বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪, ঢাকা

নারীর আর্থিক অন্তর্ভুক্তি: একটি বাস্তব ঘটনা

বিপ্লব চন্দ্র ঘোষ
প্রকাশিত: ১৯ জুন ২০২৩, ১১:৫৩ এএম

শেয়ার করুন:

নারীর আর্থিক অন্তর্ভুক্তি: একটি বাস্তব ঘটনা

ভারতের মহারাষ্ট্রের এক গ্রামের মহিলারা সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক- রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়াকে (আরবিআই) ভুল প্রমাণিত করেছে। দেশটির নারীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি করার কার্যক্রমের সর্বপ্রথম যোদ্ধা হলেন ‘চেতনা গালা সিনহা’।

চেতনা গালা সিনহা যে গ্রামে বাস করতেন তার নাম মাসুওয়াদ। সে গ্রামের মহিলারা স্বল্প আয় এবং সে আয় থেকে দুর্যোগ সময়ের জন্য কিছু সঞ্চয় করার সংগ্রাম করত। সেই কষ্ট এবং সংগ্রামের চিত্র তিনি নিজের চোখে সরাসরি দেখেছেন। একদিন ওই গ্রামের কান্তাবাই নামের এক মহিলা তাঁর কাছে ব্যাংক হিসাব খোলার বিষয়ে সাহায্য চাইলেন। কান্তাবাই ব্যাংকে কিছু সঞ্চয় জমা করবেন এবং সেই জমানো সঞ্চয় দিয়ে বর্ষা মৌসুমে তার ঘরের জন্য প্লাস্টিকের শিট কিনবেন- এটাই কান্তাবাই চেয়েছিলেন।


বিজ্ঞাপন


চেতনা গালা সিনহা একটি সঞ্চয়ী হিসাব খোলার জন্য কান্তাবাইকে নিয়ে একটি ব্যাংকের পার্শ্ববর্তী ব্রাঞ্চে যান। কিন্তু সেই ব্যাংকের ম্যানেজার কান্তাবাইয়ের কাছে পর্যাপ্ত অর্থ নেই ভেবে হিসাব খুলতে অস্বীকৃতি জানান। এমনকি কান্তাবাই কোনো ঋণেরও আবেদনও করেনি। তারপরও ব্যাংক ম্যানেজার তার নামে সঞ্চয়ী হিসাব খুলতে অস্বীকৃতি জানান।

>> আরও পড়ুন: সময়টা খারাপ, নারীকেই সচেতন হতে হবে

এই ঘটনাটি চেতনা গালা সিনহাকে একটি ব্যাংক খুলতে দারুণভাবে প্ররোচিত করেছিল। তিনি গ্রামীণ স্বল্প আয়ের মহিলাদের জন্য একটি ব্যাংক খুলবেন মর্মে মনে মনে পণ করেছিলেন। সেই ব্যাংকে মহিলারা হিসাব খুলতে পারবেন এবং হিসাব খোলার ক্ষেত্রে অর্থের পরিমাণ মুখ্য বিষয় হবে না।

ব্যাংকিং লাইসেন্সের জন্য গ্রামের মহিলাদের নিয়ে চেতন গালা সিনহা যখন রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) বরাবর আবেদন করলেন, তখন আরবিআই তাঁদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন। এর মূল কারণ হিসেবে আরবিআই জানায়- ব্যাংকিং লাইসেন্সের জন্য যে মহিলারা আবেদন করেছে, তারা সবাই অশিক্ষিত।


বিজ্ঞাপন


তবে চেতনা গালা সিনহা ব্যাংক খোলার হাল ছেড়ে দেননি, বরং তিনি গ্রামের মহিলাদের নিয়ে একটি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন। তাঁর ব্যাংক খোলার সংকল্প থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে সে গ্রামের মহিলাদের শিক্ষিত করার জন্য তাদের নিয়ে গ্রামে লিটারেসি প্রোগ্রাম শুরু করেন তিনি। পাঁচ মাস পর ব্যাংকিং লাইসেন্সের জন্য আবারও আরবিআই বরাবর আবেদন করেন এবং আরবিআই কর্তৃপক্ষকে বলেন- ‘যদি ক্যালকুলেটর ছাড়া তাঁর টিম আরবিআই অফিসারদের চেয়ে দ্রুত হিসাব করতে না পারে তবে, ব্যাংকিং লাইসেন্স দেওয়া লাগবে না’।

>> আরও পড়ুন: শিশুশ্রম ও বাংলাদেশ

পরে তাঁদের আত্মবিশ্বাস দেখে আরবিআই পরিশেষে চেতনা গালা সিনহাদের ব্যাংকিং লাইসেন্স অনুমোদন করে। ফলশ্রুতিতে ১৯৯৭ সালে মহারাষ্ট্রের মাসুয়াদ গ্রামের মহিলারা মিলে একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। যার নাম দেওয়া হয়- ‘মন দেশী মহিলা সাহাকারী ব্যাংক’। ভারতে এটি মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত প্রথম ব্যাংক, যা গ্রামের মহিলাদের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

এই ব্যাংক শুধু আর্থিক পণ্যই তৈরি করে না, এটি গ্রামের মহিলাদের সাহায্যও করে। পাশাপাশি উদ্যোক্তা সৃষ্টি করে এবং তার সঙ্গে সঙ্গে আর্থিকভাবে গ্রামের মহিলাদের শিক্ষিত করার কাজও করে। আজ পর্যন্ত ব্যাংকটি কয়েক মিলিয়ন মহিলাকে তাঁদের লক্ষ্য অর্জন করতে সাহায্য করেছে।

একজন সত্যিকার মহিলা যোদ্ধা চেতনা গালা সিনহা প্রমাণ করেছেন যে, যদি সুযোগ দেওয়া হয় তবে মহিলারা যেকোনো কিছু অর্জন করতে পারেন।

লেখক: অ্যাসিসট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার এবং ম্যানেজার, বিডিবিএল, কারওয়ান বাজার শাখা।

টিবি/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর