দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই রাজধানীর প্রায় প্রতিটি এলাকার সড়ক দখল করে বসে ভ্রাম্যমাণ দোকান। দিনের আলো নিভে যেতেই এসব দোকানে জ্বলে উঠে আলো। প্রশ্ন উঠেছে, দোকানিরা বিদ্যুৎ পাচ্ছেন কোথায় থেকে? অভিযোগ রয়েছে, একটি চক্র অবৈধভাবে এসব দোকানে বিদ্যুৎ সংযোগ দিচ্ছে এবং কামিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা।
রাজধানীর শেরে বাংলানগর, আদাবর, মোহাম্মদপুর ও ধানমন্ডি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সড়ক দখল করে প্রতিদিন বসে কয়েক হাজার দোকান। প্রতিটি দোকানে জ্বলে বৈদ্যুতিক বাতি। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বছরখানেক আগেও ব্যাটারির মাধ্যমে এসব দোকানের লাইট জ্বালানো হতো। তবে বর্তমানে প্রতিটি দোকানেই জ্বলে বৈদ্যুতিক বাতি।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয়রা জানান, বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে সরাসরি সংযোগ নামিয়ে ব্যবহার করছেন দোকানিরা। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ধানমন্ডি সাত মসজিদ রোডের একজন হকার ঢাকা মেইলকে জানান, অবৈধ এই বিদ্যুৎ সংযোগ তারা নিজেরা নিচ্ছেন না। এর জন্য আলাদা লোক আছে।
দোকানপ্রতি ৩০ টাকা হারে তোলা হয় মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদীয়া হাউজিং এলাকার দোকান থেকে। যা বিদ্যুৎ বিলের জন্য নেওয়া হয়। আবার একই এলাকার রিং রোডে অবৈধ দোকানের সংখ্যা চার শতাধিক। প্রতি দোকানেই বৈদ্যুতিক বাতি ব্যবহার করা হয়।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে একজন পোশাক বিক্রেতা ঢাকা মেইলকে জানান, তাদের বিদ্যুৎ সরবরাহ করে একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন দোকানপ্রতি নেওয়া হয় ২০ টাকা। প্রতিদিন একজন লোক আসেন এই বিল নিতে।
বিজ্ঞাপন
বৈদ্যুতিক বিদ্যুৎ বিল সংগ্রহ করার কাজে নিয়োজিত আছেন মোহাম্মদ রাকিব নামে এক যুবক। দীর্ঘক্ষণ রিংরোড এলাকায় অপেক্ষার পর দেখা মেলে তার।
গণমাধ্যমকর্মী পরিচয় লুকিয়ে কথা বলে জানা যায়, বিল সংগ্রহের তথ্যটি সঠিক। তবে তারা বৈদ্যুতিক মিটার ব্যবহার করে বৈধভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছেন বলে দাবি ওই কর্মীর। রাজধানীর পল্টন, গুলিস্তান, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় তাদের সংযোগ আছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন
আতঙ্কের জনপদ মোহাম্মদপুর!
রাকিবের দাবি, রিংরোড এলাকার টিক্কাপাড়া মসজিদের সামনে তাদের মিটার বসানো আছে। সে মিটার থেকে শিয়া মসজিদ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করেন তারা।
তবে বিল সংগ্রহ করে রাকিব চলে যাওয়ার পর লোডশেডিং হয় ওই এলাকায়। দেখা যায়, রিংরোডের সূচনা কমিউনিটি সেন্টারের উত্তর দিকের অংশের সব লাইট জ্বলছে৷ লোডশেডিংয়ের কারণে নিভে গেছে দক্ষিণ দিকের সব দোকানের আলো।
খোদ দোকানিদের ভাষ্য, রাকিবের দেওয়া তথ্য সঠিক হলে কোনো দোকানের বাতি বন্ধ হওয়ার কথা না। কেননা, যে এলাকায় মিটার বসানো আছে বলে রাকিব দাবি করেছেন, সেই টিক্কাপাড়া এলাকায় লোডশেডিং হয়নি।
গাবতলী, কল্যাণপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কের পাশের অবৈধ দোকানে ব্যবহার হচ্ছে বিদ্যুৎ। তবে তা সরাসরি বিদ্যুতের খুঁটি থেকে নামানো। নেই কোনো মিটার।
আগারগাঁও, মিরপুর-১, মিরপুর-২, মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় একইভাবে বিপণন সংস্থার বিদ্যুৎ চুরি করে ব্যবহার করা হচ্ছে সড়কের পোশাক ও খাবার বিক্রির দোকানে। এসব এলাকা থেকে দোকানপ্রতি ৩০ থেকে ৫০ টাকা হারে বিল তোলার তথ্য পাওয়া গেছে।
রাজধানীতে বিদ্যুৎ বিপণন করে দুটি সংস্থা। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) এবং ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো)। এর মধ্যে বিদ্যুৎ চুরির বিষয়ে জানতে চাইলে ডিপিডিসির অপারেশন বিভাগের নির্বাহী পরিচালক কিউ এম শফিকুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে জানান, সড়কের ভ্রাম্যমাণ দোকানে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে একটি প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। সেই প্রতিষ্ঠানেরই অভিযোগ, অন্য কেউ তার এলাকায় ঢুকে পড়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগও রয়েছে। পুরো বিষয়টি তদারকির জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
কিউ এম শফিকুল ইসলাম বলেন, 'কমিটিতে ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় পেরিয়ে গেছে। আমরা তাদের আবারও বলব, দ্রুত তাদের রিপোর্ট দিতে। তারা যে সুপারিশ করবে, আমরা সে অনুযায়ী একটা পরিকল্পনা করে ব্যবস্থা নেব।'
তিনি জানান, গত বছর বিপণন সংস্থাটির সিস্টেম লস ছিল ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত সেই সিস্টেম লস ৪ দশমিক ৩ শতাংশ।
তবে ডেসকোর দাবি, তাদের এলাকায় বিদ্যুৎ চুরির ঘটনা নেই। সংস্থাটির অপারেশন বিভাগের নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে এই দাবি করেন। তিনি বলেন, 'আমাদের টিম সকালে এবং সন্ধ্যায় তদারকি করে। এখানে সরাসরি খুঁটি থেকে বিদ্যুৎ ব্যবহার হয় না।'
কারই/জেবি