সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

প্রশাসনে সহসায় কাটছে না অবসর ‘আতঙ্ক’

তানভীর আহমেদ
প্রকাশিত: ২৭ অক্টোবর ২০২২, ০৮:৪০ এএম

শেয়ার করুন:

প্রশাসনে সহসায় কাটছে না অবসর ‘আতঙ্ক’

চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো নিয়ে প্রশাসনে চলছে একধরনের আতঙ্ক। সম্প্রতি তথ্য সচিব ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন তিন কর্মকর্তার অবসরে পাঠনো নিয়ে সর্বত্র অবসর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তা আরও দীর্ঘ হবে বলে নানা গুঞ্জন চলছে সচিবালয়ে। ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ সময়ে হঠাৎ করেই প্রশাসনে অস্থিরতা বিরাজ করছে।

দুই দিনের ব্যবধানে একজন সচিব এবং তিনজন পুলিশ কর্মকর্তাকে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। হঠাৎ সরকারের এই শুদ্ধি অভিযানে প্রশাসনে চাপা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

গত ১৬ অক্টোবর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মকবুল হোসেনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় সরকার। এর দুই দিনের মাথায় ১৮ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে পুলিশ সুপার পদমর্যাদার তিন কর্মকর্তাকে চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই অবসরে পাঠানো হয়। তারা হলেন- পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) মীর্জা আবদুল্লাহেল বাকী ও মো. দেলোয়ার হোসেন মিঞা এবং পুলিশ সদর দফতরের এসপি (টিআর) মুহম্মদ শহীদুল্লাহ চৌধুরী।

আরও পড়ুন: তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মকবুল হোসেন অবসরে

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানায়, এসব ঘটনার পর কর্মকর্তারা বিশেষ করে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অনেকেই আতঙ্কে আছেন। আরও বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে এ ধরনের আলোচনা ও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আরও বড় পরিবর্তন আসতে পারে এমন আলোচনাও চলছে প্রশাসনে।

জানা গেছে, বাধ্যতামূলক অবসরের মাধ্যমে সবাই সরকারের নজরদারির মধ্যে আছেন। কোনো কর্মকর্তা সরকারের বিরুদ্ধে কোনো কিছু করার চেষ্টা করলে তাকে সরে যেতে হবে।

এদিকে, অবসরে পাঠানো এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী তৎপরতার অভিযোগ আসছে। এই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলো এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল কেউই মুখ খুলছেন না। যাদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে তারাও স্বীকার করছেন, সরকার চাইলে যে কাউকে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই অবসরে পাঠাতে পারে।

আরও পড়ুন: এবার তিন এসপিকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাল সরকার

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সরকারবিরোধী নানা কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সরকার শুদ্ধি অভিযান চালাচ্ছে। যাদের অভিযোগ গুরুতর তাদের বিরুদ্ধে ত্বরিত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অনেকের বিরুদ্ধেই পর্যায়ক্রমে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে সরকার মূলত গোটা প্রশাসনকে বার্তা দিতে চায়।

সংসদ নির্বাচনের বাকি আর সাড়ে ১৪ মাস। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। ভোটকে কেন্দ্র করে প্রশাসন ঢেলে সাজাতে নানা হিসেব-নিকেষ করছে সরকার। সেজন্য প্রশাসনের বদলি-পদায়নের বিষয়টি অনেকটা আলোচনায় এসেছে। কিছুদিন আগেও একযোগে ৪০ জেলার পুলিশ সুপার পদে বদলি করা হয়েছিল।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, প্রশাসনে এমন অনেক কর্মকর্তা আছেন যারা সর্বোচ্চ পদ ব্যবহার করে দুর্নীতি, বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। তাদের কারও কারও বিরুদ্ধে বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ার অভিযোগও রয়েছে। কাজেই বিভিন্ন মহল মনে করে- আমলারা ব্যাপক পরিমাণে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন, এ কারণেই প্রশাসনের ভূমিকা এবং স্বচ্ছতা নিয়ে নানা সময়ে প্রশ্ন উঠে। এর ফলশ্রুতিতেই এমন ‘শুদ্ধি অভিযানে’ নেমেছে সরকার।

আরও পড়ুন: জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব আখতার হোসেন অবসরে

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অতিরিক্ত সচিব জানান, কী কারণে এসব কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে তা জানি না। নতুন করে কখন কাকে আবার বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়, প্রশাসনে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সাবেক জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন জানান, এই ধরনের অবসরের মাধ্যমে আইনের কোনো ব্যত্যয় হচ্ছে না। আইন সরকারকে সেই সুযোগ দিয়েছে। এতে প্রশাসনে অস্থিরতারও কিছু নেই বলে মনে করেন তিনি।

টিএ/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর