প্রত্যেক বছর ১২ জুন বিশ্বব্যাপী পালন করা হয় ‘বিশ্ব শিশুশ্রম নিরসন দিবস।’
২০০২ সাল থেকে প্রতি বছর অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দিনটি উদযাপন করা হয়ে থাকে। শিশুশ্রম বন্ধে এবং শিশুদের অধিকার নিশ্চিতকরণে দিনটি উদযাপনের তাৎপর্য ব্যাপক। সামাজিক ন্যায় বিচার এবং শিশুশ্রম নিরসনের উপর জোর দিয়ে এ বছর ২০২৩ সালের এই দিনটির মূল স্লোগান হলো, ‘সবার জন্য সামাজিক ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা, এবং শিশুশ্রম বন্ধ করুন।’
বিজ্ঞাপন
সুস্থ ও সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিতকরণে শিশুকে সময়োপযোগী শিক্ষা দেয়ার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। তাকে অর্থ উপার্জন করতে বাধ্য করা নয় বরং তাকে জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করা উচিত। একটি শিশুর সুস্থ শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য তার ভবিষ্যৎ জীবনকে তরান্বিত করতে পারে৷ সমাজবিজ্ঞানের ভাষায়, শিশুর সুষ্ঠু সুন্দর সামাজিকীকরণ তার পরবর্তী জীবনের গতিকে তরান্বিত করে থাকে। শিশুর সামাজিকীকরনের প্রথম ধাপ পরিবার হলেও তার সঠিকভাবে বিকশিত হওয়ার জন্য আরো কিছু মাধ্যম রয়েছে যেমন- শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বন্ধুবান্ধব, ধর্মীয় উপাসনালয়, দলগত কাজ ও গণমাধ্যম। সবগুলো মাধ্যমের সঠিক সমন্বয়েই সম্ভব শিশুর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের সুষ্ঠু বিকাশকে বাস্তবায়ন করা।
সামাজিকীরণের এপর্যায়ে শিশুশ্রম একটি বাধার নাম। শিশুশ্রমের ফলে অল্প বয়সেই শিশু তার লক্ষ্যচুত্য হবার পাশাপাশি অনেক সময় সঠিক নৈতিক শিক্ষার অভাবে না বুঝেই অনেকে সমাজবিরোধী কার্যক্রমে যুক্ত হয়ে যায়। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করলে বোঝা যায়, শিশুশ্রম বন্ধের একমাত্র উপায় হলো দারিদ্র্যতা দূরীকরণ। তবে যেকোন দেশের দারিদ্র্যতা দূরীকরণ কিংবা এমন পরিস্থিতি একনিমিষেই পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। এজন্য দরকার সুস্পষ্ট পরিকল্পনা,সঠিক সময় এবং সুষম বাস্তবায়ন। এছাড়াও শিশুদের জন্য নিরাপদ কর্মঘণ্টা ও কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার গুরুত্ব ব্যাপক।
এই পরিস্থিতি দূরীকরণের পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত শিশুশ্রম বন্ধে সরকারি ও বেসরকারিভাবে যৌথ উদ্যোগের প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশে শিশুশ্রম রোধে কিংবা সমাজের অসংগতি দূরীকরণে সুশীলসমাজ তাদের মেধা ও সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে রাতারাতি শিশুশ্রম নিরসন করা সম্ভব না হলেও সমাজের বীত্তশালী ব্যক্তিগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকাও হতে পারে অনীস্বীকার্য। গণমাধ্যমের মাধ্যমে সকল বৈষম্য, প্রতিকার এবং প্রতিরোধের চিত্র তুলে ধরা সম্ভব।
বিজ্ঞাপন
বর্তমানে বাংলাদেশে শিশুর অধিকার নিশ্চিতকরনে ইউনিসেফ কর্তৃক ‘মিনা এওয়ার্ড’ প্রশংসার দাবিদার হয়ে উঠেছে। এছাড়ও আশার বানী হলো, বাংলাদেশ দারিদ্র্যের হার কমাতে অভাবনীয় অগ্রগতি অর্জন করছে এবং বিশ্বব্যাংকের মতে, ২০৩০ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের বৃহৎ সুযোগ রয়েছে। তাই বলা যায়, সুষ্ঠু ও সময়োপযোগী নীতিমালা প্রনয়ন এবং সঠিক বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমাদের দেশের শিশুশ্রমের এই অসংগতি দূর করা সম্ভব।
লেখক: লেকচারার জান্নাতুল বাকিয়া জেনি, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।