শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

দুইদিনের কলকাতা ভ্রমণে দেখার আছে যা কিছু

মো. শাহিন রেজা
প্রকাশিত: ১২ নভেম্বর ২০২২, ০৪:০৬ পিএম

শেয়ার করুন:

দুইদিনের কলকাতা ভ্রমণে দেখার আছে যা কিছু

চলতি মাসের ৬ তারিখ খুব সকালে বাড়ি থেকে রওনা হই। উদ্দেশ্য ভারত ভ্রমণ। বেনাপোল স্থলবন্দর পৌঁছাতে বাজে ৯টার বেশি সময়। বাংলাদেশের ইমিগ্রেশনে তেমন ভিড় না থাকলেও ভারতের ইমিগ্রেশনে অনেক ভিড় ছিল। ৩ মাস আগের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা আমার বারবার স্বরণে আসে। 

গতবার রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা খুব বিরক্তিকর। তবে এটি বয়স্ক, মহিলা, শিশু ও অসুস্থ মানুষের জন্য কতটা দুর্ভোগ বয়ে আনে চোখে না দেখলে বোঝার উপায় নেই। গতবার পাঞ্জাবের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া ৪ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে পরিচয় হয়। ফলে রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে দাঁড়িয়ে থাকতে হলেও সঙ্গ দেওয়ার মতো মানুষ পেয়েছিলাম। এবারও লাইনে দাঁড়িয়ে এমন কাওকে খুঁজছিলাম। ভাবছিলাম এমন কাওকে পেলে অন্তত কলকাতা পর্যন্ত একসঙ্গে যাওয়া যাবে। 


বিজ্ঞাপন


kolkata

এমন অনেক কিছু ভাবতে না ভাবতে দেখতে পাই লাইনের একজন খুব মজার মজার গল্প করছেন সবার সঙ্গে। কোন যায়গা খেকে এসেছেন জানতে চাইলে বললেন খুলনা থেকে। এরপর অল্প সময়ে আমাদের গল্প জমে ওঠে। জানতে পারি তার স্ত্রীও সঙ্গে আছেন। এরপর লাইনের সামনে মেহেরপুরের এক ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় হয়। গল্পে গল্পে আমরা সময় অতিবাহিত করতে থাকি।

চার ঘণ্টার বেশি সময় লাগে আমাদের ইমিগ্রেশন শেষ হতে। এর মধ্যে আমারা কে কোথায় যাব জেনে নিই। বর্ডার পার হয়ে মুদ্রা বিনিময় করে একসঙ্গে কলকাতা পর্যন্ত যাবার সিদ্ধান্ত হয়। পেট্রপোল থেকে অটো ধরে বনগাঁ রেল স্টেশন যাই। টিকিট কেটে ট্রেনে উঠতেই ঝকঝক ঝকাঝক শব্দে চলতে শুরু করে ট্রেন। শিয়ালদহ স্টেশনে নেমে সবাই আগে খাবার হোটেল খুঁজতে থাকি। সারাদিনের জার্নি আমাদের বিধ্বস্ত করে দিয়েছিল। শরীরে শক্তি যোগাতে সন্ধ্যায় হালকা পাতলা খাবার খেয়ে ট্যাক্স নিয়ে সোজা নিউমার্কেট। 

kolkata


বিজ্ঞাপন


এর আগে সিদ্ধান্ত হয় আমার এক হোটেলে থাকব। দুই রুমে একটাতে আমি আর নাহিদ ভাই অন্যটায় সোহাগ ভাই ও সাইলা ভাবী। বেশ কিছু হোটেল দেখে নিউমার্কেটের খাদ্য ভবনের পাশে একটি হোটেল নিয়ে রাত পার করি আমরা।

পরের দিন খুব সকালে আমি আর নাহিদ ভাই হাঁটতে বের হই। সকালের নাশতা সারি রাস্তার ধারের একটি টং দোকানে। হোটেলে এসে পরিকল্পনার হয় আজ আমার একসঙ্গে ঘুরব। এরপর সন্ধ্যায় সবাই একসঙ্গে স্ট্রিট ফুড খাব। 

kolkata

আমরা দুপুরের আগে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এবং সায়েন্স সিটি ঘুরে দেখার পরিকল্পনা করি। সকালে হোটেল থেকে ট্যাক্সি নিয়ে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে যাই। ১৯০৬ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হওয়া শ্বেত পাথরের তৈরি মহারানি ভিক্টোরিয়ার নামে এই স্মৃতিসৌধটি কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন আকর্ষণ। ভবনের দুই দিকে বিশাল ফটক রয়েছে। টিকিট কেটে ফটক দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতেই দু দিকে জলাধার, বড় বড় গাছ আর স্থাপত্যশৈলী যে কাউকে মুগ্ধ করবে। কিছু সময় ঘুরাঘুরি শেষে রওনা হয় সায়েন্স সিটির পথে। 

শহরের যানজট নাই বললেই চলে। প্রতিটি সিগন্যালে কয়েক সেকেন্ড গাড়ি অপেক্ষা করতে দেখেছি। সায়েন্স সিটির প্রবেশ মুখে এক বাংলাদেশীর সঙ্গে পরিচয় হয়। তিনি এখন কলকাতার স্থায়ী বাসিন্দা। সায়েন্স সিটি মূলত একটি বিজ্ঞান সংগ্রহশালা এবং বিনোদন কেন্দ্র। ৫০ একর জায়গায় তৈরি এটির মূল লক্ষ্য বিজ্ঞানকে মানুষের কাছে জনপ্রিয় করে তোলা। 

kolkata

সায়েন্স সিটি থেকে সল্ট লেকে যাবার সময় ট্যাক্সি ড্রাইভার আমাদের জানালেন এটি বাংলাদেশের উত্তরার মতো আবাসিক এলাকা। তবে যাওয়ার পর আমরা দেখতে পাই এখানকার বাড়িগুলো ডুপ্লেক্স। উঁচু বিল্ডিং চোখে পড়েনি। নিরিবিলি পরিবেশ বসবাসের জন্য উপযুক্ত। পাশে কিছু দূর এগোতেই মেট্রো স্টেশন। দুপুরের পর নাহিদ ভাই একটু অসুস্থবোধ করায় হোটেলে ফিরে আসে। সন্ধ্যায় আমরা মেট্রোরেলে শিয়ালদহ এরপর ট্যাক্সিতে নিউমার্কেটে ফিরি। রাতে নাহিদ ভাই আবার নিউমার্কেটে আমাদের সঙ্গে মিলিত হয়। 

>> আরও পড়ুন: প্রাণবন্ত তিলোত্তমা ‘কলকাতা’, ঘুরবেন কোথায়?

আগেই জেনেছি, কলকাতার মোমো ও পানিপুরি বিখ্যাত স্ট্রিট ফুড। ভি মার্ট শপিং মলের পাশে অনেকগুলো স্ট্রিট ফুডের দোকান দেখতে পাই আমরা। প্রথমে মোমো খাই সবাই মিলে। অসাধারণ স্বাদ। বিশেষ করে স্যুপের কথা বলতেই হবে। এর পর পানিপুরি। মুখে দিতেই একটা অসাধারণ অনুভূতি তৈরি হবে। একে একে ইদলি, দোসাসহ নানা খাবারের স্বাদ নিতে থাকি আমরা। এই সব খাবার সম্পর্কে অল্প বিস্তারে আমাদের বলতে থাকেন সাইলা ভাবী। 

kolkata

বলে রাখি, এতক্ষণে আমাদের সবার মধ্যে বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে। খবারের সঙ্গে সোহাগ ভাইয়ের মজার গল্প সবার মন কেড়েছিল। এরপর রসগোল্লা খাবার ইচ্ছে পোষণ করলাম আমি। একজন বললেন কে.সি দাশের রসগোল্লা কলকাতার বিখ্যাত। এখানকার ভিন্ন স্বাদের রসগোল্লা সবার মন কাড়ল। 

>> আরও পড়ুন: জলকাণ্ডেশ্বর মন্দির: অপূর্ব শিল্পকর্মে পরিপূর্ণ প্রাচীন স্থাপনা

পরদিন সকালে আমি আর নাহিদ ভাই মেট্রোরেলে দক্ষিণেশ্বর যাই। মন্দিরের জন্য বিখ্যাত যায়গা এটি। পাশে হুগলি নদী। দূরদূরান্ত থেকে ভক্ত ও দর্শনার্থীরা এসেছেন। ১৮৫৫ সালে জমিদার রাণি রাসমণি এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর আমরা আসি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে।

kolkata

দুই দিনের কলকাতা ঘুরাঘুরি আমাদের নতুন জ্ঞানের সঞ্চার ঘটিয়েছে। তৈরি হয়েছে নতুন মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব। শহরের বাড়ি-ঘর দেখলে বোঝা যায় কতটা পুরাতন শহর এটি। সব ধরণের নাগরিক সুবিধা ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য নতুন মাত্রা যোগ করবে। তবে ইমিগ্রেশনের সমস্যা নিয়ে ভাবতে হবে। ভোগান্তি এড়িয়ে দ্রুত সময়ে ইমিগ্রেশন শেষ করার ব্যবস্থা সময়ের দাবি। 

লেখক: প্রাক্তন শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর