার আলোচনা শুরু হয়।
প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ি পথে পর্যটকবাহী জিপ গাড়িগুলোর বেশির ভাগেরই কোনো ফিটনেস সনদ ও হালনাগাদ কাগজপত্র নেই। জিপ গাড়িগুলো সরকারি প্রতিষ্ঠানের বাতিল হয়ে যাওয়া ফোর হুইল জিপ গাড়ি। দুর্গম বিপৎসংকুল পাহাড়ি পথে চলছে নিবন্ধন ছাড়াই।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পাহাড়ি এই জেলায় দুই ধরনের জিপ পর্যটক পরিবহন করে। সরকারি সংস্থা থেকে নিলামে কেনা পুরোনো জাপানি জিপগুলোকে বি-সেভেন্টি বলেন চালক-মালিকেরা। এই গাড়িগুলোতে নিলামের লট নম্বর ছাড়া কোনো ধরনের কাগজপত্র থাকে না। নিবন্ধন নেওয়ারও সুযোগ নেই।
বিজ্ঞাপন
বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিক্রি করা ভারতীয় মাহেন্দ্র কোম্পানির জিপও পর্যটন পরিবহনে ব্যবহৃত হয়। এসব জিপ কিনে নিয়ে স্থানীয় পরিবহন ব্যবসায়ীরা পাহাড়ি পথে পণ্য ও পর্যটক বহনের কাজে লাগান। তবে মাহেন্দ্র জিপগুলোর ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের নেওয়া নিবন্ধন নম্বর থাকে। যদিও সেগুলো হালনাগাদ করা হয় না।
সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, বান্দরবানে প্রায় ৩৫০টি জিপ গাড়ি রুমা, থানচি, রোয়াংছড়িসহ বিভিন্ন উপজেলার পর্যটন স্পটে চলাচল করে। এগুলোর মধ্যে ৩০টি বি-সেভেন্টি ও ৩২০টি মাহেন্দ্র জিপ। জাপানের তৈরি বি-সেভেন্টি গাড়িগুলোতে ফোর হুইল থাকায় দুর্গম পাহাড়ি সড়কে সহজে যাতায়াত করতে পারে। মাহেন্দ্র জিপে ফোর হুইল নেই। সে কারণে উঁচু পাহাড়ি সড়কে এই জিপগুলো চলাচল করতে পারে না।
গাড়ির ফিটনেস, ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিষয়গুলো দেখার দায়িত্ব যাদের। তাদের এদিকে কোনো দৃষ্টি নেই। যার কারণে মাঝে মধ্যেই দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটছে।
স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, পার্বত্য এলাকায় চলা এসব চান্দের গাড়ির ফিটনেস তো দূরের কথা গাড়ির কাগজও থাকে না। চালকের নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। গাড়িপ্রতি মাসিক ৩০০ টাকা দিলে ট্রাফিক পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয় না। টাকাই সবকিছু! দেখার কেউ নেই।
স্থানীয়রা আরও জানান, শুরু থেকেই সড়কে চলা এসব চান্দের গাড়ির ফিটনেস ছিল না। কারণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব দেখার সময় পান না। তারা মহাব্যস্ত মোটরসাইকেল আর প্রাইভেট কারের ফিটনেস ও লাইসেন্স নিয়ে। মোটরসাইকেলের কাগজপত্র সব ঠিক থাকলেও তারা ঝামেলা করে, জরিমানা করে।
আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে যাচ্ছি। দেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতার যাচ্ছে। আমাদের চাওয়া- পর্যটন এলাকার সড়কে আর কোনো পর্যটক যেন প্রাণ না হারাক, আর কেউ আহত না হোক। তাই এসব ফিটনেস বিহীন গাড়িগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। বিআরটিএ ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেবে কি?
লেখক: গল্পকার ও সাংবাদিক