বৃহস্পতিবার, ২ মে, ২০২৪, ঢাকা

ইভিএম নিয়ে ‘দোটানায়’ ইসি

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ১০ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:০২ পিএম

শেয়ার করুন:

ইভিএম নিয়ে ‘দোটানায়’ ইসি
ফাইল ছবি

চলমান অর্থনৈতিক মন্দা এবং বিএনপিসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের বিরোধিতার মধ্যেই সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) আগামী জাতীয় নির্বাচন করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু এখনও ইভিএম কেনার প্রস্তাবে এখনও সরকারের সায় না পাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে ইসি দোটানায় পড়েছে। ইসি বলছে, চলতি মাসের (জানুয়ারি) মাঝামাঝির মধ্যে ইভিএম কেনার প্রকল্প পাশ না হলে তারা সমস্যায় পড়বেন। এমনকি শেষ পর্যন্ত ইভিএম থেকে সরে এসে ব্যালটে ভোট আয়োজন করবে ইসি- এমন গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে।

একজন কমিশনার এ বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্যও দিয়েছেন। রোববার (৮ জানুয়ারি) নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা বলেছেন, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ইভিএমের নতুন প্রকল্প পাস না হলে আমাদের ব্যালটেই যেতে হবে। পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারাও বলছেন, ইসির প্রত্যাশিত সময়ে ইভিএম প্রকল্প পাস হওয়ার সম্ভাবনা কম।


বিজ্ঞাপন


Election Commissionযদিও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান দ্রুত সময়ের মধ্যে ইভিএম প্রকল্প অনুমোদন করা হবে বলে জানিয়েছেন। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের মন্ত্রী বলেছেন, যত দ্রুত সম্ভব ইভিএম কেনার প্রকল্প অনুমোদন করা হবে।

এদিকে ইভিএমের প্রকল্প নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য নাসিমা বেগম বলেছেন, কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে প্রকল্প প্রস্তাবটি নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়েছি। সেটি সংশোধন করে নির্বাচন কমিশন এখনও আমাদের কাছে পাঠায়নি।

কী আছে ইসির ইভিএম প্রকল্পের প্রস্তাবে?

নির্বাচন কমিশন সূত্র বলছে, ইসির হাতে দেড় লাখের মতো ইভিএম আছে। এক দিনে ১৫০ আসনে ভোট করতে হলে আরও প্রায় ২ লাখ ইভিএম প্রয়োজন। নতুন এই ইভিএম কেনার জন্য গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প চূড়ান্ত করে কমিশন। পরে অনুমোদনের জন্য তা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়।


বিজ্ঞাপন


নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানিয়েছেন, প্রকল্পের আওতায় দুই লাখ ইভিএম কেনা হবে। এ ছাড়া ইভিএম সংরক্ষণে জনবল তৈরি ও প্রশিক্ষণের ব্যয়ও এখানে রাখা হয়েছে।

ইসির প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রতিটি ইভিএম কেনার দাম ধরা হয়েছে তিন লাখ ৩৩ হাজার টাকা। ফলে শুধু ইভিএম কেনায় খরচ হবে ৬ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। এছাড়া ইভিএম সেন্টার স্থাপন, অঞ্চলভিত্তিক ওয়্যারহাউজ নির্মাণ, ইভিএম সংরক্ষণ ও পরিবহনে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় খরচ হবে ৬৯০ কোটি টাকা।

ইসির প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে যাওয়ার পর তাতে ব্যয় কমানোর পরামর্শ দিয়ে গত নভেম্বরে ফেরত পাঠানো হয়। তবে কোন খাতে কত টাকা কমাতে বলেছে তা জানা যায়নি।

এদিকে ইসি সূত্রে জানা গেছে, ইভিএম প্রকল্পের জন্য লোকবল ১ হাজার ৩০০ জন চাওয়া হলেও মাত্র ১৩ জন দেয়ার ব্যাপারে মত দেয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে এই খাতে বড় অংকের টাকা কমে আসবে।

>> আরও পড়ুন: ভোটে ইভিএম ব্যবহারে আট যুক্তি ইসির

জানা গেছে, অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে প্রশাসনিক খরচ, গাড়ি ক্রয়, ভূমি অধিগ্রহণ ও গুদাম নির্মাণে রাজি নয় পরিকল্পনা কমিশন। সব মিলিয়ে অনেকটা অনিশ্চয়তায় পড়েছে ইভিএম কেনার এই প্রকল্প।

ইসির প্রস্তাবের সবশেষ অবস্থা কি?

পরিকল্পনামন্ত্রী দ্রুত সময়ের মধ্যে ইভিএম প্রকল্প অনুমোদনের কথা বললেও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে এ বিষয়ে ফয়সালা চাওয়া হয়। অন্যথায় পরিকল্পনা মাফিক কাজ করা অসম্ভব হবে বলে প্রকাশ্যেই বলছে ইসি।

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারাও বলছেন, তারা ইসিতে পাঠানো ব্যয় কমানোর প্রস্তাব ফেরত পাননি। ফাইল ফেরত পাওয়ার পর অনুমোদনের আগের প্রক্রিয়া শেষ করতে কিছুটা হলেও সময় লাগবে। আপাতত প্রস্তাবটি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) রয়েছে।

EVMইভিএমের দায়িত্বে থাকা পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের যুগ্ম প্রধান আবদুর রউফ ঢাকা মেইলকে বলেন, কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে আমরা প্রকল্পটি ফেরত পাঠিয়েছি। সেগুলো সংশোধন হয়ে এখনও আসেনি। ফেরত এলে সেটার ওপর মূল্যায়ন কমিটির সভা করব। সন্তোষজনক হলে প্রস্তাবটি একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।

অবশ্য ইসি সূত্রে জানা গেছে, পরিকল্পনা কমিশন থেকে যে পরামর্শ দেয়া হয়েছিল সেগুলো সংশোধন করা হয়েছে।

যা বলছে ইসি

ইভিএম প্রকল্প নিয়ে সব কমিশনারই কথা বলেছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ইভিএমে সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ভোট করার সিদ্ধান্ত হলেও এটা নির্ভর করবে সরকারের প্রকল্প অনুমোদনের ওপর।

সম্প্রতি খুলনায় নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান বলেছেন, নতুন ইভিএম কেনার পর কোথায় রাখা হবে সেই জায়গা নেই। শুধু তাই নয়, নতুন ইভিএম দেখভালের জনবলও নেই ইসির।

>> আরও পড়ুন: ইভিএম নিয়ে দোটানার মধ্যেই নির্বাচনী রোডম্যাপ নিয়ে আসছে ইসি

নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেছেন, নির্বাচন কমিশন ইভিএম প্রকল্পে ১ হাজার ৩০০ জনবল চেয়েছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে মাত্র ১৩ জন দেয়ার বিষয়ে মত দেয়া হয়েছে। মাত্র ১৩ জন দিয়ে ইভিএমে ভোট পরিচালনা সম্ভব নয়। দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। ১৫ জানুয়ারির পর হলে খুবই কঠিন হবে ইভিএমে নেয়া।

জানা গেছে, ইসির পক্ষ থেকে ১৫ জানুয়ারির সময়সীমার কথা বলা হলেও তার আগে একনেকের কোনো সভা নেই। আগামী ১৭ জানুয়ারি একনেকের সভা হওয়ার কথা রয়েছে। ফলে ১৫ জানুয়ারির আগে ইভিএম প্রকল্প পাস হওয়ার সম্ভাবনা আপাতত নেই।

বিইউ/জেএম/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর