শনিবার, ৪ মে, ২০২৪, ঢাকা

দাম বাড়লেও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিয়ে শঙ্কা

মুহা. তারিক আবেদীন ইমন
প্রকাশিত: ১৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯:৫৫ এএম

শেয়ার করুন:

দাম বাড়লেও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিয়ে শঙ্কা
ফাইল ছবি

আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। গত ৮ জানুয়ারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গণশুনানি করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। কোনো পক্ষের কোনো বক্তব্য বা সম্পুরক কাগজপত্র থাকলে তা ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সেই সুযোগও দেওয়া হয়নি। গণশুনানির মাত্র ৪ দিনের মাথায় তড়িঘড়ি করেই বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সরকারের নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির এই ঘোষণা দেয় বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। যা কার্যকর হবে চলতি মাস (১ জানুয়ারি) থেকেই। এই নিয়ে গত ১৪ বছরে ১১ বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


এদিকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলেও বাড়ছে না বিদ্যুৎ উৎপাদন। ফলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। বিশেষ করে শিল্প মালিকরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে উদ্বিগ্ন।

আরও পড়ুন: একান্ন বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে ৫১ গুণ

বৃহস্পতিবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে ৫ শতাংশ হারে। এর মধ্যে গৃহস্থালির খুচরা বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত ৩ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩ টাকা ৯৪ পয়সা করা হয়েছে। সাধারণ গ্রাহকের ক্ষেত্রে ০ থেকে ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত ৪ টাকা ১৯ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪ টাকা ৪০ পয়সা করা হয়েছে। ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত ৫ টাকা ৭২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ১ পয়সা, ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত ৬ টাকা থেকে ৬ টাকা ৩০ পয়সা করা হয়েছে। ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত ৬ টাকা ৩৪ পয়সা থেকে ৬ টাকা ৬৬ পয়সা, ৪০১ থেকে ৬০০ পর্যন্ত ইউনিট ৯ টাকা ৯৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১০ টাকা ৪৪ পয়সা করা হয়েছে। ষষ্ঠ ধাপে ৬০০ ইউনিটের ঊর্ধ্বে ১১ টাকা ৪৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা ৩ পয়সা করা হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: গ্রাহক পর্যায়ে কত বাড়ল বিদ্যুতের দাম?

গৃহস্থালির পাশাপাশি দাম বেড়েছে কৃষি সেচ, শিল্প এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও। নতুন দাম অনুযায়ী, কৃষিতে ইউনিটপ্রতি ৭ টাকা ১৬ পয়সা থেকে বেড়ে ৭ টাকা ৩৭ পয়সা হয়েছে।

power1

ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য ৮ টাকা ৫৩ পয়সা বাড়িয়ে ৮ টাকা ৯৬ পয়সা, অফপিকে ৭ টাকা ৬৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা ৬ পয়সা এবং পিক আওয়ারে ১০ টাকা ২৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১০ টাকা ৭৫ পয়সা হয়েছে। নির্মাণে ১২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা ৬০ পয়সা; ধর্মীয়, শিক্ষা এবং দাতব্য প্রতিষ্ঠানে ৬ টাকা ২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৩২ পয়সা, রাস্তার বাতি ও পানির পাম্প ৭ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা ৯ পয়সা করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি

বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ফ্ল্যাট রেট ইউনিটপ্রতি ১০ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১০ টাকা ৮২ পয়সা, অফপিকে ৯ টাকা ২৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৯ টাকা ৭৩ পয়সা এবং পিকে ১২ টাকা ৩৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা ৯৮ পয়সা হয়েছে। ইলেকট্রিক যানের ব্যাটারি চার্জ দিতে ফ্ল্যাট রেট ৮ টাকা ২ পয়সা, অফপিক ৭ টাকা ২২ পয়সা, সুপার অফপিক ৬ টাকা ৪২ পয়সা এবং পিকে ১০ টাকা ৩ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এভাবে মাঝারি, বড়, ভারী শিল্প, বাণিজ্যিকসহ সব খাতে গড়ে ৫ শতাংশ হারে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে ডিমান্ড চার্জ বেড়েছে প্রায় সব খাতে।

দাম বাড়ানো হলেও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ যে অনিশ্চিত সেটা গণশুনানিতে পরিষ্কার করে কোম্পানিগুলো। শুনানিতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রতি টন কয়লার দাম ২৩০ ডলার এবং প্রতি লিটার ফার্নেস অয়েলের দাম ৭০ টাকা হলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়ার ক্ষেত্রে ৪০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি প্রয়োজন হবে। কিন্তু বিইআরসি পাইকারি মূল্য বৃদ্ধিতে ১৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি নির্ধারণ করে দিয়েছে। কাজেই এই মূল্য কাঠামো ধরে দাম বাড়ানো হলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব হবে না।

আরও পড়ুন: বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি নিয়ে যা বললেন প্রতিমন্ত্রী

এ বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ঢাকা মেইলকে বলেন, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কয়েক ধরনের প্রতিক্রিয়া হবে। একটা হলো ভোক্তা পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধির ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। সাধারণ মানুষকে বাড়তি বিদ্যুতের বিল যেমন দেওয়ার লাগবে, তেমনি বাড়তি মূল্যে পণ্য ক্রয় করতে হবে। এতে সাধারণ মানুষের ব্যয় আরও কিছুটা বৃদ্ধি পাবে। যা ইতিমধ্যে অসহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। আরেকটা বিষয় হলো, এর ফলে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। কৃষি ক্ষেত্রে সেচ খরচ বৃদ্ধি পাবে। সেটা ধান ও অন্যান্য ফসল উৎপাদনে প্রভাব ফেলবে। শিল্প উৎপাদনের ক্ষেত্রেও বিদ্যুতের বিল বেড়ে যাবে। এর ফলে সরকারকে ভর্তুকি হয়তো কিছুটা কম দিতে হবে। আইএমএফের সাথে আলোচনার বিষয় থাকার কারণেই হয়তো এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও আমাদের কাছে মনে হয়েছে যে ভর্তুকি কমানোর জন্য ভোক্তার ওপর বিদ্যুতের বিল না চাপিয়ে বরং ক্যাপাসিটি চার্জ, পেমেন্টের মতো বিষয়গুলোতে আরও জোর দেওয়া দরকার ছিল। তাহলে আরও বেশি লাভ হতো। ভর্তুকি কমানো যেত।

power2

বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হলেও বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির কোনো সুযোগ নেই জানিয়ে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, সব থেকে বড় বিষয় হচ্ছে বিদ্যুৎ বিল বাড়ানোর ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির কোনো সুযোগ নেই। ভোক্তা বেশি বিল দেবে ঠিকই। কিন্তু লোডশেডিং অব্যাহতই থাকবে। সেখানে খুব বেশি উন্নতি হবে বলে মনে হয় না। নিরবচ্ছিন্ন তো দূরের কথা, জ্বালানি আমদানিতে যে ঘাটতি সেই সমস্যার সমাধান বিদ্যুতের মূল্য বাড়িয়ে হবে না। কেননা বিদ্যুৎ আমদানির জন্য ডলার দরকার, টাকা নয়। বরং সেই জায়গায় একটা ঘাটতি থেকেই যাবে।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম ঢাকা মেইলকে বলেন, জ্বালানি সঙ্কটের কারণে সারা বিশ্বই এখন ভিন্ন চিন্তা করছে। ২০২৩ সালকে মূল্যস্ফীতি চ্যালেঞ্জের বছর মনে করা হচ্ছে। শুনানিতে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, দাম বাড়ালেও তারা উৎপাদন বাড়াতে পারবে না। সে রকম একটি সময়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো চরম নেতিবাচক অবস্থা তৈরি করতে পারে। এতে সরকারের ক্ষতি হতে পারে। এটি মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি জনগণের কষ্ট বাড়িয়ে দেবে।

টিএই/জেএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর