সোমবার, ৬ মে, ২০২৪, ঢাকা

রানা প্লাজা ট্রাজেডির ১১ বছর, কবে শেষ হবে বিচারকাজ?

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৩ এএম

শেয়ার করুন:

রানা প্লাজা ট্রাজেডির ১১ বছর, কবে শেষ হবে বিচারকাজ?
ফাইল ছবি

ঢাকার অদূরে সাভারের রানা প্লাজা ধসে হাজারো শ্রমিক হতাহতের ঘটনার এগার বছর পূর্তি হচ্ছে আজ। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঢাকার সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাছে রানা প্লাজা নামে আটতলা ভবনটি সকাল ৯টার দিকে ধসে পড়ে। আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন-আইএলও এর হিসাব মতে, ওই ঘটনায় ১১৩২ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন পোশাক শ্রমিক। আহত অবস্থায় উদ্ধার হন প্রায় আড়াই হাজার। যাদের অনেককেই আজীবন পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে।

এই ঘটনাটিকে বিশ্বের ভয়াবহতম 'ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্র্যাজেডি; হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়ে থাকে। যার প্রভাবে সে সময় বাংলাদেশে শ্রমিকদের কর্ম পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল।


বিজ্ঞাপন


ভয়াবহ এই ট্রাজেডির ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। বিচারের এই দীর্ঘসূত্রতায় নিহতের পরিবার ও আহতরা তাদের জীবদ্দশায় ন্যায়বিচার পাবেন কী না তা নিয়েই সংশয়ে আছেন।

রানা প্লাজা ধসে হতাহতের ঘটনায় সব মিলিয়ে ১৪টি মামলা দায়ের হওয়ার কথা জানিয়েছেন আইনজীবীরা। এর মধ্যে রয়েছে, অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে পুলিশের হত্যা মামলা, ইমারত নির্মাণ আইন না মেনে ভবন নির্মাণ করায় রাজউকের করা মামলা এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলা।

আরও পড়ুন

রানা প্লাজার দুঃসহ স্মৃতি ছুঁয়ে কাঁদে তারা 

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরই ১১টি মামলা দায়ের করে বলে জানা যায়। এর মধ্যে কেবল দুদকের দায়ের করা দুটি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


Rana4

সম্পদের হিসাব দাখিল না করা সংক্রান্ত নন-সাবমিশন মামলায় ২০১৭ সালের ২৯ অগাস্ট প্রধান আসামি সোহেল রানার তিন বছর কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছিল ঢাকার ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালত। ওই মামলায় তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এদিকে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে দুদকের দায়ের করা মামলায় ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ রানার মা মর্জিনা বেগমের ছয় বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সেইসাথে তার প্রায় সাত কোটি টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে আদালত। বাকি মামলাগুলোর বিচার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

আইনজীবীরা জানিয়েছেন, হত্যা মামলার কয়েকজন আসামি অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে আপিল করায় বার বার পিছিয়েছে সাক্ষ্যগ্রহণ। হত্যা ও ইমারত আইনের মামলা দুটি ২০১৩ সালে দায়ের হলেও বিচারের জন্য প্রস্তুত হয় তিন বছর পর।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘নিরাপদ কর্মক্ষেত্র তৈরির অর্জন ও চ্যালেঞ্জ: রানা প্লাজা–পরবর্তী উদ্যোগসমূহের অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা রানা প্লাজা ভবন ধসের ১১ বছর পরেও ভুক্তভোগীদের অধিকার আদায় ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের লক্ষ্যে দায়ের করা মামলাগুলোর বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা এবং চলমান মামলাগুলোর নিষ্পত্তিতে দেরি হওয়ার কারণ চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্টদের করণীয় বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরিতে সমন্বিত প্রচেষ্টার সঙ্গে জবাবদিহি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ ছাড়া দুর্ঘটনা–সংশ্লিষ্ট বিদ্যমান সব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা, কার্যকর ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা ও দর-কষাকষির পরিসর তৈরি করতে হবে।

আরও পড়ুন

এখনও বাঁচার আকুতি রানা প্লাজার শ্রমিকদের

রানা প্লাজার মামলায় কেন এত দেরি হচ্ছে তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এই ঘটনায় দায়ের করা মামলার অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটরই জেলা ও দায়রা জজ আদালত ঢাকার বিমল সমাদ্দার বলেন, ২০১৩ সালে ২৫ এপ্রিল যখন মামলা হয় তখন ২০৩ জন শ্রমিক নিহত হয় বলে উল্লেখ করা হয়। ২০১৬ সালে মামলার চার্জশিট হওয়ার পর ২০১৭ সালে মামলা বিচারের জন্য প্রস্তুত হয়। কিন্তু মামলার চার্জ গঠন হবার পর আসামিপক্ষের থেকে হাইকোর্ট থেকে স্থগিত আদেশ দেওয়া হয়। তাই যেখানে উচ্চ আদালত যেখানে স্থগিত আদেশ দেয় সেখানে আমাদের বিচারক আদালতের কিছু করার থাকে না। আমাদের বিচারকদের চোখে পর্দা দেওয়া থাকে আমরা কাগজ কলম ছাড়া কোনো বিচার কার্যক্রম করতে পারি না।  

Rana3

এদিকে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির উদ্যোগে দোষীদের শাস্তি এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সম্মানজনক ক্ষতিপূরণের দাবিতে ‘রানা প্লাজা হত্যাকাণ্ডের ১১ বছর: হাজারো প্রাণ ও স্বপ্নের গল্প’ নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সাভারে রানা প্লাজার সামনে সকাল ৯টায় দুই দিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন হয় এই আলোকচিত্র প্রদশর্নীর মধ্য দিয়ে।

আরও পড়ুন

রানা প্লাজায় আহত ‘হাওয়া’ এখন পথের ভিখারি

প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে আহত শ্রমিক জেসমিন, যিনি রানা প্লাজা ভবনের ধ্বংসস্তূপে দুই দিন আটকে থাকার পর উদ্ধার হয়েছিলেন।

প্রদর্শনীতে মোট চারজন আলোকচিত্রীর কাজ এবং পোশাকশ্রমিকদের সন্তানদের মধ্যে সাতজন আঁকিয়ের চিত্রকর্ম এবং জীবিত থাকা অবস্থায় স্টুডিওতে ২০ জন শ্রমিকের তোলা ছবি স্থান পেয়েছে।

জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর