শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

মামলার তথ্য লুকিয়ে প্রার্থীর হলফনামা, অভিযোগ ইসিতে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৪ মে ২০২৪, ০৮:৪৭ পিএম

শেয়ার করুন:

মামলার তথ্য লুকিয়ে প্রার্থীর হলফনামা, অভিযোগ ইসিতে
ছবি: সংগৃহীত

নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচনী হলফনামায় প্রার্থীকে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা আছে কি না, কিংবা কোনো মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন কি না তা উল্লেখ করার কথা। কিন্তু চলমান ষষ্ঠ দফা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার ভোটে প্রতারণাসহ একাধিক মামলার তথ্য লুকিয়ে প্রার্থী হয়েছেন চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থী ওমর ফারুক রুমী। আগামী ২১ মে অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনকে সামনে রেখে ওমর ফারুকের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আবেদন জমা পড়েছে খোদ নির্বাচন কমিশনে।

নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া ২৬ পাতার অভিযোগপত্রের সঙ্গে মামলার কপি, হলফনামায় তথ্য গোপনের কাগজও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। শাহরাস্তির বাসিন্দা মো. সফিউল আজম স্বপন নামে একজন ভোটার নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দেওয়ার আগে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক, রিটানিং কর্মকর্তার (অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক) কাছেও লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।


বিজ্ঞাপন


অভিযোগ ও অন্যান্য দলিলপত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওমর ফারুক রুমীর বিরুদ্ধে ঠিকাদারি কাজে অংশীদারির নামে প্রতারণাসহ একাধিক মামলা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআইয়ের) তদন্তে প্রতারণা মামলার করা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

আদালত সমন জারি করার পরও এই ব্যক্তি হাজির হননি বলেও দাবি করা হয়েছে অভিযোগপত্রে।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার গাজীখালী নদীর ১৫ কিলোমিটার খাল খননের ঠিকাদারি কাজে অংশীদারির নামে ওমর ফারুক দুই হাজার ২০ সালে বিয়ন্ড মিডিয়ার কাছ থেকে বিভিন্ন সময় মোট সাড়ে তিন কোটি টাকা নেন। পরে কাজটি না হলেও সেই টাকা ফেরত দেননি ওমর ফারুক। টাকা পরিশোধে এক পর্যায়ে বিয়ন্ড মিডিয়াকে ২৫ লাখ টাকার দুটি চেক দেন তিনি। তবে চেকের বিপরীতে তহবিল অপ্রতুল উল্লেখ করে চেক ফেরত দেয় আইএফআইসি ব্যাংকের বনানী শাখা।

এতে উল্লেখ করা হয়েছে, চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মো. ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা-৪০৬, ৪২০ ও ৫০৬ এর অধীনে বিজ্ঞ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট নং-৬, ঢাকায় একটি চলমান প্রতারণার মামলা নং- সি, আর মামলা- ৭৮৯/২০২২ ও দি নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট অ্যাক্ট, ১৮৮১ এর ধারা-১৩৮ এর অধীনে আরও একটি চলমান মামলা নং-সি, আর মামলা-২৪২১/২০২২ এর সত্যতা পাওয়া যায়। উক্ত প্রতারণার মামলায় বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে  পিবিআই ওমর ফারুককে জিজ্ঞাসাবাদ করে। সার্বিক তদন্তে উক্ত প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত পিবিআই গত বছরের ৫ এপ্রিল উক্ত প্রতিবেদনটি দাখিল করলে তা আদালতে গৃহীত হয়।


বিজ্ঞাপন


বিষয়টি নিয়ে মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী তুহিন হাওলাদার বলেন, ওমর ফারুক তুহিনের বিরুদ্ধে চলমান অর্থ আত্মসাৎ মামলায় পিবিআই তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। তার জালিয়াতির বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে।

আদালত ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছে এমনটা জানিয়ে তিনি বলেন, আসামি আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় কোর্টের আগামী কার্যদিবসে আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদন করা হবে।

অন্যদিকে অভিযুক্ত ওমর ফারুক রুমির কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘এই বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না, আদালতের সমনও তার কাছে আসেনি।’

আরও পড়ুন

মৌলভীবাজারে এমপির বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান প্রার্থীর অভিযোগ

প্রার্থিতা ফিরে পেলেন ওবায়দুল কাদেরের ভাই

উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মা-মেয়ের লড়াই

ওমর ফারুক রুমির বিরুদ্ধে মামলা দুটি চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ঢাকায় বিচারাধীন রয়েছে।

শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাচনে আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগকারী মো. সফিউল আজম স্বপনের সঙ্গে কথা বলে ঢাকা মেইল। তিনি বলেন, ‘বিবেকের তাড়নায় আমি অভিযোগ দিয়েছি। কারণ যিনি আমার এলাকার জনপ্রতিনিধি হবেন তিনি শুরুতেই মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। হলফনামায় নিজের মামলার কথা এড়িয়ে গেছেন। তাই আমি নিজের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন করেছি। এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো নজির দেখছি না। তিনি তো নির্বাচন করছেন।’

অভিযোগ দেওয়ার কারণে বিভিন্নভাবে তাকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে জানিয়ে স্বপন বলেন, ‘কেন অভিযোগ করলাম তা নিয়ে বিভিন্নভাবে আমার কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে।’

অবশ্য অভিযোগের বিষয়ে একাধিকবার ওমর ফারুকের ব্যক্তিগত নম্বরে যোগাযোগ করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

অভিযোগের বিষয় নিয়ে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও রিটানিং কর্মকর্তা বশির আহমেদ ঢাকা মেইলকে অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে অভিযোগ দেওয়ার সময় অতিক্রম হয়ে যাওয়ায় এ নিয়ে আইন অনুযায়ী তার কিছু করার সুযোগ নেই বলে জানান এই কর্মকর্তা। ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আইন অনুযায়ী প্রার্থিতা ঘোষণার তিন দিনের মধ্যে কোনো অভিযোগ জমা পড়লে তা নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাজ করার সুযোগ থাকে। কিন্তু সময় পার হওয়ার পর অভিযোগ দিলে প্রার্থিতা বৈধ-অবৈধতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত পুরোপরি নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারে চলে যায়।’

বিইউ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর