শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

হতে চেয়েছিলেন আর্মি অফিসার, হয়েছেন উদ্যোক্তা

নিশীতা মিতু
প্রকাশিত: ১৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:৪৩ এএম

শেয়ার করুন:

হতে চেয়েছিলেন আর্মি অফিসার, হয়েছেন উদ্যোক্তা

জীবন নিয়ে নানা পরিকল্পনা সাজাই আমরা। এর মধ্যে কিছু সত্য হয়। কিছু হয় ব্যর্থ। রংপুরের মেয়ে তাসনীম জাহান জিনিয়া। হতে চেয়েছিলেন আর্মি অফিসার। হয়েছেন উদ্যোক্তা। পোশাকের অনলাইন প্রতিষ্ঠান ‘ম্যাচিং ড্রেস ডিজায়ার’ এর কর্ণধার এই নারীর সঙ্গে আড্ডা হয় ঢাকা মেইলের। নিজের জীবনের এবং ব্যবসা নিয়ে নানা গল্প জানান তিনি। 

বাবা-মায়ের চাকরির সুবাদে তাদের ক্যাম্পাসেই বেশ আনন্দে ছোটবেলা কাটিয়েছেন জিনিয়া। বেশ কয়েকটি স্কুলে পড়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে তার। নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব হওয়ার বিষয়টি বেশ উপভোগ করতেন তিনি। ছাত্রী হিসেবে বেশ ভালোই ছিলেন জিনিয়া। ১ম থেকে ৩য় স্থানে থাকত রোল নম্বরের সংখ্যা। ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করে জিনিয়া বলেন, ‘ক্লাস ওয়ান থেকে টু তে ওঠার সময় সিওর ছিলাম যে ফাস্ট হব। কিন্তু সেকেন্ড হয়েছিলাম। এটা ছোটবেলায় খুব ব্যথিত করেছিল আমাকে।’


বিজ্ঞাপন


zinia

একদম ছোটবেলা থেকেই আর্মি অফিসার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন জিনিয়া। সেজন্য এইচএসসির পর বুয়েটের কোচিং বাদ দিয়ে কেবল আইএসএসবি কোচিং করেছেন। কিন্তু ভাগ্য তার সহায় ছিল না। ফলাফল, দুইবার আইএসএসবি দিয়েও একদম শেষ দিন বাদ পড়েন। এই পরীক্ষায় যারা দুইবার ব্যর্থ হন তারা আর আর্মিতে পরীক্ষা দিতে পারেন না। নিজের স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ায় ভীষণ ভেঙে পড়েন জিনিয়া। নিতান্ত বাধ্য হয়েই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ তে পড়া শুরু করেন। 

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার সময় থেকে পোশাকের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যায় জিনিয়ার। প্রচুর কেনাকাটা করতেন। জামা কিনতেন কিংবা নিজে ডিজাইন করে বানাতেন। এসব পোশাকের প্রশংসাও পেতেন সবার থেকে। বিবিএতে পড়লেও মন যেন বলত ভিন্ন কথা। জিনিয়ার মনে হতো ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়লে আর্মি না হওয়ার কষ্ট কিছুটা হলেও কমবে। কিন্তু পরিবার সায় না দেওয়ায় তা হলো না। 

zinia


বিজ্ঞাপন


জিনিয়া বলেন, ‘সবসময়ই চাইতাম নিজে কিছু করব, নিজে ইনকাম করব। এরপর এমবিএ করার সময় আমার বিয়ে হয়ে যায়। এমবিএ শেষ হওয়ার ৩ মাসের মধ্যেই আমি কনসিভ করি। তারপর শুরু করা হলো না কিছুই। না কোনো চাকরি, না ব্যবসা। কিছু না করতে পারার হতাশায় শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম। যে মানুষটা কিনা আরও ১০বছর আগেই নিজের পায়ে দাঁড়াতে চেয়েছিল সে কিছু করতে পারছে না। এই ভাবনাটা আমাকে খুব কষ্ট দিত।’

আরও পড়ুন- 
আচার, বালাচাও বিক্রি করে সফল হুমায়রা

সন্তানের বয়স যখন ৯ মাস তখন একদিন (২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০) ফেসবুকে পেজ খুলে ফেলেন জিনিয়া। যেহেতু ম্যাচিং পোশাক নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে ছিল তাই পেজের নাম রাখেন ‘Matching Dress Desire’। সেই থেকে শুরু। প্রায় ৩ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছেন এই উদ্যোক্তা নারী। 

zinia

জিনিয়ার মূল কাজ ফ্যামিলি ড্রেস বা ম্যাচিং ড্রেস থিম নিয়ে। জিনিয়া বলেন, ‘বর্তমানে ঈদ, উৎসব, জন্মদিন সব সময় ম্যাচিং ড্রেস পরার একটা ট্রেন্ড চলছে। আমি নিজের ডিজাইন করা বিভিন্ন রকম ম্যাচিং ড্রেস আছে, যা কাস্টোমারের চাহিদা ও সাইজ হিসেবে আমি তৈরি করে থাকি।’

কাজের বা ডিজাইনের ক্ষেত্রে ঈদে একটু গরজিয়াস মসলিন, সিল্কে জারদৌসি, এমব্রডারির কাজ, গরমের সময় সুতি বা টাই-ডাই এর কাপড় আবার শীতকালে শীতের উপযুক্ত ম্যাচিং ড্রেসের ডিজাইন করে থাকেন এই উদ্যোক্তা। ডিজাইনে ট্রেন্ড ও কোয়ালিটির বিষয়ে নজর দেন বেশি। 

zinia

১০ হাজার টাকা মূলধনে কাজ শুরু করেন জিনিয়া। বর্তমানে মাসে গড় বিক্রির পরিমাণ প্রায় ২-৪ লাখ টাকা। ব্যবসা করতে গিয়ে নানা অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। এর মধ্যে ভালো অভিজ্ঞতার সংখ্যাই বেশি। জিনিয়া বলেন, ‘যেহেতু কম্বো ড্রেস বিক্রি করি, অনেক ক্রেতাই পুরো পরিবারের জন্য পোশাক নেন। ৩/৪ জন থেকে শুরু করে এই সংখ্যা ১৫-২০ জনও হয়ে থাকে। তাদের প্রতিটি প্রশংসা এবং ভালো রিভিউ আমার জন্য বিশেষ স্মরণীয়। এগুলোই আমাকে কাজে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে।’

আরও পড়ুন- 
ভাগ্যের পরিহাসকে সঙ্গী করে অথির উদ্যোক্তা হওয়া

কাজের শুরু থেকেই স্বামীর সহযোগিতা পাচ্ছেন জিনিয়া। ব্যবসার প্রথম মূলধন তারই দেওয়া। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের থেকেও সহযোগিতা পান তিনি। 

zinia

নিজের উদ্যোগকে বড় ব্র্যান্ডে পরিণত করতে চান জিনিয়া। যেন সবাই তার প্রতিষ্ঠানকে এক নামে চেনে। পরিকল্পনা রয়েছে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে ডিগ্রি নেওয়া। অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনে শো-রুম দেওয়ার স্বপ্নও দেখেন এই উদ্যোক্তা। 

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর