ষাটোর্ধ্ব আব্দুল করিম, শাহবাগ মেট্রোরেল স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছেন মেট্রোর অপেক্ষায়। এটি তার প্রথম মেট্রো ভ্রমণ। নার্ভাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন উড়াল রেলপথের দিকে। কোন দিক থেকে কখন ট্রেন আসবে তা জিজ্ঞেস করছেন আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকা অন্য যাত্রীদের। লক্ষ্য মেট্রোতে চড়ে মতিঝিল যাওয়া। ঢাকা মেইলের প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় এই যাত্রীর। তিনি বলেন, ‘মতিঝিলে কাজে যাব। এমনিতে বাসে যাই, ট্রেন চালু হাইছে শুনে চড়ার জন্যে এসেছি।’
শুধু আব্দুল করিম নন, তার মতো আরও অনেকেই নিজের এলাকায় মেট্রো স্টেশন চালু হওয়ায় প্রথমবারের মতো চড়তে এসেছেন। আগে চড়লেও কাজের স্থলে স্টেশন চালু হওয়ায় যানজট এড়িয়ে সহজে কর্মক্ষেত্রে আসতে মেট্রোতে উঠেছেন অনেকে। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসক দেখাতে আসা ব্যক্তিরাও রয়েছেন। শাহবাগ স্টেশনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদম সামনে হওয়ায় মেট্রোতে উঠছেন সেবাপ্রত্যাশীরা।
বিজ্ঞাপন
সোমবার (১ জানুয়ারি) নতুন চালু হওয়া শাহবাগ ও কারওয়ান বাজার স্টেশনে সরেজমিনে ঘুরে এসব চিত্র দেখা যায়।
বিজ্ঞাপন
মেট্রোরেলের শাহবাগ স্টেশনটি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের শেষ প্রান্ত থেকে শাহবাগ মোড় পর্যন্ত অবস্থিত। যার পুরোটাজুড়েই রয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বিএসএমএমইউ এবং অন্য পাশে রয়েছে বারডেম হাসপাতাল। ফলে এই স্টেশনে উভয় পথেই হাসপাতাল দুটিতে আগত রোগী ও তাদের স্বজনদের আনাগোনা লক্ষ্য করা গেছে। আবার অনেকেই পরিবারকে নিয়ে মেট্রোতে ঘুরতে স্টেশনটিতে এসেছেন। তেমনই একজন আগারগাঁওগামী ফখরুল ইসলাম। স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে নিয়ে বোনের বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছেন। পরিবাগের এই বাসিন্দা সাধারণ অবস্থায় সড়ক পথে গেলেও শাহবাগ স্টেশন চালু হওয়ায় এবার মেট্রোতে চড়ে যাচ্ছেন।
স্টেশনটিতে মেট্রোর অপেক্ষায় থাকা অবস্থায় এই যাত্রীকে তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ছবি ওঠাতেও দেখা যায়। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সেলফির পাশাপাশি অপর যাত্রীর সাহায্য নিয়ে ছবি ওঠান তারা।
মেট্রোতে করে শেওড়াপাড়া থেকে শাহবাগ স্টেশনে আসা সুজন মিয়া বলেন, ‘মাকে নিয়ে পিজিতে (বিএসএমএমইউ) এসেছি। আমাদের বাসা শেওড়াপাড়ায়। সাধারণত বাসে আসি। আমাদের দিকে মেট্রো চালু হলেও এখানের স্টেশনটি চালু হয়নি। ফলে মেট্রোতে আসার সুযোগ ছিল না। গতকাল এই স্টেশনটিও চালু হয়েছে শুনে মেট্রোতে এসেছি।’
অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই অনেক ভালো লাগছে। ঢাকা সড়কে নারীদের যাত্রা কখনোই স্বস্তিদায়ক নয়। আর অসুস্থ হলে তো কথাই নেই। এছাড়া যানজট তো আছেই। এ অবস্থায় মেট্রোতে আসতে পারা অবশ্যই অনেক স্বস্তিদায়ক, এতে সময়ও বাঁচে।’
কর্মদিবস হওয়ায় এদিন মেট্রোতে ভ্রমণকারীদের সংখ্যা কম ছিল। ফলে স্টেশনে যাত্রীর চাপও তুলনামূলক কম ছিল। তবে এর মধ্যেও মেট্রোতে কর্মরতদের আচরণে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। বিশেষ করে টিকিট কাউন্টারে থাকা সহযোগীর। নতুন যাত্রীদের টিকিট কাটার পদ্ধতি, টাকা জমা নেওয়া ও টিকিট সংগ্রহে সহযোগিতা করতে দেখা যায় কর্মরতদের।
এদিকে শাহবাগ ও কারওয়ান বাজার উভয় স্টেশনেই এখনো কাজ চলমান থাকতে দেখা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্টেশন চালু হলেও মাইনর কিছু কাজ চলমান আছে। তবে তা যাত্রীদের ভ্রমণে কোনো ধরনের বেঘাত ঘটার সম্ভাবনা নেই।
এর আগে গত রোববার (৩১ ডিসেম্বর) ঢাকায় মেট্রোরেলের শাহবাগ ও কারওয়ান বাজার স্টেশন চালু করা হয়। এর মাধ্যমে এমআরটি ৬ লাইনের দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১৬ স্টেশনই চালু হলো। এর আগে ১৩ ডিসেম্বর থেকে ১৩ ও ১৪তম স্টেশন হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিজয় সরণি চালু হয়। তবে আপাতত আগারগাঁও থেকে এ স্টেশনগুলোতে সকাল ৭টা ১০ মিনিট থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলবে।
এমএইচ/জেবি