বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

দূষণে কমছে সন্তান জন্মদান ক্ষমতাও

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:৫৭ এএম

শেয়ার করুন:

দূষণে কমছে সন্তান জন্মদান ক্ষমতাও

মেগাসিটি ঢাকা দীর্ঘদিন ধরে ভুগছে বায়ু দূষণে। এর বাতাসের গুণগত মান সাধারণত শীতকালে অস্বাস্থ্যকর হয়ে যায় এবং বর্ষাকালে কিছুটা উন্নত হয়। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে পরিবেশ অধিদফতর ও বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকার বায়ু দূষণের তিনটি প্রধান উৎস হলো- ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণ সাইটের ধুলা। শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে নির্মাণ কাজ, রাস্তার ধুলা ও অন্যান্য উৎস থেকে দূষিত কণার ব্যাপক নিঃসরণের কারণে ঢাকা শহরের বাতাসের গুণগত মান দ্রুত খারাপ হতে শুরু করে। গত সপ্তাহের সাতদিন টানা দূষণের শীর্ষে ছিল ঢাকা।

এই ব্যাপক বায়ু দূষণের ফলে ক্ষতি হচ্ছে আমাদের স্বাস্থ্য‌ের। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ ও সম্পদ। এমনকি বায়ু দূষণের কারণে আমাদের সন্তান জন্মদান ক্ষমতাও কমে যাচ্ছে।


বিজ্ঞাপন


জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলছেন, বায়ু দূষণের কারণে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে বাংলাদেশের মানুষ। একদিকে নানা রোগে বাড়ছে মৃত্যু, অন্যদিকে কমে যাচ্ছে সন্তান জন্মদান ক্ষমতা। অনেক দম্পতি একটি সন্তানের জন্য হাহাকার করছে। এর পেছনে বায়ু দূষণও অন্যতম একটি কারণ।

তিনি বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে শুধু বায়ু দূষণের কারণে মানুষের গড় আয়ু সাত বছর কমে যাচ্ছে। প্রতি বছর ৭৮ থেকে ৮৮ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। ব্রেইন স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, স্মৃতিশক্তি লোপ, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, ব্যক্তিত্বের অবনমনসহ নানা শারীরিক ও মানসিক সমস্যার জন্য দায়ী বায়ু দূষণ। গড় আয়ু বাড়লেও জীবনের বড় একটা সময় হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করে পার করতে হচ্ছে। বায়ুদূষণের কারণে সংক্রামক-অসংক্রামক দুই ধরনের রোগই বাড়ছে। এর প্রথম প্রভাব শুরু হয় শ্বাসতন্ত্রের রোগ দিয়ে। হাঁচি, কাশি, সর্দি, শ্বাসের টান বা হাঁপানি, অ্যালার্জিক কফ, অ্যালার্জিক অ্যাজমা, নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা, ফুসফুস ক্যান্সারের মতো রোগগুলো হয়। অন্যদিকে বায়ুতে ভাসমান ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তুকণা (পিএম ২.৫) শ্বাসতন্ত্র দিয়ে রক্তস্রোতে মিশে গিয়ে লিভার, কিডনিসহ বিপাক প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি করে। ফলে কিডনি বিকল, লিভার বিকলসহ নানা জাতীয় ক্যান্সার বাড়ছে।

>> আরও পড়ুন: স্কুলপাড়ায় ধুলার রাজত্ব

ডা. লেলিন বলেন, কয়েক বছর ধরে বায়ু দূষণ বাংলাদেশে অন্যতম একটি সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আমরা দেখছি শীতকালে যখন বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায়, তখন ঢাকাসহ দেশের প্রায় সবগুলো নগরীতে বায়ু দূষণের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। বিশ্বের সর্বাধিক দূষিত নগরীর তালিকায় এক থেকে চারের মধ্যে থাকে ঢাকা। বায়ু দূষণজনিত কারণে রোগাক্রান্ত হয়ে কত টাকা খরচ করি, স্বাস্থ্য খাতে খরচ কতটা বাড়ছে তার একটা হিসাব হওয়া দরকার। একই সঙ্গে দূষণের কারণে জাতীয়ভাবে প্রতি বছর কত বিলিয়ন শ্রমঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে সেটারও হিসাব হওয়া দরকার। তাহলে বোঝা যাবে গড় আয়ুর কতটা সময় মানুষ রোগী হিসেবে পার করছে, আর কতটা অংশ ভোগ করতে পারছে।


বিজ্ঞাপন


এদিকে রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় বায়ু দূষণের মাত্রা উদ্বেগজনক পর্যায়ে গেলেও দূষণ নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উদ্যোগের অভাব রয়েছে বলে মনে করে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (আইপিডি)। তারা মনে করে, উন্নয়নকাজে পরিবেশ সমুন্নত রেখেই উন্নয়নের কৌশল ঠিক করা প্রয়োজন। নগর এলাকাসহ সারা দেশে অবকাঠামো নির্মাণসহ যাবতীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যথাযথভাবে বায়ু দূষণ রোধে প্রয়োজনীয় তদারকি ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও বায়ু দূষণবিষয়ক গবেষক ড. আবদুস সালাম বলেছেন, শুধু ঢাকা নয়, বর্তমানে সারা দেশই ভয়াবহ বায়ুদূষণের কবলে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবগুলো দেশে দূষণ বাড়ছে। তার মধ্যে বাংলাদেশে দূষণ সবচেয়ে বেশি। আর মাত্রাতিরিক্ত যানবাহন, যানজট, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, শিল্প-কারখানার দূষণ, নির্মাণবিধি না মেনে নির্মাণকাজ, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও চারপাশ ঘিরে থাকা ইটভাটার কারণে ঢাকার বাতাস সবচেয়ে দূষিত। সন্ধ্যার পর কখনো কখনো বাতাসে দূষণ উপাদান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেঁধে দেওয়া সীমার চেয়ে ৩৬ গুণ পর্যন্ত বেড়ে যাচ্ছে।

>> আরও পড়ুন: ধুলার রাজ্যে অসহায় রাজধানীবাসী

তিনি আরও বলেন, বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছি ভোলার বাতাসেও দূষণমাত্রা ভয়াবহ। রাজশাহীতে যন্ত্র বসিয়েছি। সেখানেও দূষণ বিপজ্জনক পর্যায়ে। এ দূষণের পেছনে আমাদের অভ্যন্তরীণ কারণ যেমন আছে, কিছু দূষণ শীতকালে উত্তরের বাতাসের সঙ্গে সীমান্তের ওপার থেকে আসছে। অধিক কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, দ্রুত ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে অবকাঠামো নির্মাণ এবং নগরায়ণের কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবগুলো দেশই দূষণের কবলে।

ড. সালাম বলেন, বৃষ্টিপাত না থাকায় নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার মাস দূষণ বাড়তেই থাকে। ইটভাটাগুলোও শীতকালে চলে। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, বিভিন্ন নির্মাণকাজ, ট্রাফিক জ্যাম তো আছেই। এসব নিয়ে অনেক দিন ধরেই কথা বলছি। দূষণের উৎস বন্ধ করতে আইন আছে। আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করলে দূষণ কমে আসবে।

ডব্লিউএইচ/জেএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর