ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের সময় স্থানীয় সরকারের অফিস প্রার্থীদের রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেজন্য সব মন্ত্রণালয় ও সরকারি কর্মকর্তাদের সতর্ক করে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন, যাতে তফসিল ঘোষণার পর কোনো প্রার্থী সরকারি অফিস বা সম্পদ ব্যবহার করতে না পারেন।
ইসির সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, সংস্থা ও বিভাগের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞাপন
ইসি সূত্র জানায়, তফসিল ঘোষণার আগে অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয় সভায় আলোচনা হয়েছে যে, নির্বাচনের সময়ে স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো প্রার্থীদের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। বিগত নির্বাচনের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, অনেক সময় স্থানীয় কর্মকর্তারা প্রভাব খাটিয়ে সরকারি সম্পদ ব্যবহারে সহায়তা করেন। বিশেষ করে স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয় এবং ইসির ভাবমূর্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই কমিশন সকল মন্ত্রণালয়ের সচিবদের নির্দেশ দিয়েছে, যেন নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর কোনো প্রার্থী সরকারি প্রতিষ্ঠানের সুবিধা ব্যবহার করতে না পারে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম. নাসির উদ্দিন সভায় বলেছেন, “গতানুগতিক কাজের চেয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সকলকে দক্ষতা, সাহসিকতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। নির্বাচনের সময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে। সংখ্যালঘু ভোটার এবং প্রান্তিক ভোটারের নিরাপত্তায় বিশেষ নজর দিতে হবে। হেলিসর্টি ভোটকেন্দ্রের জন্য হেলিকপ্টার এবং উপকূলীয় এলাকায় পর্যাপ্ত নৌযানের ব্যবস্থা করতে হবে। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং নির্বাচনী তদন্ত কমিটির কার্যক্রম দৃশ্যমান ও ফলপ্রসু হতে হবে। আচরণবিধি প্রতিপালনে শুরু থেকেই সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে এবং প্রথম দিন থেকেই আচরণ বিধি লঙ্ঘনের চেষ্টা প্রতিহত করতে হবে।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানিয়েছেন, ভোট প্রচার বা অন্যান্য রাজনৈতিক কার্যক্রমের জন্য স্থানীয় সরকারের অফিসগুলো যেন রাজনৈতিক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত না হয়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।
বিজ্ঞাপন
নির্বাচনি প্রচারণায় সরকারি সুবিধা গ্রহণ প্রসঙ্গে ‘সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা-২০২৫’ এ বলা হয়েছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা তৎকর্তৃক মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাহাদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি নির্বাচনি এলাকায়, সংশ্লিষ্ট জেলায় বা অন্য কোনো স্থানে নির্বাচনি কাজে সরকারি প্রচারযন্ত্রের ব্যবহার, সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীগণকে ব্যবহার বা কোনোরূপ সরকারি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন না। এছাড়া সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীসহ নির্বাচন আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কোনো দলীয় বা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করিতে পারবেন না। কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তার নির্বাচনি এলাকায় সরকারি উন্নয়ন কর্মসূচিতে কর্তৃত্ব করতে পারবেন না কিংবা এতদসংক্রান্ত সভায় যোগদান করতে পারবেন না।
আরও পড়ুন: কেন্দ্র থেকে মাঠ, আতঙ্কে ইসি কর্মকর্তারা
এতে আরও বলা হয়েছে, কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকার কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে সভাপতি বা সদস্য হিসাবে নির্বাচিত বা মনোনীত হলে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু হবার আগে উক্ত পদ হতে পদত্যাগ করতে হবে।
ইসির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৯ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২০ জানুয়ারি। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ও প্রতীক বরাদ্দ হবে ২১ জানুয়ারি। নির্বাচনী প্রচারণা চলবে ২২ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত।
এমএইচএইচ/এমআর

