পবিত্র ঈদুল আজহার অগ্রিম টিকিট বিক্রিকে কেন্দ্র করে দেশের পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য চলছে। বাস মালিকরা ইচ্ছেমতো টিকিটের দাম বাড়িয়েছেন। আবার সে দামেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত টিকিট। কালোবাজারে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা বেশি দিলেই হাতে আসছে টিকেট নামক ‘সোনার হরিণ’। একই চিত্র ট্রেনের টিকিটেও। অনলাইন-অফলাইন সবখানেই টিকিট কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের তেমন কোনো নজরদারিও চোখে পড়ছে না।
গত কয়েক দিন অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো পর্যবেক্ষণ এবং শ্যামলী, গাবতলী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বাস ও ট্রেন উভয় পরিবহনের টিকিটই বিক্রি শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই উধাও হয়ে যাচ্ছে। রেলের টিকিট কাটতে একদিনে সর্বোচ্চ তিন কোটি পর্যন্ত হিট পড়েছে। অনেক চেষ্টা করেও ট্রেনের টিকিট কাটতে পারেননি অনেক যাত্রী। অথচ সেই টিকিটই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া অনলাইনে বাসের টিকিটও মিলছে না। সেখানেও ব্যাপক প্রতিযোগিতা। আর সেটিকে পুঁজি করেই কালোবাজারে টিকিট বিক্রি জমজমাট।
বিজ্ঞাপন
টিকিট নেই, অথচ মিলছে বাজারে!
গাজীপুরে একটি কারখানায় কর্মরত শাহনেওয়াজ ঢাকা মেইলকে বলেন, আমার অফিস ৫ জুন ছুটি হবে। ৫ তারিখের টিকিটের জন্য রেলওয়ের অনলাইনে অন্তত ২০ বার চেষ্টা করেছি। কিন্তু টিকিট কাটতে পারিনি। ঈদুল ফিততে বাড়িতে যেতে পারিনি। এবারও যদি পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে না পারি তাহলে হবে না। তাই বাধ্য হয়ে ব্ল্যাকে টিকিট করেছি।
শামীম কবির নামের আরেকজন ঢাকা মেইলকে বলেন, ট্রেনের টিকিটের জন্য অনেক চেষ্টা করেও কাটতে পারিনি। এখন বাসের টিকিটও পাচ্ছি না। কিন্তু ব্ল্যাকে অনেক অফার পাচ্ছি। প্রতিটি টিকিটে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা বেশি চাওয়া হচ্ছে। এখন বাড়িতে যেতে হলে বাধ্য হয়েই হয়তো ব্ল্যাকে টিকিট কিনতে হবে।
বিজ্ঞাপন
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন নিশাত হোসেন। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি চেষ্টা করেও অনলাইনে বাস-ট্রেনের টিকিট কিনতে পারিনি। পরে শ্যামলীতে যাই। সেখানে কাউন্টারগুলোতে খোঁজ নিলে সবাই জানায় টিকিট নেই। কিন্তু কাউন্টারের বাইরেই ব্ল্যাকে প্রতিটি টিকিটে ৬০০ টাকা বেশি দিলে ম্যানেজ করতে দিতে পারবে বলে জানায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পরিবহন শ্রমিক ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘ঈদের সময় টিকিট ব্ল্যাকে বিক্রি হয়, এটা প্রতি বছরই হয়। এবারও হচ্ছে। তবে গত ঈদুল ফিতরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় কিছুটা কম হতো। এবার বেশি হচ্ছে। এটাই। আমাকে ৫০০ টাকা বেশি দিলে আমিও টিকিট ম্যানেজ করে দিতে পারবো। হানিফ, দেশ, গ্রামীণ, শ্যামলী সব ট্রাভেলসরই টিকিট আছে।’
মাঠে নেই বিআরটিএ, নেই প্রশাসনিক তৎপরতাও
অনলাইনে কালোবাজারে টিকিট বিক্রি চক্র ধরা তো দূরের কথা অফলাইনে যে নৈরাজ্য চলছে, তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত বিআরটিএ, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তেমন কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বিগত ২৫ বছরের মধ্যে বিদায়ী পবিত্র ঈদুল ফিতরে স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রা হয়েছে। এর পেছনে মূলত তিনটি কারণ ছিল। সেগুলো হলো- ঈদের আগে চার দিনের লম্বা ছুটি, সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক ফেডারেশনের প্রভাবশালী মাফিয়া নেতারা পালিয়ে যাওয়ায় সড়কে মাস্তানিতন্ত্রের অবসান এবং সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিআরটিএ, ভোক্তা অধিদফতরসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বিত আন্তরিক প্রচেষ্টা। এবারও প্রত্যাশা তেমন হবে। কিন্তু সেটা মাঠে পরিলক্ষিত হচ্ছে না।’
পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক সামছুল হক ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমার ধারণা, প্রশাসন হয়ত আরও কিছুদিন পর তৎপরতা দেখাবে। কারণ সরকার এ বিষয়ে আন্তরিক। কিন্তু এর মাঝেই যে অনিয়মটা হয়ে যাচ্ছে, সে বিষয়ে অগ্রিম ব্যবস্থাপনা থাকাটা জরুরি ছিল।’
এ বিষয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান মো. ইয়াসীনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
রেলওয়ে মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে তার একান্ত সচিব মো. নাসির উদ্দিনকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এমআই/জেবি

