শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

১৫ মিনিটে একই স্থানে দুই ছিনতাই!

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯:৩৭ পিএম

শেয়ার করুন:

১৫ মিনিটে একই স্থানে দুই ছিনতাই!
প্রতীকী ছবি

যশোর থেকে বাসে করে রাজধানীর গাবতলীতে এসে নামেন ফরাজী আহমেদ বুলবুল। এরপর তিনি রিকশায় করে মিরপুরের বাসার দিকে যাচ্ছিলেন। মিরপুর-১০ এলাকায় পৌঁছার পর কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার হাতে থেকে ল্যাপটপের ব্যাগটি ছোঁ মেরে নিয়ে যান এক যুবক। দ্রুত একটি মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যাওয়ায় তাকে ধরা যায়নি। তখন ঘড়ির কাটায় ভোর ৬টা।

অন্যদিকে মিরপুর-১০ নাম্বার মোড়ে থাকা ফুটওভারব্রিজ দিয়ে উপরে উঠছিলেন এক যুবক। সিঁড়ি বেয়ে কিছুটা উঠেছেনও। কিন্তু ওই মুহূর্তে তার হাতে কেউ একজন কোপ দিয়ে বসে। রক্ত ঝরতে থাকে হাত থেকে। এরপর তার হাতে থাকা মোবাইলটি ছিনিয়ে নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায় আগে থেকে লুকিয়ে থাকা এক ছিনতাইকারী।


বিজ্ঞাপন


রাজধানীর মিরপুর-১০ এলাকায় ছিনতাইয়ের এই দুটি ঘটনা ঘটে মাত্র ১৫ মিনিটের ব্যবধানে। বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) ভোরে ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া এই দুই ভুক্তভোগী মিরপুর থানায় পৃথকভাবে সাধারণ ডায়েরি করেছেন। কিন্তু এখনও পুলিশ কাউকে আটক বা গ্রেফতার করতে পারেনি। ভুক্তভোগী ও থানা পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

যশোর থেকে আসা ভুক্তভোগী বুলবুলের সাথে ঘটনাটি ঘটে মিরপুর-১০ এর ফায়ার সার্ভিস ভবন ও স্টেডিয়াম সড়কের মাঝপথে। ওই সময়ে সড়কে কোনো লোক ছিল না। ফলে তাকে বহনকারী রিকশার পেছন দিক থেকে এসে দ্রুতগতিতে তার হাতে থাকা ল্যাপটপটি নিয়ে পালিয়ে যায় দুই ছিনতাইকারী।

আরও পড়ুন: রাতের আঁধারে সড়কে পুলিশ পরিচয়ে দাপিয়ে বেড়ানো ওরা কারা?


বিজ্ঞাপন


বুলবুল জানান, ওই সময় তাদের মাথায় হেলমেট ছিল। তবে যারা যে মোটরসাইকেলে পালাচ্ছিল সেটির পেছনে নম্বর প্লেটও ছিল। তিনি ঢাকা মেইলকে বলছিলেন, ‘ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছি। নইলে তো আমাকে আহত হতে হতো। তবে এখনও ছিনতাই হওয়া ল্যাপটপটি পুলিশ উদ্ধার করতে পারেনি। বিষয়টি মিরপুর থানায় জানিয়েছি।’

বুলবুল যশোর জেলার দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে কর্মরত। তিনি ঢাকায় ব্যক্তিগত কাছে এসেছিলেন।

জানা গেছে, ভুক্তভোগী বুলবুলের ঘটনায় ডিবির প্রধানসহ পাঁচজন কর্মকর্তাকে কল করা হয়েছে। যাতে তারা বিষয়টি নজরে নিয়ে দ্রুত তার ল্যাপটপটি উদ্ধার করেন এবং জড়িত ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করতে পারেন। কিন্তু ঘটনার ৩৫ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনও কোনো আপডেট পাওয়া যায়নি। মিরপুর থানায় তার জিডি নং-১৮৭৮।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুলবুলের ঘটনার পরপর সেখানে আরও এক যুবক ছিনতাইয়ের শিকার হন। ওই যুবক যখন থানায় গিয়ে বিষয়টি জানাচ্ছিলেন তখন পুলিশ তাকে বারবার বলছিল, আপনি কেন ওভারব্রিজে উঠলেন। রাস্তা তো ফাঁকা ছিল। রাস্তা দিয়েই অপর প্রান্তে চলে যেতেন।

পুলিশ তাকে ওভারব্রিজ ব্যবহারে উৎসাহ না দিয়ে উল্টো ছিনতাইকারীর ভয় দেখিয়ে নিরুৎসাহিত করছিলেন বলে জানিয়েছে ওই সময়ে থানায় থাকা এক ভুক্তভোগী।

তবে মিরপুরে একই সাথে দুই ছিনতাইয়ের ঘটনায় পুলিশ মাঠে কাজ করছে এবং এখনও বুলবুলের সেই ছিনতাইকারীকে আটক বা গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের মিরপুর বিভাগের ডিসি জসীম উদ্দীন। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, বুলবুলের ল্যাপটপ ছিনতাইয়ের ঘটনায় কাজ চলছে। তবে একই জায়গায় দুটি ঘটনা সেটি আমার জানা নেই।

শুধু রাজধানীর মিরপুর নয়, শাপলাচত্বর, বাংলামোটর, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েট এলাকা, মোহাম্মদপুর, উত্তরা, মহাখালী, মগবাজার, কারওয়ানবাজার, বাংলামোটর, গ্রিনরোড এলাকায় প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।

সম্প্রতি ট্রেন থেকে নেমে সবেমাত্র বাসার দিকে যাচ্ছিলেন মিতুল রায় রনি দম্পতি। ওই সময় তার স্ত্রীর গলায় থাকা সোনার চেইন টান দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যেতে থাকে আরিফ নামে এক ছিনতাইকারী। পরে মিতুল তাকে ধাওয়া দেন। ওই সময় পাশেই ছিল র‌্যাবের একট টহল টিম। তারা এ দৃশ্য দেখতে পেয়ে দ্রুত ধাওয়া করে সেই ছিনতাইকারীকে ধরতে সক্ষম হয়। তবে এমন ঘটনা তো রাজধানীতে বিরল।

রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে প্রায়ই অভিযান চালিয়ে র‌্যাব ছিনতাইকারী গ্রুপের বিভিন্ন সদস্যকে গ্রেফতার করে। যদিও এদিক থেকে থানা পুলিশের ভূমিকা নেই বললেই চলে। তারা অভিযোগ পাওয়ার পর কিছুটা সক্রিয় হয়। অনেক ক্ষেত্রে গরজ না করার অভিযোগও আছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুন: সাফজয়ীদের লাগেজ থেকে অর্থ চুরি করল কারা?

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিরপুর এলাকার বিভিন্ন অলিগলি ও প্রধান সড়কগুলোতে এখন ছিনতাইয়ের মহোৎসব চলছে। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলেও অপরাধী ধরতে তেমন আগ্রহ নেই থানা পুলিশের।

ভুক্তভোগী ও নগরবাসী বলছে, এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। দুই একজন ভুক্তভোগীর অভিযোগ আমলে নেয় পুলিশ। তাও আবার সেটি যদি হয় পুলিশ কর্তা বা কোনো প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রী ও এমপির স্বজনের অভিযোগ। আর তা না হলে সেই অভিযোগ বছরের পর বছর পড়েই থাকছে থানার ফাইলে। ফলে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে ছিনতাইয়ের দৌরাত্ম বেড়েই চলেছে।

নেপথ্যের কারণ হিসেবে তারা আরও বলছেন, এই ছিনতাইকারীদের বেশিরভাগই ক্ষমতাসীন দল ও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এই অপকর্ম করে থাকে। বিষয়টি পুলিশও জানে, যা ওপেন সিক্রেট। এমনকি পুলিশও নিয়মিত মাসোহারা পায় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। গত কয়েক মাসে রাজধানীতে এমন ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে শতাধিক। ভুক্তভোগীরা বিচার পেয়েছেন এমন ঘটনা নেই বললেই চলে।

এমআইকে/জেবি

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর