জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাশের দাবি জানিয়েছে ডব়্প যুব ফোরাম। আগামী প্রজন্মকে তামাকের ভয়াবহ করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করতে এই দাবি জানায় তারা।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর মিরপুর ১০ এলাকায় সংগঠনটির আয়োজিত জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাসের দাবিতে মানববন্ধন শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ দাবি জানায় তারা।
বিজ্ঞাপন
প্রধান উপদেষ্টাকে সময়ক্ষেপণ না করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া সংশোধনী দ্রুত পাশের বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়ে তামাকবিরোধী যুব প্রতিনিধিরা বলেন, টোব্যাকো এটলাস ২০২৫’র তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতিবছর তামাকজনিত রোগে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ (প্রতিদিন গড়ে ৩৫৭ জন) মারা যায় এবং লাখ লাখ মানুষ অসুস্থ হয়। তামাকের কারণে অসংক্রামক রোগ যেমন- হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, দীর্ঘমেয়াদী শ্বাসরোগ, ক্যানসার, এবং কিডনি রোগ ক্রমেই বাড়ছে।
যুব প্রতিনিধিরা আরও বলেন, সম্প্রতি তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারের কিছু পদক্ষেপ নেয়া সত্ত্বেও এখনও বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারের হার দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশী। উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির এই বিলম্বের মূল্য আমাদের জীবন দিয়ে দিতে হচ্ছে। প্রতিদিন মানুষ অসুস্থ হচ্ছে, মারা যাচ্ছে-এটাই নিষ্ক্রিয় থাকার অপূরণীয় ক্ষতি। এছাড়াও, তামাক ব্যবহারজনিত কারণে প্রতিবছর অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় প্রায় ৩৯.২ হাজার কোটি টাকা। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনীটি পাস হলে একই সঙ্গে দেশে তামাকের ব্যবহার হ্রাস পাবে এবং এর মারাত্মক স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক ক্ষতি কমানো সম্ভব হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আদিব বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল-এফসিটিসি’তে স্বাক্ষরকারী প্রথম দেশ। তামাকের মহামারী সম্পর্কিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ধুমপানমুক্ত পরিবেশ এবং তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপণ ও প্রণোদনা নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে এখনও সর্বোত্তম মান অর্জন করতে পারেনি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত প্রস্তাবিত সংশোধনীটি পাস হলে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের দুর্বলতাগুলো দূর হবে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এফসিটিসি’র সুপারিশসমূহের কার্যকর বাস্তবায়ন এবং বৈশ্বিক সর্বোৎকৃষ্ট অনুশীলনের আলোকে বাংলাদেশের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি বৈশ্বিক মানদণ্ডে উপনীত হবে।’
বিজ্ঞাপন
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সৈকত বলেন, ‘তামাক কোম্পানিগুলোর প্রধান টার্গেট আমাদের মতো তরুণরা। কারণ তারা জানে যে, তরুণদের একবার আকৃষ্ট করতে পারলে তারা দীর্ঘমেয়াদী ভোক্তা পাবে। এ লক্ষ্যে তারা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করে। সিগারেট, ই-সিগারেটের পর এখন তাদের নতুন কৌশল হলো নিকোটিন পাউচ। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রলোভন ও ভূল তথ্য দিয়ে তারা তরুণদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি দেখা গেছে, ফিলিপ মরিসের মত তামাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে নিকোটিন পাউচ উৎপাদনের কারখানা স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই কূটকৌশল রুখে দিতে হবে এখনই। আর তার জন্য প্রয়োজন তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাস করা।’
মানববন্ধনে যুব প্রতিনিধিরা বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের ৬টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
সেগুলো হলো
অধূমপায়ীদের সুরক্ষার জন্য সকল প্রকার পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা, তামাক পণ্যের প্রচার বন্ধ করার জন্য বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকপণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেট এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শিশু-কিশোর ও তরুণদের রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, তামাকপণ্যের সকল প্রকার খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ করা ও সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা।
মানববন্ধন শেষে ইয়ূথরা ইউসেপ বাংলাদেশে ডব়্প’র আয়োজনে এক কর্মশালায় অংশগ্রহণ করে।
বিইউ/এমআই

