দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। সংসদের এককভাবে দুশোর বেশি সিট থাকায় এবারও শক্তিশালী সরকার হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনার নেতৃত্বে শপথ নিয়েছে নতুন সরকারের ২৫ মন্ত্রী এবং ১১ প্রতিমন্ত্রী। দায়িত্ব নিয়েছেন মন্ত্রী সমমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর ছয় উপদেষ্টা।
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান লক্ষ্য ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়া। একইসঙ্গে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে সরকারের। ধারাবাহিকতা রক্ষার মাধ্যমে এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ নতুন সরকার।
বিজ্ঞাপন
সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে নতুন করে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব করছে দেশের সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের রয়েছে ভিন্ন প্রত্যাশা। উন্নত ও আধুনিক জীবনের পাশাপাশি তারা জীবনমানের উন্নয়ন, দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরা এবং দেশে সুস্থ রাজনৈতিক চর্চা চান। তারা একটি স্থিতিশীল দেশ চান। যেখানে নাগরিকদের মধ্যে থাকবে সমতা, বাকস্বাধীনতাসহ থাকবে মত প্রকাশ ও সবধরনের নাগরিক অধিকার।
বিজ্ঞাপন
নতুন সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা নিয়ে ছাত্র, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের। শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) ঢাকা মেইলের কাছে তারা তুলে ধরেছেন নিজেদের প্রত্যাশার কথা। তেমনই একজন রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান ফয়সাল। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, নতুন সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, সরকার দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোর সমাধানে কাজ করবে। বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমাতে উদ্যোগ নেবে। রাজধানীর মেসের বাসিন্দা হিসেবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে আমরা যথেষ্ট চাপে রয়েছি। পাশাপাশি খাতাসহ সব শিক্ষাসামগ্রীর দাম বেড়েছে। যা আমাদের জন্য বাড়তি চাপের বিষয়। এসবের জন্য দায়ী সিন্ডিকেটকে যেন নিয়ন্ত্রক করে।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাকিল আহমেদ বলেন, জিনিসপত্রের দাম যে হারে বেড়েছে তাতে আমাদের চলা দায় হয়ে গেছে। যে হারে দাম বেড়েছে সে হারে প্রাইভেট সেক্টরে বেতন বাড়েনি। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়েছে শতকরা ৩০ শতাংশ, বিপরীতে আমাদের বেতন বেড়েছে ২-৫ থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ। এতে আমাদের ঢাকায় থাকা খাওয়াই চলে না। পরিবারকে কী দেখব আর নিজেই বা কীভাবে চলব! নতুন সরকারের কাছে দাবি থাকবে, তারা যেন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেয়। পাশাপাশি বেসরকারি সেক্টরের বেতন বাড়াতে মালিকপক্ষের সাথে যেন কথা বলে।
রাজনীতির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি চাই দেশে একটা সুস্থ গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকুক। আমরা হানাহানি ও অস্থিরতা চাই না। গত দুই নির্বাচন ভালো ছিল না। এবারও সরকার নিজেরা নিজেরা ভোট করেছে। আমরা চাই আমাদের ভোটের অধিকার নিশ্চিত হোক। আমরা দেশে প্রকৃত রাজনীতি দেখতে চাই। যেখানে একাধিক দল থাকবে, আমরা আমাদের পছন্দ মতো প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারব।
আরও পড়ুন
সদ্য উকালতির সনদ পাওয়া অ্যাডভোকেট মুশফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকারের প্রতি প্রত্যাশা থাকবে তারা যেন পূর্বের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য কাজ করে। তারা যেন শুধু কাঠামোগত উন্নয়নের দিকে মনোনিবেশ না করে টেকসই উন্নয়নের জন্য কাজ করে। বেকার সমস্যাসহ অর্থনৈতিক সব সমস্যার সাসটেইনেবল সমাধানের দিকে নজর দেয়।
জনগণের অধিকার নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা রাষ্ট্র পরিচালনায় সংবিধানের ৭নং অনুচ্ছেদের প্রতিফলন দেখতে চাই। যেখানে বলা হয়েছে, জনগণই দেশের সকল ক্ষমতার মালিক। এটির জন্য যেন সরকারের সকল স্তরের লোকজন কাজ করে। সংবিধানের কাটাছেঁড়া যেন জনগণের কল্যাণের জন্য হয়। কোনো একটি দল বা গোষ্ঠীর স্বার্থে না হয়। সরকারের দায়িত্বশীলরা যেন দেশ পরিচালনায় সর্বোচ্চ দেশপ্রেমের পরিচয় দেন।
তবে খেটে খাওয়া মানুষদের প্রত্যাশা একটাই- তারা যেন ঠিকভাবে ডাল ভাত খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে। ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় রিকশা চালাতে আসা নাজির মিয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘কে সরকারে আইলো গেলো এগুলো জেনে আমাদের কাজ নাই। আমরা কোনো রকমে ডাল ভাত খাইয়া যাইতে পারলেই হলো। কিন্তু এখন চাল, ডাল, আলুর যা দাম তাতে খাইয়া বাঁচা মুশকিল হয়ে গেছে। সরকার যেন এগুলা কমাইয়া দেয়।’
সবজি ব্যবসায়ী সেলিম বলেন, ‘আমরা ছোটখাটো ব্যবসায়ী মানুষ। আমাদের কাছে একদম সাধারণ মানুষেরা আসে। জিনিসপত্রে দামে সবারই কষ্ট। দাম বাড়লে সবাই কেনা কমিয়ে দেয়। অনেকে আমাদের সাথে চিল্লাপাল্লাও করে। কিন্তু দামে তো আমাদের হাত নাই। এসব বড় বড় আড়তদার-ব্যবসায়ীরা করে। সরকারের কাছে চাওয়া তারা যেন এসব সিন্ডিকেট বন্ধ করে দেয়। রাজনৈতিক হানাহানি যেন না হয়। এমন হলে আমাদের ক্ষতিটাই সবথেকে বেশি হয়।’
এমএইচ/জেবি