সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, তামাক খাত থেকে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব পায়, দেশে তামাকজনিত আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ তার দ্বিগুণেরও বেশি।
২০২৪ সালে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশে তামাকজনিত এই ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে ৮৭ হাজার কোটি টাকা। অথচ একই বছর তামাক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছে মাত্র ৪১ হাজার কোটি টাকা।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডিতে পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রকাশিত গবেষণা ফলাফলে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট ও ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের ‘ইকোনমিকস ফর হেলথ’ যৌথভাবে এই গবেষণা পরিচালনা করে।
অনুষ্ঠানে গবেষক দলের সদস্য আশরাফুল কিবরিয়া ‘তামাকের খরচ ও প্রভাব’ শীর্ষক উপস্থাপনা তুলে ধরন।
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, তামাকের কারণে স্বাস্থ্যখাতে ব্যয়ের পরিমাণ প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা। আর পরিবেশগত ক্ষতি হয় ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকার।
বিজ্ঞাপন
এই গবেষণায় প্রথমবারের মত তামাকের পরিবেশগত প্রভাব বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে; যার মধ্যে বন উজাড়, ভূমি অবক্ষয়, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সমস্যা ও দূষণ অন্যতম। এধরনের ক্ষতির আর্থিক মূল্য ধরা হয়েছে ১,৪২৫ কোটি টাকা, যা মোট ক্ষতির ১৬ শতাংশ।
গবেষকরা স্বাস্থ্যসংক্রান্ত আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও হিসাব করেছেন। তারা ‘কস্ট অব ইলনেস’ পদ্ধতি ব্যবহার করে ৮টি প্রধান তামাকজনিত রোগ থেকে হওয়া ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন। যা দাঁড়িয়েছে ৭৩ হাজার ৬৩ কোটি টাকায়।
সরকারি তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে তামাকজনিত অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি মূল্যায়ন করা হয়েছে। আর অন্যান্য পরিবেশগত ক্ষতি নির্ধারণ করা হয়েছে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে।
অনুষ্ঠানে পিপিআরসির আরেকটি গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী মোহাম্মদ ইহতেশাম হাসান। গত মাসে ৪টি বিভাগের ১২১টি স্কুলের আশপাশের ৬৬৬টি দোকানে জরিপ চালিয়ে এই গবেষণা করা হয়।
এতে দেখা যায়, দোকানগুলোর ৮৪ শতাংশে সুগন্ধযুক্ত বা ফ্লেভারযুক্ত সিগারেট এবং ৯৯ শতাংশ দোকানে এক শলাকা বা খুচরা সিগারেট বিক্রি হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০০ মিটারের মধ্যে অবস্থিত ৭০ শতাংশ দোকানে তামাকের বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয় এবং ২০ শতাংশ দোকান প্রচারণামূলক কার্যক্রমে যুক্ত থাকে।
তরুণদের মধ্যে তামাক পণ্যের আকর্ষণ ও সহজলভ্যতা কমাতে বিক্রয়কেন্দ্রে বিজ্ঞাপন প্রচার, ফ্লেভারযুক্ত সিগারেট এবং খুচরা শলাকা বিক্রি নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করা হয় গবেষণা প্রতিবেদনটিতে।
জেবি

