শনিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

ছিনতাইয়ে ব্যবহার হচ্ছে ব্যাটারিচালিত রিকশা!

কাজী রফিক
প্রকাশিত: ২১ অক্টোবর ২০২৪, ১০:০৮ পিএম

শেয়ার করুন:

ছিনতাইয়ে ব্যবহার হচ্ছে ব্যাটারিচালিত রিকশা!
ছবি: ঢাকা মেইল
  • যাত্রী ও চালক বেশে ছিনতাই
  • দ্রুতগতির সুবিধা নিচ্ছে ছিনতাইকারীরা
  • রেজিস্ট্রেশন নাম্বার না থাকায় হচ্ছে না শনাক্ত
  • পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় নিচ্ছে সুযোগ

রাজধানী ঢাকার নতুন যন্ত্রণা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। ক্ষমতার পালাবদলে রাজধানীজুড়ে এই রিকশার দাপট বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। ট্রাফিক ব্যবস্থার ‍দুর্বলতার সুযোগে সব সড়কে বেড়েছে এসব রিকশার আনাগোনা। বেপরোয়া এসব রিকশার কারণে দুর্ঘটনাও ঘটছে অহরহ। এই অবস্থায় ব্যাটারিচালিত রিকশা নতুন এক আতঙ্ক হয়ে সামনে এসেছে। এই রিকশা ব্যবহার করে দুর্বৃত্তরা নেমেছে ছিনতাইয়ে। দ্রুতগতির বাহন হওয়ায় এর দ্বারা ছিনতাই করে মুহূর্তে পালিয়ে যেতে পারছে তারা। আবার এ ধরনের রিকশার রেজিস্ট্রেশন নাম্বার প্লেট না থাকায় শনাক্তও করা যাচ্ছে না।


বিজ্ঞাপন


ব্যাটারিচালিত রিকশা ব্যবহার করে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি গাবতলী থেকে সোয়ারিঘাট বেড়িবাঁধ সড়ক, বেড়িবাঁধ চার রাস্তার মোড় থেকে বসিলা এবং গাবতলী সেতু এলাকায় ঘটছে। তবে গত কয়েক দিনে মোহাম্মদপুর থানা এলাকাতেই ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটেছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছিনতাইকারীদের একাংশ পায়ে হেঁটেই গণছিনতাই করছে৷ তবে তাদেরই একটি অংশ আবার ছিনতাই কাজে ব্যবহার করছে ব্যাটারিচালিত রিকশা।

Rikshw2


বিজ্ঞাপন


গত শনিবার রাতে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকার ছিনতাইয়ের শিকার হন মো. পারভেজ হাসান। ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে তিনি ঘটনার বর্ণনা দেন।

পারভেজ বলেন, 'আমি কাজ শেষে বাসায় যাচ্ছিলাম। রাত ১১টার মতো বাজে। প্রতিদিনই এমন টাইমেই যাই। একটা অটোরিকশা এলো, আমার পাশে থামল। রিকশা থেকে তিনজন নেমে আমাকে ঘিরে ধরল। সবার হাতেই ছুরি। আমার মোবাইল, মানিব্যাগ, এয়ারপড নিয়ে গেল। তারা আবার রিকশায় উঠে চলে গেল।'

সাত মসজিদ হাউজিং এলাকার বাসিন্দা মো. সিরাজ (ছদ্মনাম) ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, 'ভাঙা মসজিদ (সাত মসজিদ হাউজিং) এলাকায় প্রচুর ছিনতাইকারী থাকে। আবার এলাকার গেটে লেখা- সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত এলাকা। মোহাম্মদপুরের ছিনতাইকারীদের অর্ধেকই এই এলাকায় থাকে। সন্ধ্যা হলে এরা একটা অটোরিকশা নিয়ে বের হয়। এক রিকশায় চার/পাঁচজন থাকে, রিকশাওয়ালাও ওদেরই লোক, যারে রাস্তায় একা পায়, তারেই ছিনতাই করে।'

আরও পড়ুন

৩০ টাকার ব্রেকের ওপর তিন জীবন

তার এই বক্তব্যের সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে খোদ ছিনতাইকারীদের বক্তব্যে। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ছিনতাই কাজে জড়িত একজন ঢাকা মেইলের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয়তা কম হওয়ায় তারা ছিনতাইয়ে জড়িয়েছেন। ছিনতাই কাজে ব্যাটারিচালিত রিকশা ব্যবহারের বিষয়টিও স্বীকার করেন তিনি।

Rikshow3

তার ভাষ্যমতে, মোটরসাইকেলে তিনজনের বেশি বসা কঠিন। তবে ব্যাটারির রিকশায় চার থেকে পাঁচজন অনায়াসে জায়গা করে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে দল ভারী থাকে। পাশাপাশি ছিনতাইয়ে ব্যবহার হওয়া দেশীয় অস্ত্রও ব্যাটারিচালিত রিকশায় বহন তুলনামূলক সহজ। আবার মোটরসাইকেল যোগে ছিনতাই করলে রেজিস্ট্রেশন নাম্বার দেখে তাদের শনাক্ত করা যায়। অপর দিকে ব্যাটারিচালিত রিকশায় রেজিস্ট্রেশন নাম্বার থাকে না। ফলে ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করাও সহজ হয় না।

স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের থেকে পাওয়া তথ্য মতে, শুধু ঢাকা উদ্যান থেকে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ চার রাস্তার মোড় পর্যন্ত এলাকায় গত এক সপ্তাহে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে অন্তত ১০টি।

আরও পড়ুন

১৫ লাখ আবাসিক গ্রাহকের বিদ্যুৎ যাচ্ছে রাজধানীর অটোরিকশায়

তবে এ সব ঘটনায় থানায় অভিযোগ এবং মামলার সংখ্যা অনেক কম। এর পেছনেও রয়েছে ভুক্তভোগীদের নানা যুক্তি। ছিনতাইয়ের ঘটনায় আইনগত পদক্ষেপ হিসেবে মামলা দায়ের করতে হয়। ছিনতাইকারী ও ভুক্তভোগীরা একই এলাকার হওয়ায় মামলা করতে ভয় পান ভুক্তভোগীরা। এক্ষেত্রে মোবাইল হারানোর সাধারণ ডায়েরি করেন ছিনতাইয়ের শিকার ব্যক্তিরা।

Rikshw4

ব্যাটারিচালিত রিকশায় ছিনতাইয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী ইফতেখার হাসান ঢাকা মেইলকে বলেন, 'কিছু কিছু ঘটনা আমাদের কাছেও এসেছে। ওরা যা করে, যাত্রীর সাথে ওরাও ওঠে। নির্জন বা আলো কম জায়গা দেখে কেড়েকুড়ে সব কিছু নিয়ে যায়। এ রকম কিছু ঘটনা আমার নোটিশে এসেছে। ছিনতাইয়ের কাজেই যে অটোরিকশা ব্যবহার হচ্ছে, এমন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসেনি।'

আরও পড়ুন

ব্যাটারিচালিত রিকশা রুখতে অসহায় ট্রাফিক পুলিশ!

পুলিশি পদক্ষেপের বিষয়ে জানিয়ে ওসি বলেন, 'আমরা ওই রাস্তায় টহলটা বাড়িয়েছি। মূল বিষয়টা হচ্ছে, ওই এলাকায় যারা বসবাস করে, বিগত ১৫-১৬ বছর ধরে তারা ছিনতাইটাকেই পেশা হিসেবে নিয়েছে। আমার অবজারভেশন - এত অপরাধপ্রবণ এলাকা বাংলাদেশ খুব বেশি নাই, মোহাম্মপুর বেড়িবাঁধের মতো।'

ওসি জানান, বেড়িবাঁধ এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা নতুন নয়। বেড়িবাঁধের পশ্চিম তীরে বসতি গড়ে ওঠার পর থেকেই ছিনতাইকারীরা সক্রিয় ছিল, যা এখনো আছে। তবে পুলিশি টহল বৃদ্ধির কারণে তা আগের তুলনায় কমেছে বলেও দাবি করেছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

কারই/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর