রোববার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ফারদিন হত্যা: বুশরার এলোমেলো তথ্য, রামপুরার পর আর মেলেনি ফুটেজ

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ১১ নভেম্বর ২০২২, ০৮:৫৯ এএম

শেয়ার করুন:

ফারদিন হত্যা: বুশরার এলোমেলো তথ্য, রামপুরার পর আর মেলেনি ফুটেজ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ (২৪) হত্যায় এখনো কারা জড়িত থাকতে পারে তা খুঁজে বের করতে পারেনি পুলিশ ও ডিবি। ফলে নিহতের বান্ধবী বুশরা ও তার মোবাইল ফোনের লোকেশনকে ঘিরে তদন্ত চলছে। 

যদিও বুশরাকে ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করে আবারও রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে। তবে পুলিশকে বুশরা একেক সময় একেক ধরনের তথ্য দিয়েছে। ফলে তার তথ্যগুলো এলোমেলো। পাশাপাশি বুশরাকে ফারদিন রামপুরায় নামিয়ে দিয়ে কোনদিকে গিয়েছিলেন তার ফুটেজ পাওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে বিষয়টি নিয়ে ঘোরে আছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। 


বিজ্ঞাপন


সন্দেহের তীর বুশরার দিকে
যতো সন্দেহ বুশরাকে ঘিরেই। ঘটনার পর নিহতের বাবা মামলা করার আগ থেকেই তাকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। বান্ধবী বুশরা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এছাড়াও আরও দুই বন্ধুকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বলেও জানা গেছে। 

রামপুরা থানা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বুশরাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় খুব স্বাভাবিক ছিল। তারা ফারদিনের মোবাইল নেটওয়ার্কের সূত্র ধরে লোকেশনগুলো নিয়ে কাজ করছেন। এ নিয়ে পুলিশ ছাড়াও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য কাজ করছে।

fardin

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফারদিন নূর পরশ নিখোঁজের পর তার বাবা রামপুরা থানার একটি সাধারাণ ডায়েরি করেন। সেই জিডির সূত্র ধরে পুলিশ তার সর্বশেষ অবস্থান বের করে। এরপর গত ৬ নভেম্বর রামপুরা থানায় নিয়ে আসে তার বান্ধবী আয়াতুল্লাহ বুশরাকে। সেখানে তাকে রেখে টানা ৫ থকে ৬ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু ওই সময়ে বুশরাকে বিষণ্ন দেখালেও তখন তার চোখ থেকে এক ফোটা পানিও ঝরেনি। আর এই মনস্তাত্ত্বিক সমীকরণটিই বেশি ভাবিয়ে তুলেছে তার বাবাকেসহ সংশ্লিষ্টদের।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: রামপুরা থানায় হত্যা মামলা করলেন ফারদিনের বাবা

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই হত্যাকাণ্ডে ফারদিনের কাছের বন্ধুদের সাথে তার কোনো পূর্ব শত্রুতা ছিল কিনা তা জানার চেষ্টা চলছে। এছাড়াও তার ফেসবুক ও ল্যাপটপের সূত্র ধরেও বিভিন্ন তথ্য জানার চেষ্টা করছেন তারা। এছাড়াও তাকে হত্যার পর নদীতে লাশ গুমের উদ্দেশে ভাসিয়ে দিয়েছিল হত্যাকারীরা। 

নিহতের বাবা যা বলছেন
বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) রাত সাড়ে আটটার দিকে নিহত বুয়েট ছাত্র ফারদিন নূর পরশের বাবা কাজী নুর উদ্দিন রানা ঢাকা মেইলকে বলেন, বুশরাকে নিয়ে সে বিভিন্ন্ জায়গায় ঘুরেছে। তাকে রামপুরায় নামিয়ে দিলো কিন্তু একটা ছেলের চব্বিশ ঘণ্টায়ও কোনো খোঁজ মিলল না। এতে তো তার কিছুটা আপসেট বা কান্নাকাটি করার দরকার। কিন্তু তার মাঝে কোনো ধরনের অনুশোচনাবোধ ছিল না।

fardin

তিনি আরও বলেন, একটি মানুষের সাথে তার ৫ বছরের সম্পর্ক কিন্তু তার নিখোঁজের খবর শুনে একটিবারও কাঁদল না! আমার ছেলে হত্যায় বুশরার হাত থাকতে পারে। তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক।
   
লোকেশন ঘিরেও তদন্ত চলছে
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রথম দিকে পরশের সন্ধান পেতে পুলিশ তার মোবাইল লোকেশনের তথ্য জানার চেষ্টা করে। তাতে দেখা যায়, ওই দিন পরশ তার বান্ধবী বুশরাকে নিয়ে ঢাবি, ধানমন্ডি ও রামপুরা এলাকায় ছিল। রামপুরার পর মোবাইল লোকেশন ছিল কেরানীগঞ্জ। তারপর থেকে তার আর কোনো হদিস ছিল না। 

নিহতের বাবা কাজী নুর উদ্দিন রানার দাবি, রাত দশটার দিকে বুশরাকে ফারদিন রিকশা থেকে রামপুরায় নামিয়ে দেয়। রাত দশটার পর ফারদিনের মোবাইলের লোকেশন কখনো কেরানীগঞ্জ, কখনো ধানমন্ডি এলাকায় শো করেছে।

আরও পড়ুন: পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বুয়েটছাত্র ফারদিনকে: দাবি পরিবারের

বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। তার সর্বশেষ লোকেশন ছিল গাজীপুরে। সেখান থেকে তার লাশ কিভাবে নদীতে এলো তা যাচাই করা হচ্ছে।

fardin

পুলিশ যা বলছে
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি)  মতিঝিল বিভাগের ডিসি রাজীব আল মাসুদ ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা এখনো বুশরাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারিনি। কিন্তু ছায়া তদন্ত করতে গিয়ে অনেক তথ্য পেয়েছি। সেসব তথ্য যাচাই চলছে। বুশরাকে রামপুরা থেকে নামিয়ে দেওয়ার পর  ফারদিন কোন দিকে গিয়েছিল তা জানা যায়নি। তবে সেখানের পর তার মোবাইল লোকেশন ছিল পুরান ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকায়। সে সেখানে কিভাবে গেল এটাও জানার চেষ্টা চলছে। 

রামপুরা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা বুশরাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি কিন্তু সে কিছু স্বীকার করেনি। জানিয়েছে তারা ওই দিন বিভিন্ন লোকেশনে রিকশায় ঘুরেছে। এরপর তাকে রামপুরায় নামিয়ে দেয়। এরপর থেকে নিখোঁজ ছিল পরশ। 

তিনি আরও বলেন, বুশরাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তার মন ভারি ছিল। তবে সে কান্নাকাটি করেনি। আর  রামপুরা থেকে ফারদিন সর্বশেষ কোথায় গিয়েছে তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। যেহেতু বিষয়টি নিয়ে এখন তদন্ত করছে ডিবি।

fardin

আরও পড়ুন: আসামিদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছেন ফারদিনের বাবা

গত শনিবার থেকে নিখোঁজ ছিলেন বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ। নিখোঁজের বিষয়টি উল্লেখ করে ওইদিন রাজধানীর রামপুরা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার বাবা নূর উদ্দিন। নিখোঁজের দুদিন পর সোমবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে ফারদিন নূর পরশের মরদেহ মেলে। 

ফারদিনের মরদেহ ময়নাতদন্ত করা চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। সর্বশেষ বুধবার মধ্যরাতে নিহতের বাবা বাদী হয়ে রামপুরা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। সেই মামলায় বৃহস্পতিবার নিহতের বান্ধবী বুশরাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। পরে পুলিশ তাকে রিমান্ড মঞ্জুর করে। 

এমআইকে/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর