কলকাতা শব্দটি শুনলেই মনে পড়ে সেই কালজয়ী বিখ্যাত গান- ‘কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই, আজ আর নেই…’ চোখে ভেসে উঠে হলুদ ট্যাক্সি, ট্রামসহ আরও কত কী! ধর্মতলা থেকে কলেজস্ট্রিট, মারকুইজ স্ট্রিট থেকে হাওড়া ব্রিজ- সবখানেই তো ছড়িয়ে আছে শতবর্ষী সব স্থাপনা, শতবর্ষের ইতিহাস।
হুগলীর তীরে জব চার্নকের হাত ধরে গড়ে উঠা শত বছরের ঐতিহ্যপূর্ণ শহর কলকাতা। ভারতীয় উপমহাদেশের শত বছরের হাজারো ঘটনার সাক্ষী এই শহর যা পরিচিত সিটি অব জয় নামে। পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা ভ্রমণপিপাসুদের বাকেটে থাকে সবার শীর্ষে সে আর অজানা নয় কারো কাছেই। কী নেই এই কলকাতায়! রয়েছে শতবর্ষী দালান যা তৈরি অদ্ভুত এক শৈল্পিক ছোঁয়ায় ব্রিটিশদের হাত ধরে। ভারতের এই সাংস্কৃতিক রাজধানীতেই রয়েছে একাধিক দর্শনীয় স্থান।
বিজ্ঞাপন
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল: শ্বেতশুভ্র এই মার্বেল ভবন দাঁড়িয়ে আছে শত বছরের ঐতিহ্য নিয়ে যা রানী ভিক্টোরিয়ার স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত।
ফোর্ট উইলিয়াম: হুগলি নদীর পূর্বতীরে অবস্থিত একটি দুর্গ।
জেমস প্রিন্সেপ ঘাট: জেমস প্রিন্সেপের সম্মানার্থে নির্মিত।
বিজ্ঞাপন
হাওড়া ব্রিজ: শত ইতিহাসের সাক্ষী এই ব্রিজ দাঁড়িয়ে আছে হুগলী নদীর উপর। উনিশ শতকের সেতু প্রকৌশল ও প্রযুক্তির অন্যতম নিদর্শন এটি। নক্সা, উপকরণ ও বাস্তবায়নের অভিনবত্বের জন্য এটি এখনো দর্শনার্থীদের আগ্রহের শীর্ষে।
বেলুড় মঠ: অসাধারণ নির্মাণশৈলীর জন্য এই মন্দিরও দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে।
>> আরও পড়ুন: ইমিগ্রেশনের ভোগান্তি পেরিয়ে স্বস্তির বৃষ্টির দেখা
নাখোদা মসজিদ: বড় বাজারে অবস্থিত এই মসজিদই কলকাতার প্রধান মসজিদ। ১৯২৬ সালে নির্মিত এই মসজিদের নির্মাণশৈলীও অসাধারণ। আর এটি দেখতে অনেকটা জাহাজের মতো।
টিপু সুলতান মসজিদ: কলকাতার বিখ্যাত মসজিদের মধ্যে একটি এই টিপু সুলতান মসজিদ। ১৮৪২ সালে নির্মিত এই মসজিদের স্থাপনাশৈলি এখনও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে কলকাতার বুকে।
বিড়লা প্ল্যানেটরিয়াম: ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের পাশেই অবস্থিত একতালা একটি ভবন যেটি মূলত মহাকাশ সম্বন্ধীয় জ্ঞান আহরণের স্থান হিসেবে সুপরিচিত।
সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল: গতিক স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন এটি। ১৮৪৭ সালে নির্মাণকাজ শেষ হওয়া এই চার্চের অবস্থান ও ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের পাশে তথা বিরলা বা বিড়লা প্ল্যানেটরিয়ামের পাশেই।
ঢাকা টু কলকাতা ভ্রমণ গাইড
ঢাকা থেকে কলকাতা যেতে হলে শুরুতেই আপনাকে শেষ করতে হবে ভিসার সব কাজ। তারপর আপনি যেতে পারেন বিমানে বা বাসে বা ট্রেনে। তবে আপনাদের আমি শুনাব ট্রেনের গল্প। ভিসা হয়ে গেলে আপনি আপনার যাত্রার তারিখ ঠিক করে টিকিট কাটতে চলে যান কমলাপুর রেল স্টেশনে। একমাস আগে থেকে টিকেট বিক্রি শুরু হয়। আপনার ট্রেনের নাম হবে মৈত্রী এক্সপ্রেস। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেল স্টেশন থেকে আপনার বোর্ডিং শেষ করে এক ট্রেনেই আপনি পৌঁছে যাবেন কলকাতায়।
>> আরও পড়ুন: যেমন দেখলাম কলকাতার ট্রাফিক কন্ট্রোল ও মেট্রোরেল
সেখানের ফরমালিটিস শেষ করেই আপনি আপনার পছন্দের হোটেলে চলে যাবেন। তবে বাঙালিদের তথা বাংলাদেশিদের পছন্দের থাকার জায়গা বললেই নাম উঠে আসবে মারকুইস স্ট্রিট। সেখানে আপনি ৭০০ রূপি থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামের ও মানের হোটেল পাবেন।
এই স্থান বাংলাদেশিদের পছন্দের শীর্ষে থাকার প্রধান কারণ পাশেই নিউ মার্কেট, যা সহজ করে দেয় শপিং প্রিয় বাঙালির মন মতো কেনাকাটা করার। মোটামুটি সব ব্রান্ডের, নন ব্রান্ডের জিনিসপত্রই মিলে যাবে নিউ মার্কেট এরিয়াতে। সঙ্গে তো শ্রীলেদার আছেই।
ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় ট্যাক্সি ক্যাব। তবে মেট্রো ও ট্রামে চড়ার সুযোগ মিস করবেন না। আর সাশ্রয়ী উপায়ে ভ্রমণের উপায় বলতে গেলে উবার বাইক। যা আপনার সময় ও রূপি দুটোই বাঁচবে। কলকাতার রসগোল্লা, চা, সিঙ্গারা, পানি পুরি, মোগলাই, চীনা টাউনের চীনা খাবার বেশ বিখ্যাত।
ইতিহাসের শহর কলকাতার স্বাদ শুধুই কলকাতাতেই পাওয়া সম্ভব। যা নিতে হলে আপনাকে যেতে হবে হলুদ ট্যাক্সির এই শহরে। কলকাতা, সেই পুরনো কলকাতা আপনার অপেক্ষায় সর্বদা প্রস্তুত। তবে মনে রাখতে হবে সৌহাদ্যপূর্ণ মনোভাব বজায় রেখে পরিবেশের ক্ষতি না করে যেন সম্পূর্ণ ট্যুর শেষ করা যায়।
লেখক: সাবেক শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস
এনএম