রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ভোট ও বর্জনের সভা-সমাবেশে আগ্রহ নেই সাধারণ নাগরিকদের

মহিউদ্দিন আহমেদ
প্রকাশিত: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:২৫ পিএম

শেয়ার করুন:

ভোট ও বর্জনের সভা-সমাবেশে আগ্রহ নেই সাধারণ নাগরিকদের
ফাইল ছবি

প্রত্যেক বছরের এই সময় বিশেষ করে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে মানুষের ঘরে ঘরে থাকে আনন্দ উৎসব। নতুন ধান, নতুন ফসল, শাকসবজি, নদী খাল বিল থেকে তুলে আনা মাছ, বাড়ির উঠানে পিঠে পায়েসের উৎসব। খেজুরের রসের তৈরি পায়েসে আত্মীয়-স্বজনের আমন্ত্রণ- নিমন্ত্রণ, বিয়ে-শাদির উৎসব ছাড়াও ধর্মীয় বিভিন্ন উৎসব লেগেই থাকে। সেই সাথে চিরাচরিত বাংলাদেশের রীতি, স্থানীয় অথবা জাতীয় নির্বাচন ঠিক এই সময়টাতেই অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ফলের দিকে রাজনৈতিক নির্বাচনী উৎসব, অন্যদিকে নতুন শাক সবজির ভরা মৌসুম এবং পিঠে পায়েসের উৎসব মানুষকে আনন্দের মধ্যেই রাখে।

চলতি বছরেও যথারীতি জাতীয় সংসদের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ৭ জানুয়ারি ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। অন্যদিকে অন্যতম প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল-বিএনপিসহ তাদের সমমনা রাজনৈতিক দল এবং বাম রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন বয়কট করেছে। একদিক দিয়ে ভোটের উৎসব অন্যদিকে নির্বাচন বয়কটের সভা সমাবেশের ডামাডোল। এক কথায় রাজনৈতিকভাবে দেশের রাজধানী থেকে শুরু করে প্রান্তিক অঞ্চল পর্যন্ত সরগরম হয়ে উঠেছে। বাজারেও তরিতরকারির ভড়া মৌসুম, পর্যাপ্ত মজুদ এবং সরবরাহ রয়েছে।


বিজ্ঞাপন


৯০ দশকে এই সময় যেখানে এক কেজি বেগুনের দাম ছিল সর্বোচ্চ দুই থেকে পাঁচ টাকা কেজি। একটি লাউয়ের দাম সর্বোচ্চ ৫ টাকা, একটি ফুলকপি দু’টাকার উপরে না। অন্যদিকে মাছ দুধ কোনো পণ্যেরই মূল্য ঊর্ধ্বমুখী ছিল না। এক কথায় মাছে ভাতে বাঙালি জাতি। আত্মীয়-স্বজনরা থেকে পাড়া-প্রতিবেশীদের মধ্যে সোহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক, ধুমধাম আনন্দ ফুর্তি পাশাপাশি ধর্মীয় উৎসব যেন লেগেই থাকতো। আর নির্বাচন এলে তো কথাই নেই। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সবার একটি আগ্রহ থাকতো, থাকতো উৎসবের আমেজ। আর বর্তমানে সবজির ভরা মৌসুমেও দাম কমছে না। বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে বেড়েছে বেগুন ও করলাসহ প্রায় সব সবজির দাম। সেই সঙ্গে দাম বেড়েছে রসুন ও বাজারে আসা নতুন আলুর। তবে কমেছে গাজর, ছোলাবুট ও পেঁয়াজের দাম। অপরিবর্তিত রয়েছে ডিম, চাল, ডাল ও চিনির বাজার।

আরও পড়ুন


বিজ্ঞাপন


উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাবে দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতিতে বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিল নাভিশ্বাস অবস্থা। সীমিত আয়ের মানুষ সংসার চালাতে বিশেষত খাদ্য ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। অনেকে বাধ্য হয়ে খাওয়া-দাওয়া সীমিত করেছেন। খাদ্যপণ্য কেনার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। অনেক পরিবার আকাশচুম্বী দামের কারণে মাছ, মাংস, ডিম, দুধের চাহিদা মেটাতে পারছে না। বাজার শীতকালীন সবজিতে ভরপুর। তারপরও সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে দাম। এছাড়া ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দামও বেড়েছে। 

খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে আলুর দাম বেশি হওয়ার কারণে অন্যান্য সবজির ওপর কিছুটা চাপ পড়েছে। এখনও নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে। অন্যান্য বছর এমন ভরা মৌসুমে আলুর ২০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে নেমে আসে। এ কারণে মানুষ আলু কিনছে কম, অন্যান্য সবজির দিকে ঝুঁকছে। শীতের নানা রকম সবজিতে ছেয়ে গেছে বাজার। বিক্রিও হচ্ছে দেদারসে। রাজধানীর কাঁচা বাজারগুলোতে ক্রেতাদের ভিড়ও দেখা গেছে। রাজধানীর মালিবাগ, হাতিরপুল, কারওয়ান বাজার, আনন্দবাজার, যাত্রাবাড়ী কাঁচা বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। তবে চড়া মূল্যে ভোক্তারা চরম অস্বস্তিতে পড়েছেন।

যদিও অসাধু ব্যবসায়ীরা সবসময়ই কোনো না কোনো অজুহাত খুঁজেন। পণ্যের মূলের দাম বেশি কেন জিজ্ঞেস করলে বলবে, হরতাল অবরোধ। কিন্তু বাজারে তো কোনো পণ্যের ঘাটতি নেই। বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারের হরতাল অবরোধ বলা চলে খুবই ঢিমে তালে। জীবন জীবিকা চালানো যেখানে কষ্টসাধ্য, সংসার চালাতে যখন ব্যতি ব্যস্ত থাকতে হয় তখন হরতাল অবরোধ বা নির্বাচন কোনটার প্রতি মানুষের আগ্রহ থাকে না।

আরও পড়ুন

রাস্তায় বেরোলেই নির্বাচনের প্রচারের ব্যান্ড সংগীত কিছুক্ষণের জন্য মনে আনন্দ যোগায় কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই সেই মানুষটির মুখ থেকে হাসি চলে যায়। কারণ তার ঘর থেকে বেরোনোর উদ্দেশ্য কিছু উপার্জন করা, তার ব্যবসা বা কর্ম ঠিক রাখা। ঘরে ফেরার সময় যে নিত্র প্রয়োজনীয় বাজার তাকে আনতে হবে। সেই বাজারের তো অনেক খরচ, কীভাবে যোগান দেবে বাজারের খরচ, কিংবা চিকিৎসার ওষুধপত্র কেনার অর্থ, সন্তানদের স্কুলের বেতন যে বকেয়া। দুদিন বাদেই যে গ্রামে মাকে দেখতে যেতে হবে। এছাড়া ভবিষ্যতে চিন্তা, বাড়ি ভাড়ার চিন্তা সবকিছু মিলিয়ে অধিকাংশ মানুষই এখন বেশ অশান্তিতে। এই যখন পরিস্থিতি তখন কিসের নির্বাচন আর কিসেরই বা ভোট বর্জন। সব উৎসব আনন্দ মানুষের মন থেকে যেন হারিয়ে গেছে।

আমাদের দেশের বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য রয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিদফতর, সিটি করপোরেশনের রয়েছে বাজার পরিদর্শক, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন। কিন্তু বাজারে গেলে আমরা কি সরকারি পক্ষের কোনো কর্মকর্তাকে দেখতে পাই? প্রতিটি বাজারে তো একজন বাজার পরিদর্শকের অফিস থাকার কথা। যেখানে ভোক্তা অতিরিক্ত মূল্য নিলে কিংবা নকল ভেজাল পণ্য বর্জন এবং কম দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করবে। কিন্তু আমাদের বাজারের সীমা পরিসীমা সত্যিই কি আছে? কিংবা বাজারে পরিদর্শকের অফিস কি রয়েছে? জনগণের দুর্ভোগ লাগবের জন্য সত্যিই কি নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো বা সরকার নজর রাখছে?

আরও পড়ুন

হাতেগোনা দুই একটি অভিযান পরিচালনা করে জাতীয় ভোক্তা অধিদফতর। যেখানে কেবলমাত্র অতিরিক্ত মূল্য নেওয়ার কারণে যত সামান্য জরিমানা করে। এখন একজন ব্যবসায়ী যদি দিনে ৫০ হাজার টাকা অতিরিক্ত উপার্জন করে তার কাছে ১০-২০ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়া মামুলি ব্যাপার নয় কি? প্রকৃতপক্ষে বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য পর্যাপ্ত যৌথ মনিটরিং ট্রাস্ট ফোর্স গঠন করা অত্যন্ত জরুরি। তাছাড়া বাজারের নির্দিষ্ট আয়তন নির্ধারণ এবং বাজারে একজন বাজার পরিদর্শকের অফিস স্থাপন করা উচিৎ।

ছোটবেলা থেকেই আমার রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে ওঠা। তাই নির্বাচনের উৎসবে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং শীত মৌসুমে ঘরে ঘরে আনন্দ উৎসব এটি আমার হৃদয়ে গেঁথে রয়েছে। এবার লক্ষ্য করলাম ভরা মৌসুমেও বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও লাগামহীন মূল্যে দিশেহারা মানুষদের মুখে হাসি নেই, আনন্দ নেই মনে। তাই তাদের কাছে নির্বাচনের ভোটের উৎসব কিংবা বিরোধী রাজনৈতিক দলের ভোট বর্জনের উৎসব কোনটি মনে আন্দোলিত করতে পারছে না।

লেখক: মহিউদ্দিন আহমেদ
আহ্বায়ক,
বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজ।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর