পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে অধূমপায়ীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তর ও এর অধীনস্ত সব কার্যালয়কে শতভাগ ধূমপানমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এখন থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত জাতীয় নির্দেশিকা অনুসরণ করে ধূমপানমুক্ত এলাকা হিসেবে এই অধিদপ্তরের সব কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যালয়ে ঢাকা আহছানিয়া মিশন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘পরিবেশ অধিদপ্তরের সব কার্যালয়কে শতভাগ ধূমপানমুক্ত ঘোষণা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই ঘোষণা দেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. কামরুজ্জামান।
বিজ্ঞাপন
মহাপরিচালক জানান, পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আগত অতিথিদের পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করতে আমারা এই অধিদপ্তরকে শতভাগ ধূমপানমুক্ত ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা আহছানিয়া মিশনের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের সমন্বয়কারী মো. শরিফুল ইসলাম। তিনি জানান, তামাকের ধোঁয়ায় প্রায় সাত হাজার ধরনের রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ২৫০ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর এবং মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করে ও মৃত্যু ঘটায়।
শরিফুল বলেন, দেশে প্রতি বছর তামাকের কারণে প্রায় এক লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারায় এবং আচ্ছাদিত কর্মক্ষেত্রে ৪২ দশমিক ৭ শতাংশ ও সরকারি কার্যালয়ে ২১ দশমিক ৬ শতাংশ অধূমপায়ী নারী-পুরুষ পরোক্ষ ধূমপানজনিত স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। তিনি জানান, পরিবেশের উপরেও ধূমপান মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। প্রতি বছর বিড়ি-সিগারেটের বিষাক্ত বর্জ্য হিসেবে ৪০ হাজার ৪৯০ টন বাট ও প্যাকেট পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ। ২০২৪ সালে বিড়ি-সিগারেটের জলন্ত আগুন থেকে ৪১৩৯ অগ্নিকান্ড সংঘটিত হয়েছে।
স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা আহছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদ জানান, দেশে প্রায় তিন কোটি ৭৮ লাখ মানুষ তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার করে। এর মধ্যে ধূমপান করে এক কোটি ৯২ লাখ মানুষ এবং প্রায় চার কোটি মানুষ ধূমপান না করেও পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে। কর্মক্ষেত্রের পাশাপাশি ৬১ হাজারের বেশি শিশু পরোক্ষ ধূমপানের কারণে সৃষ্ট রোগে ভূগছে। তাই পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি থেকে সবাইকে রক্ষায় সব পাবলিক প্লেসকে শতভাগ ধূমপানমুক্ত রাখতে হবে।
বিজ্ঞাপন
বক্তারা বলেন, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (সংশোধিত ২০১৩)” এর ধারা অনুযায়ী সব সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়গুলোকে পাবলিক প্লেস হিসেবে ধূমপানমুক্ত এলাকা হিসেবে রাখা হলেও ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা বা স্মোকিং জোন রাখার ঐচ্ছিক সুযোগ রয়েছে। কারণ ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকার মাধ্যমে অধূমপায়ীরা পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়ে নানা স্বাস্থ্য জটিলতায় ভোগে। তাই পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি থেকে অধূমপায়ীদের রক্ষা করতে সব পাবলিক প্লেসে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান রাখার বিধান বাতিল করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাশের দাবি জানান বক্তারা।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক পারভেজ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও খাদিজাতুল কুবরার সঞ্চালনায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা আহছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টরের উপ-পরিচালক মোখলেছুর রহমান, আহছানিয়া মিশন ইয়ুথ ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিয়িংয়ের সম্বয়কারী মারজানা মুনতাহাসহ পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভিন্ন বিভাগের পরিচালকরা।
এমআইকে/ক.ম

