শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

‘অনেকে খাবার নিয়ে আসছেন, আমরা মাথা গোঁজার ব্যবস্থা চাই’

একে সালমান
প্রকাশিত: ২৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:১৩ পিএম

শেয়ার করুন:

‘অনেকে খাবার নিয়ে আসছেন, আমরা মাথা গুঁজার ব্যবস্থা চাই’
আগুনে কড়াইল বাস্তিবাসীর প্রায় দেড় হাজার ঘর পুড়ে ছাই। অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন খোলা আকাশের নিচে। ছবি: ঢাকা মেইল, ২৭ নভেম্বর ২০২৫

‎কড়াইল বস্তির ক ব্লকের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম। গত ৩০ বছর যাবৎ এ বস্তিতে বসবাস করেন তিনি। ১০ বছর যাবৎ স্বামী-স্ত্রী মিলে কড়াইল বস্তির ক ব্লকে একটি খাবার হোটেল দিয়েছেন। ২০১৭ সালে কড়াইল বস্তিতে আগুনের ঘটনার সময় একটি টিনশেড বাড়িতে থাকতেন। ওই সময় আগুনে সব পুড়ে ছাঁই হয়ে যায়। 

এরপর বিভিন্ন সংস্থা থেকে কয়েকটি টিন পেয়ে কোনো রকম ঘর তুলে বসবাস করেন। ১৭ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে পাকা ঘর তুলেছেন। সেটিও এবার পুড়ে গেল। আগুনের পর অনেকে খাবার নিয়ে গেছেন। কিন্তু বস্তিবাসীরা বলছেন, তাদের মাথা গুঁজার ব্যবস্থা দরকার এখন।  


বিজ্ঞাপন


‎বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) দুপুর দেড়টায় কথা হয় জাহাঙ্গীর আলমের আগুনে পুড়ে যাওয়া বাড়িতে বসে। ‎তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ২০১৭ সালে আগুন লাগার পর আমার সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এরপর কয়েক জায়গা থেকে টিন পেয়েছি। তা দিয়ে কোনো রকম ঘর তুলে বসবাস করা শুরু করি। কয়েক দিন পর বিভিন্ন সমিতি ও এনজিও থেকে কয়েক দফায় প্রায় ১৭ লাখ টাকা সুদে কিস্তি তুলি। সেই টাকা দিয়ে একটা একতলা বিল্ডিং তৈরি করি। তখন ভাবলাম হয়তো বিল্ডিং হলে আগুনে তেমন ক্ষতি হবে না। কিন্তু আগুন আমার আর কিছুই অবশিষ্ট রাখল না। শুধু হোটেলের কর্মীরা দুইটা গ্যাসের সিলিন্ডার রক্ষা করতে পেরেছে। আর কিছুই নিয়ে যেতে পারেনি। 

IMG_20251127_131221_997@-1241205454
আগুনে কড়াইল বাস্তিবাসীর প্রায় দেড় হাজার ঘর পুড়ে ছাই। অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন খোলা আকাশের নিচে। ছবি: ঢাকা মেইল, ২৭ নভেম্বর ২০২৫



জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ২০১৭ সালে পুড়ে যাওয়া বাড়ি পুনরায় তৈরি করতে কিস্তিতে যে টাকা তুলেছিলাম, সেগুলো এখনো শোধ করা হয়নি। এখনো অনেক টাকা বাকি আছে। এখন আবার নতুন করে সব পুড়ে আমরা পথে বসে গেছি। আমাদের আর কিছুই বাকি রইলো না।

 



‎এদিকে জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী রাবেয়া খাতুন ঢাকা মেইলকে বলেন, গতকাল থেকে সবাই আমাদের জন্য বিভিন্ন খাবার নিয়ে আসতেছে। কিন্তু আর্থিক সহায়তা নিয়ে আসতেছে না। আমরা যে ক্ষতিগ্রস্ত হলাম। কেউ আর্থিক সহায়তা নিয়ে আসতে দেখলাম না। গতকাল রাতে আমাদের স্বামী-স্ত্রীর জন্য চার প্যাকেট খাবার নিয়ে এসেছিল। আমরা দুই প্যাকেট রেখে বাকিগুলো দিয়ে দিয়েছি। আমরা সরকারের কাছে তেমন কিছু চাই না। শুধু আমাদের থাকার মতো একটা ব্যবস্থা করে দিক, এটাই চাওয়া। 

IMG_20251127_131213_488@-534890318
আগুনে কড়াইল বাস্তিবাসীর প্রায় দেড় হাজার ঘর পুড়ে ছাই। অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন খোলা আকাশের নিচে। ছবি: ঢাকা মেইল, ২৭ নভেম্বর ২০২৫



কড়াইল বস্তির বউ বাজার ক ব্লক এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি টিনশেড বাড়ি মাটির সঙ্গে মিশে আছে। ঘরের আসবাবপত্র কোনো কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। পাশাপাশি যেসব আধাপাকা বাড়ি  ছিল, সেগুলো ধসে পড়ে গেছে। এছাড়াও একতলা ভবনের ওপর গড়ে তোলা দুই তলা-তিন তলা টিনশেড বাড়িগুলো মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। আগুনের পর কেউ ঘর থেকে কোনো আসবাবপত্র নিয়ে যেতে পারেনি বলে জানান বাসিন্দারা। 

ক ব্লকের আরেক বসিন্দা নূরে আলম ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা সব হারিয়ে পুড়ে যাওয়া বাড়ির মাটিতে বিছানা পেতে রাত পার করেছি। আমাদের তো সব নিয়ে গেলো আগুনে। কিছুই আর রেখে যায়নি। আমরা সব হারিয়ে মুহূর্তেই নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। অনেক নেতা আমাদের দেখে গেছে। অনেকে খাবার নিয়ে এসেছে। কিন্তু কেউ আমাদের আর্থিক সহায়তা নিয়ে আসেনি।

কড়াইল বস্তিতে আগুনের পর ‎জাহাঙ্গীর দম্পতি ও নূরে আলমের মতো অনেক পরিবার তাদের শেষ সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। সবার অভিযোগ, বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন খাবার নিয়ে এলেও আর্থিক সহায়তা নিয়ে সরকার কিংবা কোনো রাজনৈতিক নেতারা আসেনি। কোথায় মাথা গুঁজাবে তার ব্যবস্থা নেই বলে জানান ক্ষতিগ্রস্ত বস্তিবাসী।

‎একেএস/ক.ম 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর