সুরা কাহাফ অনেক ফজিলতপূর্ণ আলোচিত একটি সুরা। আয়াতসংখ্যা ১১০। পবিত্র কোরআনের ১৮তম এই সুরা প্রতিদিন পাঠ করার বহু ফজিলত রয়েছে। বিশেষ করে জুমাবারে তেলাওয়াত করার ফজিলত অপরিসীম। ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করবে, তার (ঈমানের) নূর এই জুমা হতে আগামী জুমা পর্যন্ত চমকাতে থাকবে। (মেশকাত: ২১৭৫)
মুআজ (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি সুরা কাহাফের শুরু ও শেষ তেলাওয়াত করবে তার পায়ের নিচ থেকে মাথা পর্যন্ত নূর প্রজ্বলিত হবে। আর যে ব্যক্তি পুরো সুরা তেলাওয়াত করবে তার জন্য আসমান থেকে জমিন পর্যন্ত নূর প্রজ্বলিত হবে।’ (মুসনাদে আহমদ: ৪৩৯/৩)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: যে ফেতনাকে সাহাবিরাও ভয় পেতেন
কারো পক্ষে পুরো সুরা মুখস্থ করা সম্ভব না হলে কমপক্ষে হাদিসে বর্ণিত বিশেষ আয়াতগুলো মুখস্থ করা যেতে পারে। আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সুরা কাহাফের প্রথম ১০ আয়াত মুখস্থ করবে, সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে রক্ষা পাবে’ (মুসলিম: ৮০৯)। আরেক বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি সুরা কাহাফের শেষ ১০ আয়াত পড়বে সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে রক্ষা পাবে।’ (মুসনাদে আহমদ: ৪৪৬/৬)
সুতরাং একসঙ্গে প্রথম ১০ আয়াত ও শেষ ১০ আয়াত মুখস্থ করতে পারলে নিরাপদ। তা সম্ভব না হলে দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচতে অন্তত প্রথম ১০ আয়াত অথবা শেষ ১০ আয়াত মুখস্থ করার বিকল্প নেই।
বিজ্ঞাপন
সুরা কাহাফ প্রতিদিন পাঠ করা উত্তম। বর্তমান পৃথিবী এমন এক ফেতনার সময় অতিক্রম করছে, যখন এই সুরা পাঠের গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে। সুরা কাহাফ এমন সুরা, যার বারাকাহ ও প্রভাব আশ্চর্যজনক। হাদিস থেকেই তা জানা যায়। হজরত বারা বিন আজিব (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাতে সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করছিল। তার কাছে দুটি রশি দিয়ে একটি ঘোড়া বাঁধা ছিল। এরই মধ্যে একটি মেঘখণ্ড এসে তাকে ঢেকে ফেলল। এরপর যখন মেঘখণ্ডটি তার কাছে চলে আসছিল, তখন তার ঘোড়া ছোটাছুটি করতে লাগল। অতঃপর সকালে ওই ব্যক্তি নবীজি (স.)-এর কাছে গিয়ে রাতের ঘটনা খুলে বলেন। তিনি (স.) বললেন, ওটা ছিল সাকিনা (রহমত), যা কোরআন তেলাওয়াতের বরকতে নাজিল হয়েছিল। (সহিহ বুখারি: ৫০১১, ৩৬১৪; সহিহ মুসলিম: ৭৯৫)
তাই আলেমরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন, এই সুরা তেলাওয়াত অভ্যাসে পরিণত করা উচিত।
উল্লেখ্য, সুরা কাহাফে চারটি বহুল আলোচিত ও শিক্ষণীয় ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। এসব ঘটনার মধ্যে আসহাবে কাহাফের ঘটনায় রয়েছে ঈমানের পরীক্ষা, মুসা (আ.) ও খিজির (আ.)-এর ঘটনায় রয়েছে জ্ঞানকেন্দ্রিক ফেতনার পরীক্ষা, বাদশাহ জুলকারনাইনের ঘটনায় রয়েছে ক্ষমতা ও রাজত্বের পরীক্ষা এবং দুই বাগান মালিকের ঘটনায় রয়েছে সম্পদের ফেতনা ও পরীক্ষা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে বেশি বেশি সুরা কাহাফ পাঠ করার এবং অন্তত ১০ আয়াত মুখস্থ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

