আমাদের দেশে সমুদ্র সৈকত মানেই লবণ পানির ঢেউ, বালুর তীর আর সেই তীরে ময়লা ভেসে আসা। সঙ্গে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে ঝিনুক বা প্লাস্টিকের বোতল। সাধারণত আমাদের ছেঁড়াদ্বীপ, সেন্টমার্টিন, কক্সবাজারের সৈকতে এমনটাই চোখে ভাসে। কিন্তু আমি এমন একটি সৈকতের কথা বলছি যার তীরে ছিটেফোঁটা ময়লার দেখাও মিলবে না। প্লাস্টিকের বোতলের কথা তো কল্পনাও করা যায় না।
বলছিলাম থাইল্যান্ডের পাতায়া সমুদ্র সৈকতের কথা। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এই সৈকতে ময়লা পড়তেই পরিষ্কার হয়ে যায়। কেউ মনের ভুলে ময়লা ফেললে তাকে মনে করিয়ে দেন আশপাশের লোকজনই।
বিজ্ঞাপন
পাতায়ায় দুই রাত থাকাকালে প্রতিদিনই সৈকতে যাওয়ার সুযোগ হয়। দেখেছি কতটা ঝকঝকে পরিষ্কার সেই সৈকত। বালুর ওপর যেন রাতের তারা হিরকের আলো ছড়াচ্ছে। সৈকতে আচড়ে পড়া ঢেউগুলো যেন তীরে গা এলিয়ে দিতে ছুটে আসছে বারবার।
পর্যটক সাব্বির আহমেদ ঢাকা থেকে বেড়াতে গিয়েছেন। তাদের গ্রুপে অন্তত ১০০ জন ছিলেন। কেন কক্সবাজার ছেড়ে পাতায়ায় বেড়াতে এলেন, প্রশ্ন করা হলে তার জবাব ছিল- আমাদের সৈকতে গেলে মন আর দ্বিতীয়বার টানে না। কিন্তু পাতায়ায় এলে ভিন্ন চিত্র চোখে পড়ে। সৈকতের তীরে সাদা বালু ছাড়া আর কিছু নেই।
সৈকতের পাতায়া অংশের তীরটা এতটাই পরিষ্কার যে, এখানে পাটি বিছিয়ে চলে ব্যবসা। পাটি ভাড়া দেওয়া হয়। আপনি সারারাত বসে সৈকতে সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জন শুনবেন। থাকবে চা-কফির ব্যবস্থা। সঙ্গে ড্রিংসও। (যারা পান করতে পছন্দ করেন)। আর এসবই সরবরাহ করবেন ওই পাটি ভাড়া দেওয়া ব্যক্তি।
বিজ্ঞাপন
জানা গেল, সৈকতে প্রতি পাটি ৫০ থেকে ১৫০ বাতে (টাকায় ১৫০ থেকে সাড়ে ৪৫০ টাকার বেশি) ভাড়ায় পাওয়া যায়। কেউ কেউ হোটেল ভাড়া না নিয়ে পাটিতেই কাটিয়ে দেন সারারাত। তারপর সকালে নাস্তা সেরে ছোটেন কোরাল আইল্যান্ড কিংবা দর্শনীয় কোনো স্থানে। এই সৈকতে শুধু পাটি ভাড়া দিয়ে সংসার চালান এমন লোকের সংখ্যাও কম নয়।
সৈকতে তখন শুধু পানির গর্জনের শব্দ। অন্ধকারে সাগর তেমন দেখা যাচ্ছে না। তবে নোঙ্গর করা বোটগুলো ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। এক ভারতীয় স্ত্রীসহ বেড়াতে এসেছেন। তাদের মুখে বাংলা আর হিন্দি শুনে কাছে গেলাম। ১০ বারের বেশি থাইল্যান্ডের পাতায়ায় বেড়াতে এসেছেন ভারতের চব্বিশ পরগনার নাগরিক রুহুল চক্রবর্তী।
তিনি ঢাকা মেইলকে বলছিলেন, এই সৈকতে সারারাত পর্যটকরা কাটিয়ে দেন। এই সময়ে তারা ড্রিংকস করেন, চিপস খান, পেপসি কোকাকোলাও খান। কিন্তু কোনো বোতল কেউ ফেলেন না। পাশেই তীরের শহরমুখে অংশে ফুটপাত। তার পাশেই রাখা ময়লা ফেলানোর ঝুড়ি। আর সেটাই খুঁজে নেন বেশির ভাগ লোক। ফলে পাতায়ার সৈকত কখনো নোংরা বা ময়লায় ভরবে সেই সুযোগ নেই।
পাতায়া সৈকতের তীর এত পরিচ্ছন্ন কেন তার রহস্য জানালেন রয়েল হোটেলের এক কর্মচারী। তার সাথে কথা বলে জানা গেল, তারা সরকারের ছোট ছোট নির্দেশনাগুলো মেনে চলেন। এরই অংশ হিসেবে সৈকতের তীরকে পরিষ্কার রাখেন। আর পর্যটকরা যাতে সৈকতে কোনো ধরনের ময়লা না ফেলতে পারেন সেজন্য নজরদারিও চলে। তবে এই শহরে আসা পর্যটকরা নিজে থেকেই সতর্ক থাকেন। কোনো ময়লা ফেলেন না।
তার সাথে কথা বলে আরও জানা গেল, সৈকতে কেউ ভুলে বোতল বা প্লাস্টিক ফেললেও তা খুব সকালেই পরিষ্কার হয়ে যায়। এসব ময়লা নেওয়ার জন্যই আসে কিছু নির্দিষ্ট গাড়ি। ময়লাগুলো রাখার জন্য থাকে প্লাস্টিকের ব্যাগ, যাতে কোনোভাবে দুর্গন্ধ না ছড়ায়।
এমআইকে/জেবি