বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাস করা লাখ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি এবার প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেতে যাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশন সব প্রবাসীকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে চাচ্ছে। এজন্য প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রদানের কার্যক্রম পুরোদমে চালাচ্ছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।
প্রবাসীদের ভোটার করার ক্ষেত্রে অনেকটা উদার নীতি অবলম্বন করছে নির্বাচন কমিশন। সহজেই যেন তারা ভোটার হতে পারেন সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট দিয়েও নিবন্ধন আবেদনের সুযোগ পাবেন প্রবাসীরা। নতুন করে এই বিধানসহ আদর্শ পরিচালনা পদ্ধতির (এওপি) নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
বিজ্ঞাপন
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর ঢাকা মেইলকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র যাতে সহজে প্রদান করা যায় সেজন্য আমরা একটি আদর্শ পরিচালনা পদ্ধতি (এসওপি) চূড়ান্ত করে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যা কমিশনের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
এই কর্মকর্তা বলেন, অনেক বাংলাদেশি নাগরিক বিদেশে গিয়ে দেশীয় সব কাগজপত্র হারিয়ে ফেলে। বিদেশি কাগজপত্র থাকলেও দেশীয় কাগজপত্র তাদের কাছে থাকে না। সেক্ষেত্রে নিবন্ধন আবেদনের পর সংশ্লিষ্ট দেশে বসবাস করা তিনজন এনআইডিধারী বাংলাদেশি নাগরিক নির্ধারিত ফরমে প্রত্যয়ন করলেই আমরা তার আবেদন আমলে নিয়ে চূড়ান্তভাবে বাংলাদেশের ঠিকানায় তদন্ত করে চূড়ান্ত অনুমোদন করব। এতে প্রবাসীদের ভোটার হওয়ার পদ্ধতি অনেক সহজ হয়ে যাবে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচন কমিশন ৪০টি দেশে কার্যক্রমটি সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নিয়েছিল, যার মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মতিক্রমে বর্তমানে নয়টি দেশের (সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ইতালি, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, কাতার, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা) ১৬টি স্টেশনে ইসির প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিবন্ধন ও ভোটার করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসী নাগরিকদের ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করতে ২৮ আগস্ট দেশটিতে যাচ্ছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর প্রবাসী ভোটারদের সঙ্গে একটি সভায়ও অংশ নেবেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
এদিকে জাপানে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রমের অগ্রগতি ও ওই দেশে যেসব বাংলাদেশি নাগরিক বসবাস করেন তাদের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রসহ (এনআইডি) নানা রকম সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে মতবিনিময় করতে সোমবার (১৮ আগস্ট) জাপানে গেছেন ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। আগামী শনিবার (২৩ আগস্ট) তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। এসব দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এক্ষেত্রে অনলাইনে আবেদন করে দূতাবাসে এসে ছবি তুলে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে প্রবাসীদের।
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়, জনশক্তি ব্যুরো, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি-বায়রাসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে নির্বাচন কমিশন তথ্য সংগ্রহ করে দেখেছে, ৪০টি দেশে বাংলাদেশি প্রবাসীদের আধিক্য রয়েছে। এসব দেশকেই মাথায় রেখে কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
দেশগুলো হলো— সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান, কাতার, বাহরাইন, লেবানন, জর্ডান, লিবিয়া, সুদান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, ইতালি, হংকং, মিসর, ব্রুনাই, মৌরিশাস, ইরাক, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, গ্রিস, স্পেন, জার্মানি, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, ব্রাজিল, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া, তুরস্ক ও সাইপ্রাস। এসব দেশে এক কোটি ৪০ লাখ ৪৬ হাজার ৫৩৪ জন প্রবাসী রয়েছেন। সবচেয়ে বেশি ৪০ লাখ ৪৯ হাজার ৫৮৮ প্রবাসী রয়েছেন সৌদি আরবে। আর সবচেয়ে কম দুই হাজার ৫০০ জন রয়েছেন নিউজিল্যান্ডে।
প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানসংক্রান্ত ইসির সবশেষ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নয়টি দেশ থেকে মোট আবেদন পড়েছে ৪৯ হাজার ৫৭৪টি। যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়েছে তিন হাজার ৯৭৩টি আবেদন। তদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে এমন আবেদনের সংখ্যা ২১ হাজার ৯৭১টি। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে আঙুলের ছাপ ও ছবি নেওয়া হয়েছে ২৯ হাজার ৭৬৩ জন প্রবাসীর। তদন্ত শেষে অনুমোদন করা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ জনের নিবন্ধন আবেদন। অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে ৩ হাজার ৯৩৭ জনের। আর সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ২০ হাজার ২০৯টি। আর সবচেয়ে কম আবেদন পড়েছে অস্ট্রেলিয়ায় ২৬৯টি।
এমএইচএইচ/জেবি

