মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

কোটি টাকায় গরু বিক্রি, কর দেওয়ার সময় দেখাতেন ১৪ হাজার!

ঢাকা মেইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ জুন ২০২৪, ০৫:৪৯ পিএম

শেয়ার করুন:

কোটি টাকায় গরু বিক্রি, কর দেওয়ার সময় দেখাতেন ১৪ হাজার!

গেল ঈদুল আজহায় কোটি টাকায় ‘উচ্চ বংশীয়’ গরু এবং ১৫ লাখ টাকায় ছাগল বিক্রি করে আলোচনায় আসেন সাদিক অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী মো. ইমরান হোসেন। এরপর থেকে নিয়মিতই সংবাদপত্রের শিরোনাম হচ্ছেন গবাদি পশুর খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) এই সভাপতি। তার খামারে বিভিন্ন প্রজাতির গরু-মহিষ-উটের দাম হাঁকিয়ে বিক্রি করা হয় কোটি টাকা। অথচ কর দেওয়ার সময় কোটি টাকায় বিক্রি করা গরুর দাম দেখানো হয়েছে ১৪ হাজার টাকারও কম।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য বলছে— সাদিক অ্যাগ্রোর বছরে আয় মাত্র ৮১ লাখ ২১ হাজার ২৬৯ টাকা। সাদিক অ্যাগ্রোর প্রদর্শিত বার্ষিক আয় প্রতিষ্ঠানটির একটি গরু বিক্রির টাকার চেয়েও কম। তবে খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও বিশ্লেষকরা প্রতিষ্ঠানটির এই ধরনের ত্রুটিপূর্ণ তথ্য বিশ্বাসযোগ্য মনে করছেন না।


বিজ্ঞাপন


ইমরান হোসেন কর অঞ্চল-৬-এর ১৩১ নম্বর সার্কেলে তার কর রিটার্ন জমা দেন। তার করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর ৫৬৫০৩৭৯১০৬৭০। জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ৭৩২৩৯৮৯২২১৫। ২০২২-২৩ করবর্ষের নথি সূত্রে জানা গেছে, সাদিক অ্যাগ্রো ছাড়াও তিনি ইমরান হোসেন ফিশ ফার্মের স্বত্বাধিকারী।

এছাড়া জালালাবাদ স্টিল লিমিটেড, জালালাবাদ স্টিল বিল্ডিং লিমিটেড, জালালাবাদ মেটাল লিমিটেড ও লাকি স্টিল করপোরেশনের পরিচালক। বর্তমানে তিনি রাজধানীর বনানীর ১৩ নম্বর রোডের ই ব্লকের ১০৩ নম্বর বাসায় থাকেন। তবে তার স্থায়ী ঠিকানা: বাসা নম্বর-৮৬, কলাবাগান।

২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সাদিক অ্যাগ্রোর মোট বিক্রির পরিমাণ ২ কোটি ৮ লাখ ১৫ হাজার ২৩৬ টাকা। তবে এই সময়ে তিনি বাছুর কেনা বাবদ খরচ করেছেন ৬ লাখ ১২ হাজার ৪৭০ টাকা।

পশুখাদ্য কিনেছেন ৫১ লাখ সাত হাজার ৮১০ টাকার। ওষুধ কেনার খরচ ৮ লাখ ৬৫ হাজার ৩৬৬ টাকা। কর্মীদের মজুরি দিয়েছেন ১২ লাখ ৭২ হাজার ৪২৫ টাকা। এভাবে রক্ষণাবেক্ষণ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, গবেষণা ও উন্নয়ন এবং অন্যান্য খাতে সর্বমোট ব্যয় করেছেন ৮৪ লাখ ৮২ হাজার ৮৩৪ টাকা। এর সঙ্গে অন্য সব খরচ বাদ দিয়ে তার বাৎসরিক আয় ৮১ লাখ ২১ হাজার ২৬৯ টাকা।


বিজ্ঞাপন


কিন্তু তার এই হিসাবের সঙ্গে বাস্তবতার বিশাল ফারাক। শুধু কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করেই তার দেড় হাজার পশু বিক্রি হয়। এর মধ্যে রয়েছে ব্রাহমা, ইন্দো ব্রাজিল, হোলস্টাইন, দেশাল, শাহীওয়ালসহ বেশ কয়েকটি জাতের গরুর পাশাপাশি মহিষ ও ছাগল। এছাড়া তার ফার্মে উটও বিক্রি করা হয়।

তার ফার্মে বেশির ভাগই কোটি টাকা দামের গরু। বছরজুড়ে দেড় হাজার গরু বিক্রি করলেও সাদিক অ্যাগ্রোর বছরের আয়ের হিসাবের সঙ্গে করের হিসাব মেলানো দুষ্কর। ইমরানের বিক্রয়ের তথ্যানুযায়ী, ২ কোটি ৮ লাখ ১৫ হাজার ২৩৬ টাকায় তিনি দেড় হাজার গরু বিক্রি করেছেন। সে ক্ষেত্রে প্রতিটি গরুর দাম পড়েছে ১৩ হাজার ৮৭৭ টাকা। বর্তমান বাজারে এই দামে একটি মাঝারি মানের ছাগলও কিনতে পাওয়া যায় না। তার ফার্মের একটি ছাগল ১২ লাখ টাকায় বিক্রির ইস্যুতে পুরো দেশ এখন সরগরম।

অন্তত ১০ লাখ টাকা গড়ে প্রতিটি গরু বিক্রি করলেও দেড় হাজার গরুর দাম দাঁড়ায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। তবে তিনি কর দিতে গিয়ে এই বিশাল অঙ্কের টাকার তথ্য গোপন করেছেন। এর আগেও এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) ইমরানের কর ফাঁকির বিষয়ে তদন্ত করেছিল। ওই অনুসন্ধানে কর ফাঁকির তথ্য প্রমাণিত হয়েছিল। তবে সিআইসি সূত্রে জানা গেছে, এ বিষয়ে আবার তদন্ত হতে পারে। আগের তদন্তের চেয়ে এখন তার বিষয়ে অনেক বেশি তথ্য হাতে রয়েছে। আগামী সপ্তাহে তার ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হতে পারে।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর