শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

গ্যাসের জন্য হাহাকার

মুহা. তারিক আবেদীন ইমন
প্রকাশিত: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৬:৪৩ পিএম

শেয়ার করুন:

গ্যাসের জন্য হাহাকার
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র গ্যাস সংকট। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে শুরু করে দুপুর ৩টা পর্যন্ত একেবারেই গ্যাস পাচ্ছেন না এসব এলাকার মানুষ। তবে ৩টার পর গ্যাস আসলেও তা একেবারেই সীমিত। আগে এলাকাভিত্তিক সংকট থাকলেও এখন পুরো রাজধানীজুড়ে এই সমস্যা দেখা দেখা দিয়েছে। ফলে গ্যাস না থাকায় নাকাল জীবনযাপন করতে হচ্ছে নগরবাসীকে।

এতদিন রাজধানীর মালিবাগ, বাসাবো, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, মুগদা, মান্ডা, মানিক নগর, জুরাইন, কামরাঙ্গীরচর এলাকায় গ্যাস সংকট ছিল নিয়মিত সমস্যা। যেখানে শীতকালে এই সংকট বেশি দেখা দিত। তবে সম্প্রতি নগরের মগবাজার, ইস্কাটন, গুলশানসহ অনেক অভিজাত এলাকাতেও গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সবমিলিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।


বিজ্ঞাপন


এসব এলাকার অধিকাংশ ভুক্তভোগীর ভাষ্য- সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৩-৪টা পর্যন্ত গ্যাস থাকছে না। এতে রাতের বেলা রান্না করে রাখারও উপায় নেই, কারণ দিনের বেলায় রান্না করে রাখা সেই খাবার গরম করার সুযোগও থাকছে না। এতে অনেকেই বাধ্য হয়ে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করছেন।

শুধু রাজধানীতেই নয়, এর আশপাশের এলাকাগুলোতেও এমন গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। জুরাইনের বাসিন্দা শহিদুল বলেন, ‘প্রতি মাসেই তিতাস ফ্রি ফ্রি গ্যাস বিল নিয়ে যাচ্ছে। গ্যাস তো থাকেই না। মাসে দুই-তিনটা সিলিন্ডার কিনতে হচ্ছে। আবার গ্যাস বিলও দিতে হচ্ছে। অথচ কোনো সমাধান নেই! আজব দেশে বসবাস করছি।’

এদিকে, গ্যাসের দাবিতে ইতোমধ্যেই অনেক স্থানে বিক্ষোভও করেছেন এলাকাবাসী। গত ১৭ সেপ্টেম্বরও রাজধানীর জুরাইনে গ্যাসের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন স্থানীয়রা। ওইদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জুরাইন বিক্রমপুর প্লাজা সংলগ্ন হাজী খোরশেদ আলী সড়কে ওই কর্মসূচি পালিত হয়।


বিজ্ঞাপন


সে সময় বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা অভিযোগ করেন, গত কয়েক বছর ধরেই আমাদের ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫২, ৫৩ ও ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় গ্যাসের সংকট চলে আসছে। তবে দুই মাস ধরে এই সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করছে।

তারা আরও জানিয়েছেন, জুরাইন কমিশনার রোড, করিমউল্যাহরবাগ, পোস্তগোলা, নবীনবাগ, সবুজবাগ, কলেজ রোড, তালতলা গলি, নবারুন গলি, নোয়াখালী পট্রি, মুরাদপুর আউটার সার্কুলার রোড, দিপথীর গলি, পাইপ রাস্তা, বিড়ি ফ্যাক্টরি, বাগানবাড়ী, কুসুমবাগ, দারোগাবাড়ী, পোকার বাজার মুসলিমের দোকান, জুরাইন কমিশনার রোড, শাহী মসজিদ পুকুর রোড, ঋষিপাড়া, কালামিয়া সরকার রোড, আলমদিনা জামে মসজিদ রোড, বান্দুরা ভিলা গলি, সূর্যমুখী বাড়ী মালিক সমিতি রোডসহ প্রায় পুরো এলাকায় ভোর ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। ফলে রান্নাসহ আনুষঙ্গিক কাজে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সব শ্রেণি-পেশার মানুষদের। সেই সঙ্গে গ্যাসের চুলার ওপর মাটির চুলা বসিয়ে কাগজ কিংবা লাকড়ি জ্বালিয়ে কোনোরকমে রান্না করে জীবন কাটাচ্ছেন তারা।

Gasগ্যাসের এই তীব্র সংকটের মাঝেই ভুক্তভোগীরা আরও অভিযোগ করেন- স্থানীয় বাসিন্দারা তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দিলেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে ঘর থেকে বের হয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করছেন তারা।

এ সময় জুরাইনের আল মদিনা এলাকার বাসিন্দা মামুন বলেন, ‘গ্যাসের কিছু অসাধু লোক রয়েছে। তারা আমাদের বাসাবাড়িতে গ্যাসের সংযোগ বন্ধ করে শিল্প কারখানার লোকজনের সঙ্গে আঁতাত করে তাদের গ্যাস সরবরাহ করছে।’

একই সময় কমিশনার রোড এলাকার বাসিন্দা হনুফা বেগম বলেন, ‘গ্যাস সংকটের কারণে মাটির চুলায় রান্না করে খাচ্ছি। ঘরে ঠিকমতো রান্নাবান্না করতে পারছি না। এতে ছোট শিশু ছাড়াও স্কুল-কলেজগামী ছেলে-মেয়রাও নিত্যদিনের খাবার ঠিকমতো খেতে পারছে না। ফলে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ছে।’

Gasবিষয়টি নিয়ে কথা হলে সাধারণ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বর্তমানে সারাদেশেই গ্যাস সংকট। আমাদের এখানেও আছে। আমাদের বক্তব্য হলো- মিটার বিহীন গ্রাহকদের কাছ থেকে ৬০ ঘনমিটার গ্যাস সরবরাহ করা হবে বলে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ডবল চুলায় এক হাজার ৮০ টাকা। কিন্তু বর্তমান গ্যাস সংকটের কারণে গ্রাহককে সরবরাহ করা হচ্ছে ২৫ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ ঘনমিটার গ্যাস। অথচ তাকে পরিশোধ করতে হবে পুরো মাসের বিল। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের সঙ্গে এক প্রকার প্রতারণাই করা হচ্ছে।’

মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের দাবি- হয় গ্রাহকদের মিটার দিতে হবে, না হলে যে পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ করা কম হয়েছে তা সমন্বয় সাধন করতে হবে। একইভাবে বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ডিমান্ড চার্জ আদায় করা হলেও ঘন ঘন লোডশেডিং থাকা সত্ত্বেও গ্রাহককে ডিমান্ড চার্জ পরিশোধ করতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রেও গ্রাহকের সঙ্গে একপ্রকার প্রতারণা হচ্ছে। সেই সঙ্গে গ্যাস সংকটের কারণে শিল্প উৎপাদন ও আবাসিক গ্রাহকদের রান্নাবান্নার ব্যাঘাত হলে বেশি মূল্যে হোটেল থেকে খাবার ক্রয় করা হচ্ছে। এতে উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানও আজ চরম সংকটে। তাই দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান করা প্রয়োজন বলেও আমরা মনে করছি।’

Gasযদিও স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি বন্ধ থাকায় গ্যাসের চাপ কমেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। আর তিতাসের তথ্যমতে, ঢাকা ও এর আশপাশে গ্যাস সরবরাহ করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলার নিয়ন্ত্রণাধীন তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। তবে এখন দিনে ১৮০ থেকে ১৯০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে তিতাস পাচ্ছে ১৬০ কোটি ঘনফুটের মতো। ফলে তারা গ্রাহকদের প্রয়োজনীয় গ্যাস দিতে পারছেন না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রাজধানী ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নরসিংদী, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, শেরপুর ও জামালপুরে গ্যাস সরবরাহ করছে তিতাস। এরমধ্যে আবাসিক গ্রাহক রয়েছে ২৮ লাখ ৭৪ হাজার ৮৪৮ জন। পাশাপাশি বাণিজ্যিক গ্রাহক সংখ্যা ১২ হাজার ৭৫, সিএনজি ৩৯৬, ক্যাপটিভ পাওয়ার এক হাজার ৭০১টি। এছাড়া শিল্পগ্রাহক রয়েছে পাঁচ হাজার ৩১৩টি। এছাড়াও তিনটি সার কারখানা ও ৪৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করছে রাষ্ট্রায়ত্ত এই কোম্পানিটি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ মোল্লার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে বিষয়টিতে কথা হলে তিতাসের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাহবুব আলম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এটা এখন বৈশ্বিক জাতীয় সংকট। এটা শুধু তিতাসেরই না, সব কোম্পানিগুলোর একই অবস্থা। এই সংকট মোকাবিলার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।’

টিএই/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর