রোববার, ৫ মে, ২০২৪, ঢাকা

শান্ত শাল-জঙ্গল আর পাথুরে পাখির সৌন্দর্যে ভরা পুরুলিয়ার মুররাবুরু

লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০১:৪৩ পিএম

শেয়ার করুন:

শান্ত শাল-জঙ্গল আর পাথুরে পাখির সৌন্দর্যে ভরা পুরুলিয়ার মুররাবুরু

শহরের কোলাহল পেরিয়ে কার না ইচ্ছে করে প্রকৃতির মাঝে কিছুটা সময় কাটাতে? ভারতের পুরুলিয়ার অখ্যাত এক গ্রাম শ্রীরামপুর। ভ্রমণপিপাসুদের কাছে জায়গাটি ‘পাখিপাহাড়’ নামে পরিচিত। এখানে গেলে আপনি পাবেন পথ হারানো শাল-জঙ্গলের দেখা। 

‘পাখিপাহাড়’ তুলনামূলক নতুন নাম। শ্রীরামপুর গ্রামের পাহাড়টির প্রকৃত নাম ‘মুররাবুরু’। ‘বুরু’ শব্দের অর্থ পাহাড়। মোটামুটি দুই দশক ধরে এলাকাটি পাখিপাহাড় নামে পরিচিত হয়েছে। 


বিজ্ঞাপন


purulia

পাখির পাহাড় কেন? 

শিল্পী চিত্ত দে ৮০০ ফুট উচ্চতার মুররাবুরুতে ‘ইন-সিটু রক স্কাল্পচারে’র কাজ শুরু করেছিলেন সেই ১৯৯৭ সাল নাগাদ। সরকারি অনুদানে চার বছর ধরে ২৪ জন শিল্পীকে নিয়ে কাজটি করেন তিনি। মুররাবুরুর বর্তুলাকার গাত্রে প্রায় ৬৫টি ডানা-মেলা পাখি আঁকে এই দলটি।

বলা হয়, সেখানে আঁকা সবচেয়ে ছোট ডানার দৈর্ঘ্য ৫৫ ফুট আর সবচেয়ে বড় ডানার দৈর্ঘ্য ১২০ ফুট। সেফটি রোপের সাহায্যে খাড়া পাহাড় থেকে ঝুলে ঝুলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে পাহাড়ের গায়ের পাথর কুঁদে কুঁদে সৃষ্টি করা হয়েছিল এই সব পাখি-অবয়ব।


বিজ্ঞাপন


purulia

অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

তবে এখানে যে কেবল পাহাড়ের গায়ে রকআর্ট দেখতে যাবেন তা নয়। প্রকৃতির অপূর্ব সম্পদ ও সৌন্দর্যও রয়েছে। ঋতুতে ঋতুতে নব নব রূপে ধরা দেয় তা। শীতে-গ্রীষ্মে-বর্ষায়, শরতে-হেমন্তে-বসন্তে এই পাখিপাহাড় ও তার পায়ের কাছে লুটিয়ে থাকা অরণ্যে যেন নতুন নতুন আলো ঠিকরে পড়ে, আর এর পল্লবের স্তূপে বয়ে যায় আদ্যন্ত নতুন বাতাস।

আরও পড়ুন-
যেমন দেখলাম কলকাতার ট্রাফিক কন্ট্রোল ও মেট্রোরেল

হিম আর শিশির, রোদ আর বৃষ্টি, গোধূলি ও প্রভাত এখানকার গাছমাটি-ঘাস ধুলো-পাথরকে যেন নতুন বর্ণে ও গন্ধে প্রাণিত করে। বর্ষায় প্রকৃতি এখানে গভীর সবুজ, বসন্তে প্রকৃতি এখানে অধীর অবুঝ। বর্ষায় এখানে লালমাটির গন্ধে আবিল থাকে বর্ষারেণুমাখা নিবিড় বাতাস; বসন্তে এখানে রঙিন বাতাসে ফুলরেণুর বিলোল উদ্ভাস; হেমন্তে এখানে ঝরাপাতার ধূসর বর্ণমালা; আর শীতে এখানে কঠিন ঠান্ডার মুষ্টিতে মুরগির করুণ গলার মতো বদ্ধ হয় অসহায় প্রকৃতি।

purulia

আছে গ্রামীণ মেলা 

এখানকার নিকটবর্তী মাঠে গ্রামীণ হাট বসে। সেখানে দেশি মুরগি, হাঁস, ছাগল, তাজা শাক-সবজি, নানা কিসিমের মসলা, গজা-জিলিপি মেলে। ক্রেতা-বিক্রেতার কলরবে, নানাজনের উপস্থিতিতে মেলা হয়ে ওঠে জমজমাট। 

আরও পড়ুন- 
তৃপ্তিময় ভ্রমণের নতুন গন্তব্য মালে

কেউ চাইলে কেবল বসেই সময় কাটাতে পারবেন। অজস্র সেগুনগাছের নিভৃতির মধ্যে সারাদিনের রোদ আর ছায়ার লীলার মধ্যে দাঁড়িয়ে পাহাড়ের অনুচ্চ মাথার উপর পাখির ডানার স্পর্শ অনুভব করতে করতেই এখানে বইয়ে দেওয়া যায় বহু মুহূর্ত। আর যদি সময় সুযোগ মিলিয়ে পূর্ণিমায় এখানে যেতে পারেন তবে তো কথাই নেই। অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হবেন আপনি!

purulia

কীভাবে যাবেন? 

কলকাতা থেকে ট্রেনে পুরুলিয়া স্টেশন বা বরাভূম স্টেশন যেতে হবে। পুরুলিয়া স্টেশন থেকে পাখিপাহাড় সড়ক পথে ঘণ্টাখানেক। বরাভূম থেকে তুলনায় দূরত্ব কম। ৪০ মিনিটের মতো সময় লাগবে। ভুচুন্ডী মোড় নামে একটি মিষ্টি নামের মোড় আছে এখানে। চাইলে এখান থেকে আঁকাবাঁকা পথ ধরে ট্রেকও করতে পারেন। না চাইলে এটুকুও গাড়ি করেই পৌঁছে যেতে পারেন শ্রীরামপুর গ্রামে পাখিপাহাড়ের পায়ের কাছে।

আরও পড়ুন- 
শীতের মৌসুমে পাহাড়ে ভ্রমণ, মাথা রাখুন এসব বিষয়

থাকবেন কোথায়? 

এই জায়গাটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক আবহে গড়া। তাই এখানে হোটেল গড়ে ওঠেনি। কয়েকটি হোম স্টে আছে। চাইলে সেখানে রাত কাটাতে পারেন। ঘরোয়া পরিবেশে থাকা, ঘরোয়া খাওয়া-দাওয়া। খরচও সাধ্যের মধ্যে। জনপ্রতি ৮০০-১০০০ রুপি প্রতিদিন। 

purulia

তবে আর কী, পাহাড়িয়া বাঁশির উন্মনা সুরে সুর মিলিয়ে এবার বেরিয়ে পড়ুন। আপনার জন্য নিবিড় অপেক্ষায় আছে বর্ষার সজল বাতাস, বসন্তের উজ্জ্বল পলাশ, গ্রীষ্মের অধীর নিশ্বাস আর পূর্ণিমা-জোছনার অমৃত সুধা। 

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর