শনিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ভোটের পরিবেশ পর্যবেক্ষণে পৃথক প্যানেল গঠন করবে নির্বাচন কমিশন

মো. মেহেদী হাসান হাসিব
প্রকাশিত: ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:১৬ পিএম

শেয়ার করুন:

ভোটের পরিবেশ পর্যবেক্ষণে পৃথক প্যানেল গঠন করবে নির্বাচন কমিশন
কোলাজ: ঢাকা মেইল

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল ছাড়াও ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ রাখতে পৃথক আরেকটি প্যানেল গঠন করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটকেন্দ্র ও ভোটগ্রহণের সামগ্রিক পরিবেশ পর্যবেক্ষণসহ মাঠপর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিবেদন সংগ্রহ করবে এই প্যানেল।

ইসির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘৩০ অক্টোবরের মধ্যে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল চূড়ান্ত করা হবে। এর পাশাপাশি কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পৃথক আরেকটি প্যানেল তৈরি করা হচ্ছে। এই প্যানেল রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের কার্যালয়, নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, তথ্য ও ফলাফল সংগ্রহ কেন্দ্র, ভোটকেন্দ্র এবং ভোটের পরিবেশ-পরিস্থিতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন সংগ্রহসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করবে।’


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন

এবারের নির্বাচনে বড় হুমকি এআই

কেন আলাদা প্যানেল গঠন করা হচ্ছে- এমন প্রশ্নে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ভোটের দিন একসঙ্গে অনেক কাজ করতে হয় আমাদের। আগে এসব কাজের জন্য প্যানেল না থাকলেও কে এসব কাজ করবে রিটার্নিং কর্মকর্তা তা নির্ধারণ করে দিতেন। তবে এবার ভোট স্বচ্ছ করতে নির্বাচন কমিশন থেকে এর জন্য আলাদা প্যানেল করে দেওয়া হবে। এতে যেমন আমাদের ভোটের দিন সবকিছুর ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে তেমনি ভোটের পরিবেশও সুষ্ঠু থাকবে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তার প্রতিবেদন আমরা দ্রুত পাব।’

এমন উদ্যোগকে সময়োপযোগী বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সাবেক সদস্য আবদুল আলীম। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, ‘এ প্যানেলের দরকার আছে। আমি সবসময় বলি, এই জিনিসটা লাগবে। কারণ ধরুন, প্রচারণার সময় পুলিশ কাউকে ফেভার করছে কি না, এটা তো কমিশন ঢাকায় বসে দেখতে পারবে না। যদিও রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব এবং তার সঙ্গে থাকা সহকারীদের দায়িত্ব, কিন্তু তারা এতো ব্যস্ত থাকে যে, এসব বিষয়ে নজর দেওয়ার সময় থাকে না। ফলে মাঠের পরিস্থিতি অনেক সময় খারাপ হয়ে সহিংসতার দিকে চলে যায়।’

আরও পড়ুন

এবারের ভোটে বড় চ্যালেঞ্জ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা

আবদুল আলীম আরও বলেন, ‘আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থার বড় দুর্বলতা হচ্ছে অভিযোগ ব্যবস্থাপনা। প্রার্থীরা অভিযোগ দাখিল করেন, কিন্তু ওই অভিযোগের ভবিষ্যৎ কী হয়, তা অনেক সময় নিজেরাও জানেন না। অনেক সময় সেগুলো বস্তাবন্দি অবস্থায় পড়ে থাকে। কাজেই যদি এই ধরনের একটা কমিটি হয়, তাহলে দুইটা সুবিধা হবে। প্রথমত, মাঠে তাদের উপস্থিতিতে প্রার্থী ও কর্মীরা জানবে যে কেউ পর্যবেক্ষণ করছে, ফলে তারা অনিয়ম থেকে বিরত থাকবে। দ্বিতীয়ত, যেসব অনিয়ম ঘটবে, সেগুলো কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনে পৌঁছাবে। সুতরাং এটি নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ।’

৩০ অক্টোবরের মধ্যে প্যানেল তৈরি করবে ইসি

নির্বাচনকে ঘিরে দ্রুত ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত করতে ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পাঠিয়েছে কমিশন। ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে যারা ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের তথ্য এবারও প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

Vote2_2ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বীমা, বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজ থেকে কর্মকর্তাদের তালিকা সংগ্রহ করতে হবে। প্যানেলভুক্তির চিঠিতে ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপালনের তথ্য অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

মাঠ পর্যায়ে পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার নিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় প্যানেল তৈরি করতে হবে। এজন্য সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শ্রেণি বা গ্রেডভিত্তিক তালিকা চাওয়া হয়েছে।

প্যানেলে অন্তর্ভুক্তির শর্তাবলী

প্রিজাইডিং অফিসার: প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা, ক্ষেত্রবিশেষে দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা এবং সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত কলেজ-মাদরাসার শিক্ষক, রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংক-বীমার কর্মকর্তা এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান/সহকারী প্রধান শিক্ষক।

আরও পড়ুন

প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালট সংরক্ষণ নিয়ে জটিলতা!

সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার: দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা, কলেজ ও মাদ্রাসার ডেমনস্ট্রেটর, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।
পোলিং অফিসার: বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ও প্রাথমিক-মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।

চিঠিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, চতুর্থ শ্রেণির (জাতীয় বেতন স্কেল ১৭-২০ গ্রেড) কোনো কর্মচারীকে প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। তবে প্রিজাইডিং অফিসারদের সহায়ক হিসেবে আলাদা তালিকা প্রস্তুত করা যেতে পারে।

বাছাইয়ের মানদণ্ড

প্যানেল তৈরির সময় কর্মকর্তাদের সততা, দক্ষতা, সাহস, নিরপেক্ষতা, পদমর্যাদা, জ্যেষ্ঠতা ও কর্মদক্ষতাকে গুরুত্ব দিতে হবে। বিতর্কিত কর্মকর্তা-কর্মচারী কিংবা কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্যকে প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। প্রয়োজন হলে বয়স, শারীরিক ও মানসিক অবস্থা সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করে তালিকায় উল্লেখ করতে হবে।

নারী কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্তি

নারীদের ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালনের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক মহিলা সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার রাখার নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

অতিরিক্ত প্যানেল প্রস্তুতি নির্ধারিত সংখ্যার পাশাপাশি আরও ১০ শতাংশ অতিরিক্ত কর্মকর্তার নাম প্যানেলে রাখতে হবে। পাশাপাশি ভোটগ্রহণের বাইরেও-রিটার্নিং অফিসার কার্যালয়, নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, নির্বাচনি তথ্য ও ফলাফল সংগ্রহ কেন্দ্র, মাঠ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণসহ অন্যান্য কাজের জন্যও আলাদা একটি প্যানেল তৈরি করতে হবে।

নির্বাচন কমিশন বলেছে, সব শর্ত মেনে প্রস্তুতকৃত প্যানেলের চূড়ান্ত তালিকা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কমিশন সচিবালয়ে পাঠাতে হবে।

আরও পড়ুন

প্রবাসীদের ভোটার করতে ‘উদার’ ইসি, মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্টেও সুযোগ

২০০৯ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রায় ৮ লাখ ২৫ হাজার জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৪৭ আসনে ভোটগ্রহণ করা হয়। এসব আসনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন ২ লাখ ৯১ হাজার ৮৪৭ জন। একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেন।

এমএইচএইচ/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর