মানুষের মনোজগতে ইগো শব্দটি অনেক পরিচিত হলেও, এর প্রকৃত অর্থ ও প্রভাব অনেকেই পুরোপুরি বোঝেন না। কখনও এটিকে অহংকারের প্রতীক ধরা হয়, আবার কখনও আত্মমর্যাদার অবিচ্ছেদ্য অংশ। ইগো থাকা কি খারাপ? না কি এর প্রয়োজনীয়তা আছে? জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে—সম্পর্ক, ক্যারিয়ার কিংবা আত্মউন্নয়নে ইগোর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
ইড, ইগো ও সুপার-ইগো: মানসিকতার তিন স্তম্ভ
বিশ্ববিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েড মানুষের মনের কাঠামোকে তিনটি ভাগে ভাগ করেন:
ইড (Id): প্রবৃত্তির উপর নির্ভরশীল। ক্ষুধা, কামনা, রাগ, স্বার্থপরতা—এসব এর চালিকাশক্তি।
ইগো (Ego): বাস্তবতা অনুযায়ী আচরণ করতে শেখায়। ইড-এর চাহিদা ও সুপার-ইগোর আদর্শের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে।
সুপার-ইগো (Superego): নৈতিকতা ও আদর্শের প্রতিনিধিত্ব করে। ভালো-মন্দ বোধ এখানে কাজ করে।
বিজ্ঞাপন

ইগো কী?
ইগো হচ্ছে আমাদের সেই মানসিক অংশ, যা আমাদের নিজস্বতা ও আত্মপরিচয়ের অনুভূতি দেয়। এটি আমাদের চিন্তা-ভাবনার ভারসাম্য বজায় রাখে এবং বাস্তবতার সঙ্গে আমাদের আচরণকে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে।
উদাহরণ
কেউ যদি আপনাকে অপমান করে, ইড চায় আপনি তাকে গালাগাল করেন, সুপার-ইগো বলে চুপ থাকো—এটা ভদ্রতা নয়, আর ইগো আপনাকে বুঝিয়ে বলে কোনটি করলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে।
ইগো থাকা কি খারাপ?
ভালো দিক:
ইগো আপনাকে আত্মসম্মান রক্ষা করতে শেখায়
নিজের সীমা নির্ধারণ করে দেয়
সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বাস্তবতার ভিত্তিতে চিন্তা করতে সাহায্য করে
পেশাগত জীবনে দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাস বাড়ায়

খারাপ দিক:
অতিরিক্ত ইগো আপনাকে আত্মকেন্দ্রিক করে তোলে
সম্পর্ক নষ্ট করতে পারে
ক্ষমা করতে না শেখালে মানসিক চাপ বাড়ে
সবসময় নিজেকে সঠিক ভাবা অভ্যাসে পরিণত হয়
ইগো ও সম্পর্ক: ভারসাম্যের খেলা
একটি সম্পর্ক তখনই সুস্থ থাকে, যখন উভয় পক্ষ ইগোর দৃষ্টিভঙ্গি বাদ দিয়ে একে অপরকে বুঝতে চায়। “আমি কেন আগে ফোন করব?”, “সে ভুল করেছে, আমি ক্ষমা চাইব না”—এই ধরনের মনোভাব সম্পর্ককে ধ্বংস করতে পারে।
ইগো কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন?
আত্মপর্যালোচনা করুন: আমি কি অহংকারী হয়ে যাচ্ছি?
ক্ষমা শেখার অভ্যাস করুন: ক্ষমা মানেই দুর্বলতা নয়, এটা মানসিক পরিপক্বতা।
ধৈর্য ধরুন: তর্ক নয়, যুক্তি দিয়ে নিজের অবস্থান বুঝিয়ে বলুন।
আরও পড়ুন: মস্তিষ্ক কি খারাপ স্মৃতি নিজে থেকেই মুছে ফেলে?
কৃতজ্ঞ থাকুন: কৃতজ্ঞতা মানুষকে নম্র করে তোলে।
পরামর্শ নিন: প্রয়োজনে কাউন্সেলিং নিন।
ইগো একান্তই খারাপ নয়, আবার পুরোপুরি ভালোও নয়। এটি আমাদের আত্মপরিচয়ের অংশ, তবে মাত্রার অতিরিক্ত হলে তা ব্যক্তি ও সমাজ—দুইয়ের জন্যই ক্ষতিকর। সঠিকভাবে ইগো নিয়ন্ত্রণ শিখলে জীবন হয় শান্ত, সম্পর্ক হয় দৃঢ়, আর মন হয় প্রশান্ত।
এজেড

