শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

পরিচ্ছন্ন আর প্রকৃতিঘেরা ফুকেট আপনাকে ডাকবে বারবার

ওয়াজেদ হীরা
প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০২২, ১০:১৭ পিএম

শেয়ার করুন:

পরিচ্ছন্ন আর প্রকৃতিঘেরা ফুকেট আপনাকে ডাকবে বারবার

প্রকৃতিঘেরা শহর থাইল্যান্ডের ফুকেট। দেশটির প্রদেশগুলোর মধ্যে পরিচ্ছন্নতায় অন্যতম ফুকেট। এর মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য যেমন আপনার মন কেড়ে নেবে, তেমনি পরিচ্ছন্নতার কারণেও এই শহর আপনাকে বারবার ডাকবে। রাস্তায় কোনো ময়লা নেই, নেই দুর্গন্ধও।

রাজধানী ব্যাংকক থেকে প্রায় ৯০০ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে থাইল্যান্ডের বৃহত্তম দ্বীপ ফুকেট। দক্ষিণ থাইল্যান্ডের আন্দামান সাগরে এটি অবস্থিত। দ্বীপটির বেশিরভাগই পাহাড়ি অঞ্চল। ফুকেটের খ্যাতি এর বিখ্যাত সমুদ্র সৈকতের জন্য। দেশটির বিখ্যাত সব সমুদ্র সৈকতের প্রায় সবই ফুকেট দ্বীপে। পাতঙ্গ সমুদ্র সৈকতটি সবচেয়ে জনবহুল। তাই বিচ-লাভাররা এখানে নিয়মিত আসেন। দিন কাটানোর জন্য আদর্শ এখানকার শুভ্র-সাদা সমুদ্র সৈকত। আরও আছে একা অথবা কাপল স্পা ম্যাসাজ, বিচ ভলিবল, বিচ ফুটবল, স্নরকেলিং ইত্যাদিতে অংশ নেয়ার সুযোগ। রাত্রিবেলায় পাতং জুড়ে বসে বার, ক্যাফে, নাইটক্লাব, ডিস্কো, ক্যাবারে ও ক্যাসিনোর পসরা। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য পাতং হতে পারে বিনোদনের আধার।


বিজ্ঞাপন


হোটেল, রেস্তোরাঁ, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, ট্র্যাভেল এজেন্টের অফিস, পোশাক-আশাক আর হস্তশিল্পের দোকান, ম্যাসাজ পার্লার, বার- কি নেই সেই শহরে। সবসময় জমজমাট। তবে শহর থেকে অনেকেই ঘুরে আসেন বিভিন্ন বিচে। ফুকেট শহর থেকে ফিফি আইল্যান্ড যাওয়ার পথে পড়ে অনেকগুলো দ্বীপ। সমুদ্রের নীল সবুজ জলরাশি দেখে মুগ্ধ হন পর্যটক। সাদা বালুসহ ঢেউ এসে আলতো করে ছুঁয়ে যায় পর্যটকের পা। যেন চুপিসারে আদর করে বলে যায়, তোমার অপেক্ষায় ছিলাম ..!

সকালের ফুকেট এক রকম, রাতে আরেক দৃশ্য। রঙিন আলোয় রাতে ঝলমল করে পুরো শহর। আবার দিনের বেলায় বেশ শান্ত। দিনের বেলায় অনেক পর্যটকই চলে যান বিভিন্ন আইল্যান্ডে। এসব আইল্যান্ডে যেতে রয়েছে নানা ধরনের প্যাকেজ।

প্রথমদিন সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করে কাটিয়ে দেওয়া ভালো। দ্বিতীয়দিন একটা প্যাকেজ ট্যুরে মোটরচালিত লংটেল বোটে যাওয়া যায় ফা নং বে। আন্দামান সাগরের এই জায়গায় মাথা তুলেছে অনেক চুনাপাথরের পাহাড়। যেমন বৈচিত্রময়, গড়নেও তেমনই। হলিউডের সিনেমার শুটিংয়ের দৌলতে একটি দ্বীপের নামই হয়ে গিয়েছে জেমস বন্ড আইল্যান্ড। সেই দ্বীপ সফরও এই প্যাকেজ ট্যুরের অন্তর্ভুক্ত।

>> আরও পড়ুন: কাশ্মির: ঘুরে আসুন পৃথিবীর ভূস্বর্গ


বিজ্ঞাপন


লাঞ্চসহ একদিনের এই ট্যুরের খরচ থাই মুদ্রায় ১৫শ বাথের উপরে। এরমধ্যে সকালে হোটেল থেকে নিয়ে যাবে গাড়ি। স্পিডবোটে সারাদিন বিভিন্ন আইল্যান্ডে ঘুরাবে, দুপুরের খাবার দেবে, এরপর পুনরায় হোটেলে নামিয়ে দেবে। বেশিরভাগ পর্যটক যায় ফিফি ও জেমস বন্ড আইল্যান্ডে। এছাড়া আরও কিছু সুন্দর দ্বীপ রয়েছে। আন্দামান সাগরের মধ্যে ফিফি ডন আর ফিফি লে দ্বীপ দুটি নিয়ে ফিফি আইল্যান্ড। সবুজ রঙের সমুদ্রের মাঝে পাহাড় জঙ্গল ভরা ছোট ছোট নির্জন দ্বীপ তার বেলাভুমি। আর মাথার ওপার ঝকঝকে নীল আকাশ পর্যটকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে। ফিফি ডনে আছে হোটেল, রিসোর্ট, বাজার, রেস্তোরাঁ। আর ফিফি লে জনবসতিবিহীন এবং খাড়া কিছু উঁচু-নিচু পাহাড়ের সমষ্টি। ফিফি আইল্যান্ডের প্রকৃতিকে বুঝতে অনেকেই এক-দুই রাত বা বেশিসময় থেকে যান ফিফিতে।

কানাডা থেকে আসা পর্যটক অ্যানেল কায়া ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি ফুকেট শহর দেখে মুগ্ধ। তাদের পরিচ্ছন্নতা সত্যি দৃষ্টিনন্দন। দ্বীপগুলো দেখে মন ভরে যায়।

Thailandব্যঙ্গালুরু শহর থেকে পরিবারসহ ঘুরতে আসা পর্যটক লতা রায় ফুকেট শহরের নানা সৌন্দর্য তুলে ধরেন। ঢাকা মেইলের সাথে কথোপকথনে বলেন, আমি কাশ্মির গিয়েছিলাম, খুবই ভালো লেগেছিল। এরপর অনেক স্থানে গেলেও এই শহর মনে রাখার মতো। এখানে রাত আর দিনে দুই রঙ। এখানের দ্বীপগুলো সৌন্দর্যের খনি। সমুদ্রের পানির রঙ বলে দেয় সেটি। এমন স্বচ্ছ পানি এর আগে আমি দেখিনি।

এখানকার প্রতিটি বিচই পর্যটকে মুখরিত। মায়া বিচ, লোহ সামাই বিচ, ফিলে লাগুন বিচ, মাঙ্কি বিচ ও খাই দ্বীপে বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের বিনোদনে মেতে থাকতে দেখা যায়। পর্যটকদের কেউ মনের আনন্দে সাগরে সুইমিং করছেন, কেউ সমুদ্রের তলদেশের দৃশ্য দেখতে করেন স্নোরকেলিং। স্নোরকেলিং পয়েন্টে কথা হয় ফ্রান্স থেকে আসা পর্যটক পরিবারের সাথে। ফরাসি পর্যটক সামান্থা জানান, থাইল্যান্ডে প্রথম এসেছেন। পানির নিচে নানা রঙের মাছ দেখে বেশ খুশি তিনি।

ফুকেটের রাতের শহর দেখতে হলে আপনাকে অবশ্যই যেতে হবে বাংলা রোডে। সূর্যাস্তের পরপরই এ রাস্তায় অন্যরকম এক আবহ তৈরি হয়। নিয়ন আলোয় চারপাশের ঝলমলে পরিবেশের সাথে হৈ-হুল্লোড়।

এখানকার বিভিন্ন ক্লাবে উপভোগ করা যায় নাচ গান। সেই সাথে বিভিন্ন পানীয় নেন অনেক পর্যটক, কেউবা ছুটেন সামুদ্রিক মাছের স্বাদ নিতে। রাতভর নানা রকমের আড্ডা গল্প, হৈ-হুল্লোড় থাকলেও আপনি কোথাও আবর্জনা পাবেন না। যেখানে সেখানে কেউ ময়লা ফেলেন না। আবার ফাঁকা এবং বেশ প্রশস্ত সড়কেও অতিরিক্ত গতিতে কেউ গাড়ি চালায় না। গতিসীমা অতিক্রম করলেই গুণতে হয় বড় অঙ্কের জরিমানা।

ইউরোপ থেকে প্রচুর পর্যটক আসে এই ফুকেট শহরে। যাদের অনেকেই ব্যাংকক বা পাতায়া যান না। এই শহরের ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে এখান থেকেই দেশে ফিরেন। কানাডা, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, স্পেন, ইতালিসহ নানা দেশের পর্যটক আসেন, দেখেন এবং স্মৃতি নিয়ে ফেরেন। আর সেই কারণেই টান অনুভব করেন এই শহরের প্রতি। ফুকেট যেন পর্যটকদের হৃদয়ে গাঁথা এক নাম।

ডব্লিউএইচ/জেএম/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর