রোববার, ৫ মে, ২০২৪, ঢাকা

ঢাকার বায়ুর মান এতো নিচে নামল কেন?

ঢাকা মেইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:১৭ এএম

শেয়ার করুন:

ঢাকার বায়ুর মান এতো নিচে নামল কেন?

বায়ুদূষণে প্রায় শীর্ষ অবস্থানে নাম আসছে বাংলাদেশের রাজধানীর। বিশ্বে দূষিত শহরের তালিকায় কখনো প্রথম, কখনো দ্বিতীয়, আবার কখনো শীর্ষ দশে আসছে ঢাকার নাম, যা নগরবাসীর জন্য চরম হতাশার। বিশেষ করে নতুন বছর শুরুর মাসটি কেটেছে অস্বস্তির মধ্যে। জানুয়ারিতে প্রায় পুরো মাসেই দূষিত শহরের তালিকায় ছিল ঢাকার নাম।

সুইজারল্যান্ডের বায়ু দূষণ পর্যবেক্ষক সংস্থা একিউএয়ারের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বায়ুদুষণে ঢাকার নাম ছিল একেবারে খারাপ অবস্থানে।


বিজ্ঞাপন


বছর শুরুর মাসটিতে একদিনও নির্মল বাতাস পায়নি ঢাকাবাসী৷ বরং বেশ কয়েকদিন ঢাকার বায়ুমান ছিল চরম অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে৷ এর সঙ্গে বিষাক্ত প্লাস্টিকের কনা যুক্ত হওয়ায় তা আরও উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

এমন অবস্থায় প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে ঢাকার বায়ুর মান এতো নিচে নেমে গেল কেন? নিঃশ্বাসের সঙ্গে দূষিত বায়ু নেওয়ার ফলে কী ধরনের সমস্যা হচ্ছে? এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণেরই বা পথ কী?

একিউএয়ারের তথ্যমতে, গত ৫ জানুয়ারি ঢাকার বায়ুমান ১৫৭ একিউআই সূচকে পৌঁছালেও ১৮ থেকে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত টানা ৬ দিন এই মান ছিল ২০০-এর কাছাকাছি৷ এর মধ্যে ২২ জানুয়ারি সর্বোচ্চ ২৭৯-তে পৌঁছায়৷ এরপর ২৪ জানুয়ারি বৃষ্টি শুরু হলে ঢাকার একিউআই-ও কিছুটা কমে আসে৷ তারপরও এই বায়ুমান ১৭০-এর নিচে নামেনি৷ অর্থাৎ বৃষ্টি সত্ত্বেও ঢাকার বায়ুমান এক দিনের জন্যও স্বাস্থ্যকর অবস্থায় ফিরে আসেনি৷

আরও পড়ুন: বায়ু দূষণে কমছে আয়ু


বিজ্ঞাপন


বায়ুমানের ক্ষেত্রে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেস্ক তথা একিউআইয়ের মান ৫০ পর্যন্ত হলে তাকে স্বাস্থ্যকর বায়ু বলা হয়৷ ৫১ থেকে ১০০ পর্যন্ত থাকলে তা গ্রহণযোগ্য পর্যায়ের ধরা হয় যদিও ব্যাক্তি বিশেষে তা ক্ষতির কারণ হতে পারে৷ ১০১ থেকে ১৫০ পর্যন্ত মাত্রাকে বলা হয় অরেঞ্জ লেভেল যা সাধারণ মানুষের জন্য খুব একটা ক্ষতিকর না হলেও কারও কারও স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে৷  ১৫০ থেকে ২০০ পর্যন্ত থাকলে তা অস্বাস্থ্যকর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়৷ আর এই মান ২০০ থেকে ৩০০ পর্যন্ত চরম অস্বাস্থ্যকর৷ আর একিউআই ৩০০-এর বেশি হলে সেটিকে বিপর্যয়কর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়৷

সে হিসেবে ঢাকার বায়ুর মান জানুয়ারি মাসে কোনোদিনই ১৫০-এর নিচে নামেনি৷ অর্থাৎ স্বাস্থ্যকর বায়ু পায়নি রাজধানী শহরে বাসিন্দারা৷

এমন অবস্থায় প্রশ্ন দাঁড়ায় ঢাকার বায়ুর মান এতো নিচে নেমে গেল কেন? নিঃশ্বাসের সঙ্গে দূষিত বায়ু নেওয়ার ফলে কী ধরনের সমস্যা হচ্ছে? এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথই বা কী?

