বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

লাইসেন্স ছিল না চালকের, ‘পুলিশ স্টিকারে’ চলছিল প্রাইভেটকারটি

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ০৭ মার্চ ২০২৩, ০৯:০৯ এএম

শেয়ার করুন:

লাইসেন্স ছিল না চালকের, ‘পুলিশ স্টিকারে’ চলছিল প্রাইভেটকারটি

রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার বসিলায় গার্ডেন সিটিতে প্রাইভেটকারের চাপায় ইউনুস বারী (৬২) নামে এক নিরাপত্তাকর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। চাপা দেওয়া সেই গাড়িটির মালিক পুলিশের ইন্সপেক্টর মিজানুর রহমান। তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলায় পুলিশ ইনভেস্টিগেশনে কর্মরত আছেন। প্রাইভেটকারটি তিনি এক ব্যক্তির কাছে বছর খানেক আগে কিনলেও সেটির মালিকানা বদল করেননি। সেভাবেই ‘পুলিশের স্টিকার’ লাগিয়ে চলছিল গাড়িটি। শুধু তাই নয়, যে চালক প্রাইভেটকারটি চালাতেন তারও কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না।

পুলিশের ও দুর্ঘটনায় নিহত নিরাপত্তাকর্মীর পরিবার সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।


বিজ্ঞাপন


যদিও ঘটনার পর প্রাইভেটকারের মালিক সম্পর্কে জানতে মাঠে নেমেছে থানা পুলিশ এবং তাদের দাবি, তারা সেই প্রাইভেটকারের মালিকের পরিচয় এখনো জানতে পারেননি।

>> আরও পড়ুন: রাজধানীতে প্রাইভেটকারের ধাক্কায় প্রাণ গেল নিরাপত্তাকর্মীর

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদপুরের বসিলা ব্রিজ এলাকার গার্ডেন সিটিতে প্রাইভেটকারের চাপায় নিহত হন নিরাপত্তাকর্মী ইউনুস বারী।

Newsএ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার এসআই আব্দুল মান্নান ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা গাড়িটির মালিকের পরিচয় জানার জন্য বিআরটিএতে আবেদন করেছি, কিন্তু এখনো কোনো ফলাফল পাইনি।


বিজ্ঞাপন


নিরাপত্তাকর্মীর মৃত্যুর পর একটি মামলা করে তার পরিবার। নিহত নিরাপত্তাকর্মী ইউনুস বারীর মেয়ে হাফসা বেগম জানান, তার বাবাকে চাপা দিয়ে হত্যা করা সেই প্রাইভেটকারের মালিক মিজানুর রহমান হলেও কাগজে-কলমে ছিলেন আরেকজন।

তার এমন কথার সূত্র ধরে পুলিশ ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পিবিআইয়ের ইন্সপেক্টর মিজানুর রহমান সেই প্রাইভেটকারটি ২০২১ সালে কিনেছিলেন। যার কাছ থেকে কিনেছিলেন সেই ব্যক্তির নাম লুৎফর রহমান। গাড়ি নেওয়া হলেও গাড়ির মালিকানার কাগজ পরিবর্তন করা হয়নি। এছাড়া সেই প্রাইভেটকারটি যে চালক চালাতেন তার কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না। তিন মাস আগে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তার আগে আরও একজন চালক ছিল।

Newsপুলিশের আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, গাড়িটি বছরখানেক আগে কেনা হয়েছিল কিন্তু সেটির কাগজপত্রের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হলেও সেটি আর নবায়ন করা হয়নি। গাড়ির সামনে ‘পুলিশ স্টিকার’ ঝুলিয়ে বিভিন্ন এলাকা দাপিয়ে বেড়াতো এই গাড়িটি।

ঘটনার পর থেকে সেই গাড়িটা মোহাম্মদপুর থানায় রাখা হয়েছে। তবে সেটি রেজিস্ট্রেশন ইন্সপেক্টর মিজানুর রহমান নামে নেই। রয়েছে লুৎফর রহমান নামে এক ব্যক্তির নামে। যিনি বছরখানেক আগে এই গাড়িটির মালিক ছিলেন। এই লুৎফর রহমানের কাছ থেকেই মিজানুর রহমান পুরনো গাড়িটি কিনেছিলেন।

>> আরও পড়ুন: চারদিনেও সেই গাড়ির মালিকের পরিচয় পায়নি পুলিশ!

রমনা বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের এসি আজিজুল হক ঢাকা মেইলের কাছে সেই গাড়ির লাইসেন্স না থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, বিষয়টি জানার পর তারা জোরালোভাবে তদন্ত করছেন। লাইসেন্স না থাকার কারণে ইন্সপেক্টর মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান।

Newsপ্রতিবেশী কয়েকজন বলছেন, ইন্সপেক্টর মিজানুর রহমান সেই প্রাইভেটকারে পুলিশ স্টিকার লাগিয়ে বিভিন্ন জায়গায় চালকের মাধ্যমে ঘুরে বেড়াতেন। সর্বশেষ যে চালককে নিয়োগ দিয়েছিলেন তিনি সেই চালকের লাইসেন্স ছিল না এবং তিনি একটি ট্রাক লরি চালাতেন।

নিহত ইউনূসের মেয়ে হাফসা বেগমের জামাই মনজুরুল হক ঢাকা মেইলকে বলেন, তিনি আমাদের সাথে কোনো ধরনের সহযোগিতার মনোভাব দেখান নেই। এমনকি নিহতের পরিবারের কাছে ফোন করে শেষ খবরটুকুও নেননি। অথচ তিনি এই গাড়ির মালিক। তবে আমরা শুনেছি সেই গাড়ির মালিক তিনি হলেও কাগজে তার নাম নেই।

এমআইকে/জেএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর