বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫, ঢাকা

মুরাদনগরে নারীর ‘আপত্তিকর’ ভিডিও ছড়ানোর নেপথ্যে কী, জানালো র‌্যাব

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪ জুলাই ২০২৫, ০৩:১৭ পিএম

শেয়ার করুন:

Comilla
মুরাদনগরে নারীর আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতারকৃতরা।

সম্প্রতি কুমিল্লার মুরাদনগরে এক নারীর ‘আপত্তিকর’ ভিডিও করে তা সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া নিয়ে তুমুল শোরগোল শুরু হয় দেশব্যাপী। অবশেষে অনুসন্ধানপূর্বক ওই ঘটনার নেপথ্যের কারণ জানালো র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন- র‌্যাব।

সরকারি বাহিনীটির জানাচ্ছে, মুরাদনগরে ওই ভিডিও ছড়ানোর নেপথ্যে আছে আপন দুই ভাই শাহ পরান ও ফজর আলীর বিরোধ। ফজর আলীকে বিপদে ফেলে প্রতিশোধ নিতেই পুরো ঘটনা সাজিয়েছিলেন তারই ভাই শাহ পরান। 


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: মুরাদনগরে ধর্ষণ মামলার মূল আসামি ঢাকা থেকে গ্রেফতার

শুক্রবার (৪ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এমন তথ্যই জানানো হয়েছে। 

ওই ব্রিফিংয়ে র‍্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন জানান, পূর্ব শত্রুতার জেরে বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে ছোট ভাই মব সৃষ্টি করে ভুক্তভোগী ও ধর্ষককে নির্যাতন, শ্লীলতাহানী করেন ও অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।

আরও পড়ুন: মুরাদনগরে ধর্ষণ: যাদের দায়ী করলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ


বিজ্ঞাপন


সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বাহেরচর গ্রামের শহিদের বড় ছেলে ফজর আলী ও ছোট ছেলে শাহ পরান দীর্ঘদিন ধরে ভুক্তভোগীকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। ঘটনার দুই মাস আগে তাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে বিরোধের জের ধরে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। 

এরই প্রেক্ষিতে গ্রাম্য শালিসে জনসম্মুখে বড় ভাই ফজর আলী তার ছোট ভাই শাহ পরানকে চড় মারেন। পরবর্তীতে শাহ পরান তার বড় ভাইয়ের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সুযোগের সন্ধানে থাকে। শালিসের কিছু দিন পর ভুক্তভোগী নারীর মা ফজর আলীর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা সুদের বিনিময়ে ধার নেন।

Rab
মুরাদনগরের ঘটনা নিয়ে মিডিয়া ব্রিফিং করছে র‌্যাব।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, ঘটনার দিন সন্ধ্যার পরে ভুক্তভোগীর বাবা-মায়ের অনুপস্থিতিতে সুদের টাকা আদায়ের অজুহাতে ভুক্তভোগীর শয়নকক্ষে প্রবেশ করেন ফজর আলী। এর ২০ মিনিট পর পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ভুক্তভোগীর বাড়ির আশপাশে অবস্থান করা মামলার মূল হোতা শাহ পরান ও একই গ্রামের আবুল কালাম, অনিক, আরিফ, সুমন, রমজান এবং অজ্ঞাতনামা ৮-১০ জন ব্যক্তি দরজা ভেঙে ভুক্তভোগীর শয়নকক্ষে প্রবেশ করে এবং তাকে শারীরিক নির্যাতন, শ্লীলতাহানি ও অশ্লীল ভিডিও চিত্র ধারণ করে পরবর্তীতে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।

আরও পড়ুন: মুরাদনগরের ঘটনায় কঠোর শাস্তি চান জামায়াত আমির

সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ঘটনার পর মূল হোতা শাহ পরানসহ আবুল কালাম ও অন্যান্য আসামিরা আত্মগোপনে চলে যান। পরবর্তীতে তথ্য প্রযুক্তি ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আসামি শাহ পরানকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন, পূর্ব শত্রুতার কারণে তার ভাই ফজর আলীর ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে অন্যান্য আসামিদের সহায়তায় ভুক্তভোগী ও ফজর আলীকে নির্যাতন, শ্লীলতাহানী ও অশ্লীল ভিডিও চিত্র ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।  

র‌্যাব আরও জানায়, শাহ পরান মব সৃষ্টির জন্য ইমোতে অন্যদের মেসেজ দিয়ে ডেকে আনেন। তাকে মুরাদনগর থানায় হস্তান্তর করার কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে এবং অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।

আরও পড়ুন: মুরাদনগরে ধর্ষণের ঘটনায় যা বললেন বাঁধন

এর আগে গত ২৬ জুন দিবাগত রাতে কুমিল্লার মুরাদনগর থানাধীন বাহেরচর গ্রামে এক নারীকে নিগ্রহের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় গত ২৯ জুন ভুক্তভোগী বাদী হয়ে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করেন। 

মামলা হওয়ার পর ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ধর্ষণে অভিযুক্তসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বাকিদের ধরতে অভিযান চলমান আছে বলে জানানো হয়েছে।

এএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর