রোববার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

থেমে নেই সাদিক অ্যাগ্রো

কাজী রফিক
প্রকাশিত: ০৬ জুলাই ২০২৪, ১০:০০ পিএম

শেয়ার করুন:

থেমে নেই সাদিক অ্যাগ্রো

🔴 উচ্ছেদ হয়নি খালের জায়গায় সাদিক অ্যাগ্রোর আরেক খামার
🔴 খালের উপর গড়ে তোলা হয়েছে শাহী মিষ্টির কারখানা
🔴 টানা উচ্ছেদ, অভিযানেও থেমে নেই ব্যবসা

নিষিদ্ধ গরু আমদানি, খালের জায়গা দখল করে একেরপর স্থাপনা নির্মাণ, আশ্চর্যজনক দামে পণ্য বিক্রিসহ ডজন খানেক অভিযোগ সাদিক অ্যাগ্রোর বিরুদ্ধে। এরইমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির দুইটি খামার উচ্ছেদ করেছে সিটি করপোরেশন। যা খালের জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছিল। তবুও থেমে নেই প্রতিষ্ঠানটি। উচ্ছেদ কিংবা সরকারি সংস্থার কর্মকাণ্ডকে যেন গায়েই মাখছে না সাদিক অ্যাগ্রো। 


বিজ্ঞাপন


খালের প্লাবন ভূমির ৩০ ফুটের মধ্যে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। উচ্চ আদালতের এমন আদেশের প্রতিপালন করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। গত ২৭ জুন  রামচন্দ্রপুর খাল দখল করে গড়ে তোলা সাদিক অ্যাগ্রোর এক স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে নগর কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া একই দিনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখল করা প্রতিষ্ঠানটির আরও এক স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।

sadeeq-agro2

উচ্ছেদের পর ভাঙা স্থাপনা নিলামে বিক্রি করা হয়। উন্মুক্ত নিলামে যারা এসব ভাঙারি কিনেছেন এরইমধ্যে তারা তা সরিয়ে নিয়ে গেছেন। ফলে কয়েকদিন আগেও কোটি কোটি টাকার গরু, ছাগল নিয়ে গড়ে তোলা বিশাল সাম্রাজ্য এখন খোলা ময়দান। 


বিজ্ঞাপন


শনিবার (০৬ জুলাই) সকালে নগরীর মোহাম্মদপুরের সাত মসজিদ হাউজিং এলাকার এক নং সড়কের পশ্চিমে খাল সংলগ্ন জায়গায় গিয়ে দেখা যায়, সাদিক অ্যাগ্রোর স্থাপনার চিহ্নও সেখানে নেই। একই অবস্থা নবীনগর হাউজিং এলাকার সাত নং সড়কের মুখেও। 

তবে এই দুই প্রতিষ্ঠান ছাড়াও সাদিক অ্যাগ্রোর রয়েছে আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে নবীনগর হাউজিং এলাকার ১৬ নং সড়কে খালের জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে খামার। এই খামারটি থেকে গত ৩ জুলাই অভিযান চালিয়ে ছয়টি ব্রাহমা জাতের গরু জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

তবে খালের প্লাবন ভূমিতে খামার গড়ে তোলা হলেও সেদিকে এখনো নজর দেয়নি কেউ।

sadeeq-agro5

একই চিত্র নবীনগর হাউজিং এলাকার সাত নং সড়কে মিষ্টি ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন করা একটি কারখানায়। সাদিক অ্যাগ্রোর শাহী কারখানা নামে পরিচিত জায়গাটিও পুরোপুরি খালের উপর।

জানা গেছে, রামচন্দ্রপুর খাল ভরাট করে সেখানে প্রথমে গড়ে তোলা হয় একটি বাজার। সেই বাজার অনেক বছর ছিল। পরে সেই দখলকৃত জায়গার মালিকানা বদনায়। জায়গাটি কিনে সেখানে মিষ্টির কারখানা করে সাদিক অ্যাগ্রো। আবারও সেই জায়গায় মালিকানা বদলায়। সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক মো. ইমরান হোসেন জায়গাটি অন্য একজনের কাছে বিক্রি করে দেন। তবে ওই জায়গাতে এখনো রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির কারখানা।

গত ২৭ জুনের অভিযানে প্রায় ৪০০ মিটার দূরের স্থাপনা ভাঙা হলেও মিষ্টির কারখানা রয়েছে অক্ষত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোতাকাব্বীর আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, খালের জায়গায় কোনো স্থাপনা থাকবে না। একে একে সকল স্থাপনাই উচ্ছেদ করা হবে। খাল দখলমুক্ত করে সেখানে পানির প্রভাব ফিরিয়ে নিয়ে আসা হবে। পাশাপাশি স্থানীয় মানুষের চলাফেলার জন্য দৃষ্টিনন্দন জায়গাও করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।

সিটি করপোরেশনের অবস্থান যাই হোক না কেন, সাদিক অ্যাগ্রোর ব্যবসা থেমে নেই। দুই খামারে উচ্ছেদ অভিযান এবং তা গুড়িয়ে দেওয়ার পরেও খালের জায়গা ছাড়ছে না প্রতিষ্ঠানটি।

sadeeq-agro4

নবীনগর হাউজিং এলাকার ১৬ নং সড়কের খামারে দুদকের অভিযানের পরেও আগের অবস্থানেই রয়ে গেছে খামারটি। 

স্থানীয়দের মতে, খামারের প্রায় ১৫ ফুটের মতো জায়গা খালের। যা সাদিক অ্যাগ্রো দখল করেছে।

এছাড়া টানা উচ্ছেদ ও অভিযানের মধ্যে থাকলেও নবীনগর হাউজিং এলাকার সাত নং সড়কের মিষ্টির কারখানা চলমান রয়েছে।

sadeeq-agro6

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিন তলা ভবনের পুরোটাই খালের উপর। ভবনের নিচ তলায় মিষ্টি ও দুগ্ধজাত পণ্য তৈরি করা হয়। আগে ভবনের প্রধান ফটক খোলা থাকলেও এখন তা বন্ধ থাকে। বাইরে থেকে গেটে তালা ঝুলিয়ে ভেতরে চলে স্বাভাবিক কর্মযজ্ঞ।

এই কারখানায় উৎপাদিত পণ্য বিক্রি হয় মোহাম্মদপুর তাজমহল রোডের বিক্রয় কেন্দ্রে। একই পণ্য বিক্রি হয় গুলশানে সাদিক অ্যাগ্রোর আরও এক দোকানে। যদিও সে দোকানও অনুমোদনহীন।

মোহাম্মদপুর ও গুলশানের দুই দোকানে যে সকল ফাস্টফুড বিক্রি হয়, তা উৎপাদন হয় মোহাম্মদপুরের সাত সমজিদ হাউজিং এলাকার এক নং সড়কে। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, মশা-মাছি উপদ্রব, অস্বাস্থ্যকর কর্মী বেশ-ভূষার মধ্যেই তৈরি হচ্ছে সকল পণ্য।

sadeeq-agro

সাদিক অ্যাগ্রোর পণ্যের দাম অস্বাভাবিক 

প্রতিষ্ঠানটি একেকটি বাটারবন বিক্রি করছে ৭৪ টাকায়। সাত ইঞ্চি বাই সোয়া তিন ইঞ্চি আকারের বাটারবনের দামকে স্বাভাবিক মনে করেন না সিংহভাগ ভোক্তা। 

সাদিক অ্যাগ্রো বিক্রি করছে কলিজার সিঙ্গারা। দাম ৯৪ টাকা ৫০ পয়সা। গরুর মাংসের সমুচা ৭৪ টাকা। এর মধ্যে গরুর মাংস ও কলিজা থাকলেও আকার স্বাভাবিক সিঙ্গারা ও সমুচার মতো। 

গরুর মাংসের শাহী পেটিস। যার দাম ১৫৮ টাকা। সাধারণ পেটিস ১৩১ টাকা।

মুরগী পালনের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হলেও সাদিক অ্যাগ্রোর বিক্রি করে মুরগির মাংসের বিভিন্ন পদ। মুরগির মাংসের একেকটি পেটিস বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। 

সাধারণ সবজির রোল বিক্রি করা হচ্ছে ৬৩ টাকা পিস দরে। 

এছাড়া এক পাউন্ড ওজনের একেকটি ফ্রুট কেক ৪৬২ টাকায় বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি। ২৫০ গ্রাম ওজনের টোস্টের দাম ১০২ টাকা।

sadeeq-agro1

এ সকল বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও সেদিকে নজর নেই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের।

জানা গেছে, সাদিক অ্যাগ্রোর কারখানাটিতে অতীতে অভিযান চালিয়েছিল সংস্থাটি৷ সে সময় প্রতিষ্ঠানটিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। বর্তমানে দেশের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনার মধ্যে একটি হলেও এখনো এদিকে নজর দেয়নি ভোক্তা অধিকার।

পরিচয়প্রকাশ না করার শর্তে সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা ঢাকা মেইলকে জানান, ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষ সাদিক অ্যাগ্রোর পণ্যের অস্বাভাবিক দাম সম্পর্কে অবগত। একই সঙ্গে নোংরা পরিবেশে খাদ্য উৎপাদনের বিষয়েও মাঝে মধ্যে তদারকি করা হয়। তবে অভিযানের বিষয়ে সংস্থাটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের আপাতত কোনো নির্দেশনা নেই।

খাল দখল, নোংরা পরিবেশে খাদ্য উৎপাদন ও অস্বাভাবিক দামে তা বিক্রির বিষয়ে জানতে প্রতিষ্ঠান প্রধান মো. ইমরান হোসেনকে একাধিকবার ফোন করাও তিনি কল ধরেননি। সাদিক অ্যাগ্রোর খামারে সিটি করপোরেশনের অভিযানের পর থেকেই নিজেকে গণমাধ্যম থেকে আড়াল করেছেন তিনি। 

কারই/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর