বাংলাদেশ থেকে বিমানে তিন ঘণ্টার ভ্রমণ শেষে সন্ধ্যার আগে উঠলাম হোটেল রয়েলে। থাইল্যান্ডের পাতায়া সমুদ্র সৈকতের ৩০০ গজ দূরত্বে হোটেলটির অবস্থান। সেখানে ওঠার পর ফ্রেশ হয়ে যে যার মতো নাস্তা করলাম। নতুন শহর। নতুন পরিবেশ। সবকিছুই নতুন। এরপর বেরিয়ে পড়লাম পাতায়া শহরের রাস্তাঘাট ও সমুদ্র সৈকত দেখতে। সঙ্গে ঢাকার দুই সহকর্মী।
হোটেল থেকে বের হয়ে হাঁটা দূরত্বে পাতায়া সৈকতে পৌঁছতে তেমন সময় লাগল না। সূর্য তখন ডুবে গেছে। রাতের আলোতে সৈকতের সৌন্দর্য তেমনটা বোঝা যাচ্ছিল না। সৈকত অনেকটা খা খা করছে। তবে রাত যত বাড়ে ততোই নাকি সৈকতের তীরের সৌন্দর্য বাড়তে থাকে।
বিজ্ঞাপন
সৈকতে সোয়া এক ঘণ্টার মতো সময় কাটানোর পর সঙ্গে থাকা এক সহকর্মী হঠাৎ বললেন চলেন ওয়াকিং স্ট্রিট ঘুরে আসি। তার কথায় সায় দিলেন আরেক সহকর্মীও। বললেন, লাল নীল বাতির জগত দেখে আসি। তাদের প্রস্তাবে রাজি হলাম। সাড়ে আটটা থেকে সাড়ে নয়টার মধ্যে ডিনারের সময় বেঁধে দেওয়ায় দ্রুত হোটেলে ফিরলাম। ডিনার শেষে তিনজন বেরিয়ে পড়লাম ওয়াকিং স্ট্রিট দেখতে।
হেঁটে সেখানে পৌঁছতে প্রায় মিনিট দশেক সময় লেগে গেল। গল্প করতে করতে আমরা পৌঁছলাম ওয়াকিং স্ট্রিটের প্রধান গেটে। গেটে চোখে পড়ল ইংরেজিতে বড় অক্ষরে লেখা ওয়াকিং স্ট্রিট। গেটের মাথার ওপরে লাল নীল সবুজ বাতি জ্বলছে। ভেসে আসছিল কান ফাটানো উচ্চ মিউজিকের শব্দ।
সড়কটিতে ঢুকতেই নানা ব্র্যান্ডের রকমারি পণ্যের দোকান চোখে পড়ে। সেখানকার দৃশ্য দেখে মনে হবে আপনি অন্য গ্রহে এসেছেন। স্রোতের মতো পথ ধরে হাঁটছেন হাজারো মানুষ। সদ্য যৌবনে পা রাখা থেকে শুরু করে জীবন সায়াহ্নে পৌঁছানো বুড়োরাও ছুটছেন প্রমোদ এই নগরীতে।
বিজ্ঞাপন
কী নেই এই সড়কে! মদ, বিয়ারের বার থেকে শুরু করে রেস্টুরেন্ট, খেলনার দোকান, জুয়ার আসর, ড্যান্স পার্টি কোনো কিছুরই অভাব নেই। উদোম পার্টি তো আছেই। তিনজন হাঁটছি আর ওয়াকিং স্ট্রিটের এসব দৃশ্য দেখছি।
হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়ে স্বল্পবসনা অনেক তরুণীকে। সন্ধ্যার পর ম্যাক্সি বা বাইকে চেপে বহুমাত্রিক বিনোদন বৈচিত্র্যের জন্য বিখ্যাত সড়কটিতে আসেন এসব তরুণী। যে যার মতো পশরা সাজিয়ে বসেন জীবিকা নির্বাহে। এসব নারী বারের গেটগুলোর সামনে নাচছেন। তাদের ঘিরে দেখছে একদল যুবক।
সড়কটি যেন নানা দেশের মানুষের কালচারের সমন্বিত রুপ, যা ক্লাব ও পার্টি আকারে এই দেশগুলোর মানুষেরা তুলে ধরছে। আছে ভারতীয় ক্লাব, কোরিয়ান ডান্স পার্টি, চাইনিজ মেয়েদের নাচ।
আমরা যখন তিনজন হাঁটছিলাম অনেক তরুণ প্লাকার্ড হাতে নিয়ে ক্লাবে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানাচ্ছিল। তাদের কথায় গুরুত্ব না দিয়ে আমরা হাঁটছিলাম আর দৃশ্যগুলো দেখছিলাম।
সড়কটিতে রাতের বেলায় কোনো যানবাহন চলে না। পুরোটাই বন্ধ করে দেওয়া হয়। শুধু চলাচল করে মানুষ। রাতভর প্রমোদ এই নগরী লোকারণ্য থাকলেও সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সড়কটিতে রাতের পার্টির কোনো চিহ্ন আর খুঁজে পাওয়া যায় না বলে জানান দেশটির নাগরিক তিরাপাপ।
আরও পড়ুন: হর্ন বাজানোকে অপরাধ মনে করেন চালক!
ভারতীয় নাগরিক চৌহান বান্ধবীকে নিয়ে থাইল্যান্ড ঘুরতে এসেছেন। চৌহান জানালেন, এই সড়কের কথা অনেক শুনেছেন। কিন্তু কখনো আসেননি। বিচিত্র এই সড়ক। মাজমাস্তির জন্য যে একটি সড়ক গড়ে ওঠে সেটা তার জীবনের প্রথম অভিজ্ঞতা।
চৌহানের কথার সত্যতা মেলে সড়কের প্রতি স্থানে। লাল নীল বাতির আলোয় কখনো হাতে আবার কখনো নানা ইশারায় ক্লাবে যাওয়ার ডাকতে দেখা যায় তরুণীদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব ক্লাবে রাতভর চলে পার্টি। এসব ক্লাব বা পার্টির অধিকাংশ পরিচালনা করেন থাইল্যান্ড, কোরিয়া, চীন, রাশিয়া ও ভারতীয়রা।
ওয়াকিং স্ট্রিটে মদ ও বিয়ারের দোকানের পাশাপাশি অনেক গাঁজার দোকানও চোখে পড়ে। তবে সেটি চোখে ধরল ভিন্নভাবে। প্রতিটি গাঁজার দোকানের সামনে একপাতা বিশিষ্ট ছবি দিয়ে বড় সাইনবোর্ড। ছিমছাম পরিপাটি আর নান্দনিকভাবে সাজানো প্রতিটি গাঁজার দোকান। আবার গাঁজা মেয়াদোত্তীর্ণ নয় এমন নিশ্চয়তা দেওয়া আছে সাইনবোর্ডে। লেখা শতভাগ গ্যারান্টি। প্রতিটি সাইনবোর্ডে গাঁজার পাতার ছবি বা লোগো দেওয়া থাকে। যা দেখে খুব সহজে চিনে নিতে পারেন গাঁজাসেবীরা।
ঘণ্টা দুয়েক সময় কাটানোর পর ফিরে আসি হোটেলে। আর ভাবতে থাকি কী বিচিত্র এই পৃথিবী।
এমআইকে/এমআর