দেশের ১১টি সংসদ নির্বাচনে ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। ১৯৬৫ সাল থেকে ৬৬ বছর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলেন। জীবন সায়াহ্নে এসে দীর্ঘদিন ধরে রোগ-শোকে ভুগছিলেন আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক। ফলে প্রমত্তা পদ্মার বুকে মাথা তুলে দাঁড়ানো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতুর জমকালো উদ্বোধন দেখা হয়নি তার। শেষমেষ পদ্মা সেতু পার হলেও জীবিত নয়, নিথর দেহে দেশের স্বপ্নের সেতুটি পার হয়ে নিজভূম ফরিদপুরের নগরকান্দা গেলেন এই সংসদ সদস্য।
জীবিত অবস্থায় গর্বের এই স্থাপনাটি দেখতে না পারায় আক্ষেপ করেন সাজেদার ছেলে শাহদাব আকবর চৌধুরী লাবু। গণমাধ্যমের সঙ্গে আবেগভরা কণ্ঠে কথা বলার সময় সাজেদা চৌধুরীর ছেলে বলেন, ‘মা অসুস্থ থাকায় পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিনে থাকতে পারেননি। অসুস্থতার কারণে এর আগে পদ্মা সেতু পারও হতে পারেননি। অবশেষে স্বপ্নের সেতু দিয়ে পার হলেন তিনি। কিন্তু গর্বের এই স্থাপনা দেখতে পারলেন না।’
বিজ্ঞাপন
গত ২৫ জুন উদ্বোধন করা হয় স্বপ্নের পদ্মা সেতু। পরদিন থেকে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় সেতুটি। জমকালো আয়োজনে দেশের দীর্ঘতম সেতুটির উদ্বোধন হওয়ার খবর শুনলেও অসুস্থতার কারণে তাতে অংশ নেওয়ার সুযোগ হয়নি সাজেদা চৌধুরীর। সুস্থ হলে সেতুর ওপর দিয়ে পদ্মা পাড়ি দেবেন এমন আকাঙক্ষা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সেই সুযোগ হয়নি বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদের।
আরও পড়ুন: ৮৭ বছরের জীবনের ৬৬ বছরই আ.লীগকে দিয়ে গেছেন সাজেদা
গতকাল রোববার রাতে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় না ফেরার দেশে চলে যান সাজেদা চৌধুরী।

বিজ্ঞাপন
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পর সবচেয়ে বেশিবার নারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদের ১১টি নির্বাচনের মধ্যে ৭ বার নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যদিকে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী নির্বাচিত হয়েছেন ৬ বার। বিশেষ করে ফরিদপুরের নেতাকর্মীদের কাছে তিনি ছিলেন অভিভাবকতুল্য।
এদিকে শুরুতে সংসদ ভবন চত্বরে তার জানাজা হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে পরে তা বাতিল করা হয়। পরে সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে সিএমএইচ থেকে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়েই মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার নির্বাচনী এলাকা ফরিদপুরের নগরকান্দায়।

বেলা ১১টায় নগরকান্দা উপজেলার এমএন একাডেমি মাঠে হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এখন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও এলাকার সাধারণ জনগণ শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন। এরপর পদ্মা সেতু পার হয়েই তার মরদেহ ঢাকায় আনা হবে।
পদ্মা সেতু দিয়ে নগরকান্দা যাওয়ার সময় সাজেদা চৌধুরীর ছেলে শাহদাব আকবর চৌধুরী লাবু বলেন, ‘মায়ের মরদেহ নিয়ে আমরা পদ্মা সেতু পার হয়ে নগরকান্দা যাচ্ছি। কিছুক্ষণ আগে সেতু পার হয়েছি। এ পথেই ঢাকায় ফিরব।’
আরও পড়ুন: অনেক উত্থান পতনের সাক্ষী ছিলেন সাজেদা
বেলা তিনটা থেকে চারটা পর্যন্ত তার মরদেহ রাখা হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। পরে বাইতুল মোকারামে জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয় অতীশিপর এই রাজনীতিবিদকে।
বিইউ/এমআর

