ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের প্রচারে নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি বিলবোর্ড ব্যবহার করতে পারবেন না প্রার্থীরা। এক্ষেত্রে একজন প্রার্থী এক সংসদীয় আসনে ২০টির বেশি বিলবোর্ড ব্যবহার করতে পারবেন না- এমন বিধান রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালায় যুক্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ইসির সংশ্লিষ্ট শাখার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা কিছু নতুন বিধান যুক্ত করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে একজন প্রার্থী প্রচারে ২০টির বেশি বিলবোর্ড ব্যবহার করতে পারবেন না। এটা করার কারণ হলো, বিলবোর্ড তৈরিতে বেশি টাকা ব্যয়। এক্ষেত্রে একজন প্রার্থী অসংখ্য বিলবোর্ড ব্যবহার করলে একদিকে তাদের নির্বাচনে যে ব্যয় রয়েছে তা সীমা অতিক্রম করতে পারে। অন্যদিকে বিলবোর্ডের কারণে প্রার্থীদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়াসহ পরিবেশ নষ্ট হতে পারে। এরকম চিন্তা থেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
নির্বাচনি প্রচারে একজন প্রার্থী ২০টির বেশি বিলবোর্ড ব্যবহার করতে পারবেন না- এমন বিষয় আচরণ বিধিমালায় যুক্ত করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এমন একটি বিষয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালায় আছে।’
এদিকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে বিলবোর্ড বিষয়ে ইসি বলেছে, বিলবোর্ডে শুধু যেগুলো ডিজিটাল বিলবোর্ড সেগুলোতে আলোর ব্যবহার করা যাবে। বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যাবে। তাছাড়া আলোকসজ্জার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
আচরণ বিধিমালা নিয়ে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, প্রার্থীর প্রচারে বিলবোর্ডের ব্যবহার অতীতে ছিল না; এবার যুক্ত করা হয়েছে। পোস্টার ব্যবহার বন্ধে সংস্কার কমিশনেরও একটা প্রস্তাব ছিল। আমরাও একমত। আর ব্যানার ও ফেস্টুনের ব্যবহার নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার বলেন, সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির তালিকায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদেরও যোগ করা হয়েছে। ফলে তারা প্রার্থীর হয়ে প্রচারে নামতে পারবেন না। তাদের জন্য বিভিন্ন সরকারি সুবিধা, যেমন সার্কিট হাউস, ডাক বাংলো ও রেস্ট হাউস ব্যবহারে কিছু বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
প্রচারে পরিবেশবান্ধব সামগ্রী ব্যবহারে জোর দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভোটার স্লিপের ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে। টিশার্ট, জ্যাকেট ইত্যাদির ব্যাপারে অতীতে যে বিধিনিষেধ ছিল, এবার একটু শিথিল মনোভাব দেখানো হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারের ব্যাপারে তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগ আনা যাবে না।
তিনি জানান, মাইকে প্রচারের সময় শব্দের মাত্রা ৬০ ডেসিবেলে রাখতে হবে। প্রচারণার সময় থাকছে তিন সপ্তাহ। টিভিতে সংলাপের সুযোগ রাখা হয়েছে।
এছাড়া প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে সভাপতি বা সদস্য পদে থাকলে পদত্যাগ করতে হবে। বিধিমালা লঙ্ঘনে যে স্বাভাবিক শাস্তি ছিল, ছয় মাস কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা; এবার জরিমানা সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকার প্রস্তাব রয়েছে।
আচরণবিধি মেনে চলার ব্যাপারে দলের কাছ থেকে অঙ্গীকারনামাও নেবে ইসি।
আচরণবিধির ‘গুরুতর’ অপরাধের ক্ষেত্রে আরপিওতে প্রার্থিতা বাতিলের বিধান রয়েছে। আগে আচরণবিধিতে আরপিও অনুচ্ছেদটি ছিল না, এটা এবার যুক্ত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
রোহিঙ্গা সার্ভার ইসির হাতে এলো না কেন, আটকে আছে কোথায়?
দুই ভাইকে বিয়ে করে রোহিঙ্গা তরুণী যেভাবে ঝিনাইদহের ভোটার
সব প্রার্থীকে এক মঞ্চে রাখার বিষয়ে সানাউল্লাহ বলেন, কমন প্লাটফর্ম বলতে আমাদের যেসব রিটার্নিং অফিসার রয়েছেন সংশ্লিষ্ট আসনে, তিনি সব প্রার্থীকে নিয়ে একটি প্লাটফর্ম থেকে একদিনে তাদের ইশতেহার বা ঘোষণাপত্রগুলো পাঠ করার ব্যবস্থা করবেন।
এছাড়া নারীদের লক্ষ্য করে সাইবার বুলিং রোধ করা। বিদেশে কোনো প্রার্থীর পক্ষে সশরীরে প্রচারণা না চালানো, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ( এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে মিথ্যাচার বা অপপ্রচার চালালে প্রার্থী ও রাজনৈতিক দল নয়, গণমাধ্যমও শাস্তির মুখে পড়বে এমন বিধানও রাখা হয়েছে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের আচরণ বিধিমালায়।
এমএইচএইচ/জেবি