dhaka-1

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং বায়ুমান গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপসের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘মূলত তিনটি কারণে জানুয়ারি মাসে ঢাকার বায়ুমান খুব খারাপ অবস্থায় ছিল৷ প্রথমত, গত ডিসেম্বরে মেট্টোরেলের উদ্বোধনের কারণে নির্মাণকাজ বন্ধ ছিল৷ ফলে গত ৭ বছরের মধ্যে ডিসেম্বরে বায়ু মান সবচেয়ে ভালো ছিল৷ খোড়াখুঁড়ির কাজও ওই সময় বন্ধ ছিল৷ জানুয়ারির শুরুতে এগুলোর অনুমোদন দেওয়া হয়৷ ফলে ১০০টি জায়গায় খোড়াখুঁড়ি শুরু হয়েছে।’

দ্বিতীয় কারণ হিসেবে কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘আমরা জানি শুষ্ক মৌসুম শুরু হলে বায়ুদূষণ বাড়ে৷ ডিসেম্বরে উল্টো গরম পড়েছে৷ জানুয়ারির শুরু থেকে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে৷ এতে প্রতিবেশী দেশ থেকে দূষিত বাতাস এসেছে৷ পাশাপাশি খোড়াখুঁড়ির কারণে যে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সেটাও নেওয়া হয়নি।’

আরও পড়ুন: আপনারা কি আমাদের মেরে ফেলবেন, বায়ু দূষণ প্রসঙ্গে হাইকোর্ট

তৃতীয় কারণ হিসেবে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, জানুয়ারিতে বাতাসের গতিবেগ ছিল ১২ কিলোমিটারের মতো৷ ফলে দূষিত বায়ু নিম্নস্তর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে৷ ফলে নগরবাসীকে পুরো মাস জুড়েই দূষিত বায়ু গ্রহণ করতে হয়েছে৷

গত বছর বাপার এক গবেষণায়ও বলা হয়েছে, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে গড় বায়ু দূষণের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ৷ বায়ুমান গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপসের ২০১৬ সাল থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত বায়ুমান সূচক (একিউআই) বিশ্লেষণ করে এই তথ্য জানিয়েছে তারা৷

গবেষণায় বলা হয়েছে, সাধারণত শীতের মৌসুমে গড় বায়ুমান সূচক বাড়তে দেখা যায়৷ জুন ও জুলাইয়ে বায়ু দূষণ কমে আসে৷ শীতকাল অপেক্ষাকৃত শুষ্ক ঋতু হওয়ায় এই সময়ে ধুলাবালির পরিমাণও বেড়ে যায়৷ এর সঙ্গে ইটের ভাটা ও সিমেন্ট কারখানা থেকে উৎপন্ন ধুলার মিশ্রণ ঘটলে বায়ু দূষণ বাড়ে৷ শীতে আর্দ্রতা কম থাকায় এই সময়ে বাতাসে অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণাগুলোর উপস্থিতিও বেড়ে যায়৷

Dhaka-2

ঢাকায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের বায়ু পর্যবেক্ষণ হিসাব বলছে, ২৬ জানুয়ারি সব রেকর্ড ভেঙে বিপজ্জনক অবস্থায় পৌঁছায় ঢাকার বায়ুমান৷ বায়ুদূষণ পরিমাপক সংস্থা এইকিউএয়ারের দূষণ সূচক ৩০০ ছাড়ালেই যেখানে পরিস্থিতকে বিপর্যয়কর ধরা হয়, সেখানে এদিন ঢাকার বায়ুতে এই সূচক ৪৫৬ পর্যন্ত উঠে যায়৷

এত দূষণের মধ্যে পরিবেশ অধিদফতর কী করছে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক (বায়ূমান) জিয়াউল হক বলেন, ‘আমরাও কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছি৷ তবে উদ্যোগগুলো সমন্বিত না হওয়ার কারণে ফল পাওয়া যাচ্ছে না৷ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক জায়গায় পৌঁছার কারণে মন্ত্রপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি করা হয়েছে৷ গত বৃহস্পতিবার এই কমিটির বৈঠকও হয়েছে৷ খুব শিগগিরই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।’

আরও পড়ুন: বায়ু দূষণে হুমকির মুখে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য

এতদিন কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? জানতে চাইলে জিয়াউল হক বলেন, ‘২০১৯ সালে আমরা মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে মেট্টোরেল কর্তৃপক্ষকে ১২ লাখ টাকা জরিমানা করেছিলাম৷ এর মধ্যেও কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ পাশাপাশি অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠান যেগুলো আছে, তাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে৷ যেমন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, বিআরটিএ তাদেরও পদক্ষেপ নিতে হবে৷ এখন সেই সমন্বিত উদ্যোগটা নেওয়া হয়েছে।’-সূত্র: ডয়েচে ভেলে।

এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর