শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

মানুষ কতক্ষণ পানিতে ডুবে থাকতে পারে?

নিশীতা মিতু
প্রকাশিত: ২৪ আগস্ট ২০২৫, ০১:২০ পিএম

শেয়ার করুন:

মানুষ কতক্ষণ পানিতে ডুবে থাকতে পারে?
পানিতে ডুবে যাওয়া বা ডুব দেওয়া নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই।

পানির কাছাকাছি গেলে মন ভালো হয়ে যায়। শান্ত জলধারা মনকেও শান্ত করে ফেলে। তবে এই পানিই কখনো কখনো হয়ে উঠে অশান্ত। কেড়ে নেয় প্রাণ। প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ পানিতে ডুবে প্রাণ হারান। এক্ষেত্রে শিশুর সংখ্যা বেশি। অনেকসময় দুর্ঘটনার কারণে পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়। আবার কখনো কখনো হত্যা কিংবা খুনের প্রমাণ লোপাট করতেও লাশকে পানিতে ফেলে দেওয়া হয়। 

পানিতে ডুবে যাওয়া বা ডুব দেওয়া নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। একজন মানুষ কতক্ষণ পানির নিচে থাকতে পারেন? কীভাবে তার মৃত্যু হয়? পানিতে ডুবে গেলে কেনই বা মানুষ মারা যায়? সব প্রশ্নের উত্তর জানুন এই প্রতিবেদনে- 


বিজ্ঞাপন


water1

একজন মানুষ পানির নিচে সর্বোচ্চ কতক্ষণ থাকতে পারবে তা নির্ভর করে তার শারীরিক অবস্থা, বয়স, অক্সিজেন গ্রহণের ক্ষমতা এবং প্রশিক্ষণের ওপর। সাধারণত একজন মানুষ ১ থেকে ৩ মিনিটের বেশি শ্বাস ধরে রাখতে পারে না। পানির নিচেও তাই মানুষ এর বেশি সময় থাকতে পারেন না। 

তবে উচ্চমাত্রায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডুবুরিরা ৮ মিনিটের বেশি সময় শ্বাস ধরে রাখতে পারেন। তবে, বেশি সময় ধরে শ্বাস আটকে রাখলে মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাব ঘটাতে পারে। ফলে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বা মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটতে পারে।  

water2


বিজ্ঞাপন


মানুষ পানিতে কতক্ষণ ডুব দিয়ে থাকতে পারে?

একজন ব্যক্তি নিরাপদে কতক্ষণ পানির নিচে থাকতে পারবেন তা অনেক বিষয়ের উপর নির্ভর করে। শক্তি খরচ, পূর্বে শ্বাস নেওয়ার সংখ্যা, শারীরিক অবস্থা, বয়সের মতো বিষয়গুলো এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একজন মানুষ পানির নিচে এক থেকে তিন মিনিট থাকার পর অজ্ঞান এবং ১০ মিনিটের বেশি সময় পর মারা যেতে পারেন। 

বিনা অক্সিজেনে পানির নিচে ১৩ মিনিট পর্যন্ত থাকতে পারেন যারা 

পৃথিবীতে এমন অনেককিছুই ঘটে যা স্বাভাবিকের চেয়ে একদম ভিন্ন। এই যেমন সাধারণ মানুষ ১০ মিনিটের বেশি পানির নিচে থাকলেই মারা যায়। কিন্তু এমন এক জনগোষ্ঠী রয়েছে যারা অক্সিজেন ছাড়াই আরামসে পানির নিচে ১৩ মিনিট থাকতে পারে। 

water3

বিশেষ এই জনগোষ্ঠীর নাম বাজাউ। বলা হয়, বাজাউ শিশুরা নাকি হাঁটতে শেখার আগেই ভাসতে শেখে। সাঁতার কাঁটা, পানিতে ভেসে থাকে, সমুদ্রের গভীরে অনেকটা সময় ডুবে থাকা—এগুলো ছোটবেলা থেকেই শেখে এই জনগোষ্ঠীর শিশুরা। 

ইন্দোনেশীয় দ্বীপপুঞ্জে বসবাস করা এই জনগোষ্ঠীর জীবন জলকেন্দ্রিক। সাধারণ মানুষ যেখানে ৪০-৫০ সেকেন্ডের বেশি সময় পানির নিচে থাকতে পারে না সেখানে বাজাউ লাউতরা ১৩ মিনিট পর্যন্ত পানির নিচে থাকতে পারে। ২০০ ফুট গভীর পানিতে থাকতে পারে দীর্ঘসময়। এজন্য এই সম্প্রদায়ের বহু মানুষ স্কুবা-ডাইভার হিসেবেও কাজ করেন। এটিই তাদের মূল পেশা।

water4

পানির নিচে মানুষ কতক্ষণ থাকতে পারে?

পানির নিচে অর্থাৎ ডুব দিলে শ্বাস আটকে থাকতে হয়। তাই সাধারণত মিনিট খানেক একজন মানুষ পানির নিচে থাকতে পারে। শ্বাস বেশি সময় ধরে রাখার অভ্যাস থাকলে ২ মিনিটও থাকতে পারেন। এরপর অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন। মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাবের কারণে এমনটা হয়। পানির নিচে অক্সিজেন থাকে না। ফলে মস্তিষ্কের ক্ষতি বা মৃত্যু ঘটাতে পারে। 

অক্সিজেন ছাড়া মানুষ কতক্ষণ বাঁচতে পারে?

মানুষ সাধারণত অক্সিজেন ছাড়া কয়েক মিনিটের বেশি বাঁচতে পারেন না। মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই স্থায়ী ক্ষতি শুরু হতে পারে। ৪ থেকে ৬ মিনিটের মধ্যে মৃত্যুও হতে পারে। 

water5

বিস্তারিতভাবে বলা যায়, অক্সিজেন ছাড়া মানুষের মস্তিষ্ক দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। মাত্র ১০-৩০ সেকেন্ডের মধ্যে মস্তিষ্কের কোষগুলো অকেজো হতে শুরু করে। ১ মিনিটের মধ্যে, মস্তিষ্কের কোষগুলো ব্যাপক ক্ষতির শিকার হতে পারে। 

৩ মিনিটের মধ্যে মস্তিষ্কের নিউরনে আরও গুরুতর ক্ষতি হতে পারে এবং দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ৫ মিনিটের মধ্যে অক্সিজেন ছাড়া থাকার কারণে মানুষের মৃত্যু হতে পারে। 

water6

কিছু ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে, মানুষ অক্সিজেন ছাড়া আরও বেশি সময় বাঁচতে পারে। যদিও এটি খুবই বিরল এবং বিশেষ পরিস্থিতিতে ঘটে। যেমন, স্কুবা ডাইভাররা বিশেষ শ্বাস-প্রশ্বাস কৌশল ব্যবহার করে কিছু সময়ের জন্য পানির নিচে থাকতে পারে। কিন্তু এটি সাধারণ মানুষের জন্য প্রযোজ্য নয়।

আরও পড়ুন- 
 
 
 

ডুবে যাওয়ার সময় কী ঘটে?

পানির নিচে দীর্ঘক্ষণ থাকার ফলে মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়। ফলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। মস্তিষ্কে অক্সিজেনের সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই কোষগুলো মারা যেতে শুরু করে।

water7

এসময় খিঁচুনির মতো হতে থাকে। অক্সিজেনের অভাবে ব্যক্তির শরীর নীল হয়ে যায় এবং অনিয়মিতভাবে ঝাঁকুনি দিতে পারে। এরপর মস্তিষ্ক, হৃদপিণ্ড ও ফুসফুস এমন একটি অবস্থায় পৌঁছে যায় যেখানে তাদের পুনরুজ্জীবিত করা যায় না। ডুবে যাওয়ার এই চূড়ান্ত পর্যায়ের নাম সেরিব্রাল হাইপোক্সিয়া। এরপর ক্লিনিক্যাল মৃত্যু হয়। মানে ব্যক্তির মৃত্যু হয়। 

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর