শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

নারী উদ্যোক্তার পথচলায় পুরুষের ভূমিকা

ফারদীন হক জ্যোতি
প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০২২, ০২:১৩ পিএম

শেয়ার করুন:

নারী উদ্যোক্তার পথচলায় পুরুষের ভূমিকা

কথায় আছে প্রতিটি সফল পুরুষের পেছনে নাকি কোনো না কোনো নারীর অবদান থাকে। কিন্তু একজন নারীর সফলতার পেছনেও থাকতে পারে পুরুষের অবদান। সমাজের চোখ রাঙানোকে তোয়াক্কা না করে বর্তমানে অনেক নারী হচ্ছেন স্বনির্ভরশীল। নিজেকে তৈরি করছেন একজন উদ্যোক্তা হিসেবে। তবে এই পথ একা একজন নারীর জন্য মোটেও সহজ নয়। 

নারীদের উদ্যোক্তা হওয়ার এই কঠিন পথ চলাতে একটু স্বস্তি পাওয়া যায় যখন কেউ না কেউ তাকে একটু হলেও সহযোগী করে। পারিবারিক সামাজিক সহযোগিতা থাকলে একজন নারী যেতে পারে সফলতার শীর্ষে। 


বিজ্ঞাপন


আজ শনিবার (১৯ নভেম্বর) নারী উদ্যোক্তা দিবস। নারীরা তাদের উদ্যোক্তাজীবনে পুরুষের সাহায্য কতোটা পেয়েছেন? নাকি কাছের মানুষটিও তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে? উত্তর খুঁজতে ঢাকা মেইল কথা বলেছেন কয়েকজন নারী উদ্যোক্তার সঙ্গে। জেনেছেন তাদের পথ চলায় পুরুষের ভূমিকা।

popi

‘ইপ্পি শপিং’ নামক অনলাইন প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার রোখসানা আক্তার পপি। তিনি বলেন, ‘জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হয় যে সময়ে, অর্থাৎ ছাত্রজীবনে আমি কখনো ভাবিনি যে নারী উদ্যোক্তা হব। জীবনের অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে ২০২০ সালে হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিলো যে ই-কমার্সকে কাজে লাগিয়ে নিজে কিছু করবো। সেই চিন্তা থেকেই আমার উদ্যোগের জন্ম এবং একেবারে শুরু থেকেই আমি পরিবারের সবার সাপোর্ট পাই। 

বলা যায়, উদ্যোক্তাজীবনে পুরুষের ইতিবাচক ভূমিকাই পেয়েছি আমি। বিশেষ করে টেকনিক্যাল যে বিষয়গুলো সবকিছুতে ব্যাকআপ হিসেবে পেয়েছিলাম আমার ভাইদের। তারা আমার কাজে প্রতিনিয়ত উৎসাহ দিত। উদ্যোগের নাম থেকে শুরু করে, পেজ, গ্রুপ, ব্যবসার প্ল্যানিং— সবকিছুতে তারা আমার পাশে থেকে ভীষণ সাপোর্ট করেছে এবং সাহস দিয়েছে। 


বিজ্ঞাপন


>> আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীদের কিস্তিতে পোশাক দেন নারী উদ্যোক্তা সচি

অন্যদিকে একটা উদ্যোগ শুরু করতে আর্থিক ব্যাপার থাকে। যেহেতু আমি প্রত্যন্ত গ্রামে থাকি, এটা এমন জায়গা যেখানে ইন্টারনেটের ছোঁয়াই লাগেনি পুরোপুরি। এমন একটি জায়গা যা টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ দুই জেলারই শেষ প্রান্ত ঘেঁষে অর্থাৎ অজও পাড়া গ্রাম। এই জায়গা থেকে ডেলিভারি খুব বড় একটি চ্যালেঞ্জ ছিল আমার জন্য। আর্থিক ও যোগাযোগ দুই ক্ষেত্রেই আমার স্বামী খুব সাপোর্ট করেছেন শুরু থেকে।  

পরিবারের বাহিরেও পরিবারের মতই উৎসাহ দিয়েছে ডিজিটাল স্কিলস ফর বাংলাদেশ প্ল্যাটফর্ম এবং অত্যন্ত সাপোর্টিভ একজন ব্যক্তি বাংলাদেশ ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি রাজিব আহমেদ স্যার। একজন পুরুষ হয়েও তিনি সবসময় নারী উদ্যোক্তাদের জন্য পরামর্শ দিয়ে আসছেন। তার পরামর্শগুলো মেনেই মূলত এই সেক্টরে আমি ধীরে ধীরে নিজের একটি অবস্থান গড়তে পেরেছি এবং এতদূর এসেছি।’

rozina

সিলেটের নারী উদ্যোক্তা রোজিনা আক্তার। এই নারী বলেন, ‘করোনার সময় আমার পারিবারের সদস্যদের অন্যান্য আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমার উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে যাওয়া সহজ হয়। কারণ, আমি যখন ব্যবসা শুরু করেছিলাম তখন আমার ফ্যামিলি খুব বেশি সাপোর্ট করেননি। কিন্তু করোনাকালে ভাইয়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। সে বাড়িতে চলে আসে। তখন তার সহযোগিতায় আমার উদ্যোগ ‘ঝিয়ারী’র বিজনেস বাড়তে থাকে। সেই সময় আমার ছোট ভাই জাকির আমাকে খুব বেশি সাপোর্ট করেছিল। 

আমার উদ্যোগ যদি সেই সময় সাপোর্ট না পেত তাহলে আজকে ঝিয়ারী ব্র্যান্ড হিসেবে তৈরি হতে পারতো না। আমার ভাই সেই সময় ডেলিভারি দেওয়া, পণ্য সংগ্রহ করা, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়া এবং পাওনা টাকা কালেকশন করাসহ হোম ডেলিভারি সব কিছুতেই সহযোগিতা করেছে।’ 

farzana

রংপুরের উদ্যোক্তা ফারজানা ইয়েসমিন জানান উদ্যোক্তাজীবনে তিনি সবথেকে বেশি সাপোর্ট পেয়েছেন তার স্বামীর কাছে থেকে। যেকোনো কাজ বা উদ্যোগের জন্য বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতিতে সবসময় তিনি তার পাশে ছিলেন এবং আছেন। তিনি বলেন, ‘সামনে থেকে আমি উদ্যোগ পরিচালনা করলেও পেছনের সবরকম সাপোর্ট আমার স্বামী দেয়। বলতে পারেন টিভির পর্দায় নায়িকার ভূমিকায় আমাকে দেখা গেলেও পিছনের যতো ব্যবস্থাপনা সব তারই।’

>> আরও পড়ুন: জীবনসঙ্গী হিসেবে উদ্যোক্তারা সেরা যে ৫ কারণে

শুধু স্বামী না বরং বাবার কাছে থেকেও ছোট-বড় অর্থনৈতিক সাপোর্ট তিনি পেয়েছেন। আর তাই বর্তমানে তিনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছেন বলেই মনে করেন। 

jesmin

‘বাংলার ঐতিহ্য’র উদ্যোক্তা জেসমিন আক্তার জানান, বাবাকে হারানোর পর পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে দায়িত্ব এসে পরে তার কাঁধে। তখন মাসহ এক বোন এবং ছোট দুই ভাইয়ের সংসার। তিনি বলেন, এই দুই ভাই ছাড়া আমার পরিবারে আর কোনো পুরুষ সদস্য ছিল না। আমার মা সবসময় আমার কাজে সহযোগিতা করতো। তবে আমার দুই ভাই ছোট বলে পিছিয়ে থাকেনি। কখনো কখনো ওরাও পণ্য প‍্যাকেজিং ও তৈরিতে সহায়তা করেছে। বর্তমানে আমার স্বামীও আমার কাজে সর্বোচ্চ সাপোর্ট করেন। তাদের সহযোগিতা না থাকলে এতো কম সময়ে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি পাওয়া দুষ্কর হতো।’

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর