বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

মায়া বিচ: সাদা বালু আর নীল জলরাশির অদ্ভুত মায়া 

ওয়াজেদ হীরা
প্রকাশিত: ২১ নভেম্বর ২০২২, ০২:৫৯ পিএম

শেয়ার করুন:

মায়া বিচ: সাদা বালু আর নীল জলরাশির অদ্ভুত মায়া 

থাইল্যান্ডের ফুকেট দ্বীপকে বলা হয় ফরেন সিটি। এখানে স্থানীয়দের চেয়ে বিদেশি মানুষ বেশি। তারা প্রায় সবাই পর্যটক। ফুকেটের পাশেই রয়েছে আরেক দেশ মালয়েশিয়া। ফুকেট শহরের পাত‍ং এলাকা থেকে আনুমানিক দুঘণ্টায় পৌঁছানো যায় মায়া বিচে। এখানে এলে অদ্ভুত এক মায়ায় জড়িয়ে পড়বেন আপনি। 

একপাশে পাহাড়ঘেরা বিচটির পাড়ে এসে পড়ছে ঢেউ। নীলাভ-সবুজ স্বচ্ছ জল আচড়ে পড়ছে সাদা বালুর বুকে। সৌন্দর্য আরও খানিকটা বাড়াচ্ছে তীরে থাকা বিভিন্ন গাছ। পর্যটকরা কেউ বিমোহিত হয়ে সৌন্দর্য উপভোগ করছেন, কেউবা জলকেলি খেলছেন। মুহূর্ত ফ্রেমবন্দি করছেন অনেকে। 


বিজ্ঞাপন


maya

এই বিচে ‘মায়া বে’ লেখা একটি স্ট্যান্ড রাখা আছে। পর্যটকরা আগ্রহ নিয়ে সেখানে ছবি তোলেন। ‘দ্য বিচ’ সিনেমার মাধ্যমে সারা দুনিয়ায় দারুণ জনপ্রিয় হয় মায়া বে বিচটি। এই বিচে গেলে আপনি পাবেন সাদা বালুর আলতো পরশ। প্রতিটি ঢেউয়ে সাদা বালু আপনার পা ছুঁয়ে যাবে। মন চাইলে বালুর বুক ধরে হাঁটতেও পারবেন। সেসঙ্গে জড়িয়ে যাবেন অদ্ভুত এক মায়ায়।  

আন্দামান সাগরের থাইল্যান্ডের ক্রাবি প্রদেশের মালাক্কা প্রণালিতে অবস্থিত এবং হাট নপফরাত থারা-মু কো ফি ফি ন্যাশনাল পার্কের একটি অংশ মায়া বে। তিন দিকের আকাশচুম্বী ক্লিফ দ্বারা বেষ্টিত, উপসাগরে অনেকগুলো সৈকত রয়েছে, যার মধ্যে বেশিরভাগই ছোট এবং শুধু ভাটার সময় দৃশ্যমান হয়। স্বচ্ছ নীল জলরাশির নির্মল শান্ত কাঁচের মতো জলে এ সৈকতের এপাশটায় কোনো নৌকা বা জাহাজ ভেড়ানোর অনুমতি নেই। এর অর্ধচন্দ্রাকৃতির সৈকতটি ছিল বিশুদ্ধ সাদা এবং আবর্জনামুক্ত।

maya


বিজ্ঞাপন


ফি ফি আইল্যান্ডে যাওয়ার সময় সবার প্রথম যেখানে স্পিডবোট দাঁড়াবে সেটি মায়া বিচ। শহরের হোটেল থেকে পর্যটকদের টুরিস্ট এজেন্সি (যেখান থেকে আপনি প্যাকেজ নিবেন) পক্ষ থেকে মাইক্রোবাস আসবে এবং উঠিয়ে নেবে। গাড়ি ছুটে চলবে স্পিডবোট ঘাঁটে। 

সকালে স্নিগ্ধ ও ফাঁকা রাস্তায় নির্দিষ্ট গতিতে গাড়ি ছুটে শহর পেরিয়ে প্রায় ৩৫-৪০ মিনিটের মধ্যে স্পিডবোট ছাড়ার স্থানে আসবে। সেখানেও পাবেন ওই টুরিস্ট এজেন্সির অফিস। এখানে হালকা নাশতা ছাড়াও চা-কফির ব্যবস্থা থাকে ফ্রি। প্রয়োজন হলে সাগরে নামার উপযুক্ত পোশাক কেনার ব্যবস্থাও রয়েছে। সাগরের পরিবেশ এবং কোন দ্বীপে কী করবে এর একটি দিক নির্দেশনা দিয়ে ছাড়া হয় স্পিডবোট। এখানে প্রতিটি গ্রুপকে চেনার জন্য আলাদা হাতের ব্র্যান্ড পরিয়ে দেওয়া হয়।

maya

স্পিড বোট ছুটে চলবে গভীর সমুদ্রে। সমুদ্রের ঢেউ আর নির্মল বাতাস অনুভূতিতে আপনি কখন পৌঁছে যাবেন বুঝতেই পারবেন না। এরই মধ্যে চারপাশে পানির স্বচ্ছতা দেখে নিজেই চমকে উঠবেন। সমুদ্রের পানি এতো নীল, এতো সবুজ হয় কীভাবে সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে যাবেন নিজেই! যে সাগরের বুক চিড়ে সামনে এগিয়ে যাবেন, এটিই আন্দামান সাগর। ছোটবেলায় বইয়ে যার কথা পড়েছেন হয়তো। 

>> আরও পড়ুন: জলকাণ্ডেশ্বর মন্দির: অপূর্ব শিল্পকর্মে পরিপূর্ণ প্রাচীন স্থাপনা

আন্দামান সাগরের ছোট ছোট দ্বীপগুলো ঘুরে দেখার প্রায় ২ ঘণ্টা পরে আমাদের বোট এসে নোঙর করল মায়া বে-তে। চারদিকে পানি আর পানি। গাঢ় নীল আকাশ, পাশে লম্বা একাধিক সবুজ পাহাড়। কোথাও নীল পানি, কোথাও সবুজ পানির রঙ। সাগরের নীল পানি আর আকাশের নীলের মিতালিতে এ যেন স্বপ্নের এক রাজ্য। সেই সাথে বিভিন্ন মাছে ভরা স্বচ্ছ পানির দ্বীপ দেখে অনেকের কাছে মনে হবে এটি এক টুকরো স্বর্গ। 

maya

পাকিস্তান থেকে আসা পর্যটক ইয়া আরমান ঢাকা মেইলের সঙ্গে কথোপকথনে নিজের অনুভূতি জানিয়ে বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তা কতো সুন্দর রেখেছেন এই পৃথিবীতে। অনেকেই কাশ্মিরকে ভূ-স্বর্গ বলে। আমার কাছে এই দ্বীপ মনে হচ্ছে এক টুকরো ভূ-স্বর্গ।’ 

ফ্রান্স থেকে আসা পর্যটক এথিক অ্যারোরা বলেন, ‘আমি অনেক স্থানেই ঘুরেছি। ফুকেটের প্রতিটি দ্বীপ মন ভরে যায়, চোখ জুড়িয়ে যায়। এজন্য করোনা ব্যতীত প্রায় প্রতিবছরই আমি এসেছি।’

বোট থেকে নেমে সরু পথ ধরে হাঁটতে হবে। সবুজ পথ ধরে সুন্দর গাছ-গাছালির প্রকৃতি দেখতে দেখতে বিচে চলে যাবেন। ফুকেট শহর থেকে যতগুলো বিচ দেখবেন এটি তার মধ্যে অন্যতম হয়ে আপনার হৃদয়ে গেঁথে থাকবে। মায়া বেতে দাঁড়িয়ে অনেকেই যেমন প্রশান্তি অনুভব করেন তেমনি নিজেকে ভাগ্যবান এবং সুখী মানুষ মনে করেন। 

maya

সুইডেন থেকে আসা পর্যটক এন্থনিওস প্রপ বলেন, ‘আমি সত্যি ভাগ্যবান এখানে আসতে পেরে। এর পরশ পেয়ে নিজেকে পৃথিবীর সেরা সুখীদের একজন মনে হয়েছে। অনেকের ভাগ্যে এটি থাকে না। আমার চেনা জানা অনেকেই কিন্তু আসতে পারেনি এবং এটি বুঝতেও পারল না।’

>> আরও পড়ুন: পরিচ্ছন্ন আর প্রকৃতিঘেরা ফুকেট আপনাকে ডাকবে বারবার

এতো সুন্দর দৃশ্য দেখে আমারও দৃষ্টি যেন বুজে আসছিল। প্রকৃতির এই রূপ প্রকাশের ভাষাও নেই। অনেকেই এখানে অনেকক্ষণ সময় কাটাতে চায়। তবে গাইড অপেক্ষায় থাকে অন্য দ্বীপে নিয়ে যেতে। যেতে হবে বলে অনেক স্মৃতি আর সুন্দর দৃশ্যগুলো ক্যামেরায় বন্দি করে সামনে দ্বীপে এগিয়ে যেতে হয়। পেছনে মায়া বিচ তখন যেন নীরবে ডেকে বলে, আমার রূপের মায়ায় তোমাকে আবার আসতেই হবে।

ডব্লিউএইচ/এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর